সড়ক দুর্ঘটনাসহ সংশ্লিষ্ট অপরাধ জামিনযোগ্য করা ও জরিমানা কমানোর দাবিতে সড়ক পরিবহন শ্রমিকরা ধর্মঘট শুরু করলেও সরকার অনড়। শ্রমিকদের এমন চাপের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তিন মন্ত্রী। তাঁরা বলেছেন, নৈরাজ্য শক্ত হাতে দমন করা হবে।
সরকারের সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, এই সরকারের সময়ে এই আইনের কোনো ধারার সংশোধনের পর্যাপ্ত সময় নেই। নির্বাচনের পর গঠিত পরবর্তী সরকার এই আইনের সংশোধন করতে পারে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আইন আরো কঠোর করা উচিত। সড়ক দুর্ঘটনায় অপরাধ জামিন অযোগ্যই রাখতে হবে। মূলত জাতীয় নির্বাচনের আগে ভোটে প্রভাব পড়বে ভয় দেখিয়ে ও অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের চাপ দিয়ে নতুন সড়ক পরিবহন আইনে অপরাধী চালকদের শাস্তি ও জরিমানা কমানোর কৌশল নিয়েছেন পরিবহন শ্রমিক নেতারা।
জাতীয় সংসদের গত অধিবেশনে গত ১৯ সেপ্টেম্বর পাস হয় সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮। এই আইনে অপরাধ অজামিনযোগ্য হওয়ায় পরিবহন শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ। আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছরের জেল রাখা হয়েছে। গত শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শ্রমিক সমাবেশে শ্রমিকরা স্লোগান দেয়— ফাঁসির দড়ি মাথায় নিয়ে গাড়ি চালাব না।
দশম জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশন আজ সোমবার শেষ হওয়ার কথা। পরবর্তী অধিবেশন বসবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর।
সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮-এর কয়েকটি ধারা সংশোধনসহ আট দাবিতে পরিবহন শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠনের শীর্ষ ফোরাম বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকে গতকাল রবিবার সকাল ৬টা থেকে ৪৯ ঘণ্টার ধর্মঘট শুরু হয়েছে।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘পরিবহন শ্রমিকদের দাবি অনুযায়ী এই মুহূর্তে সড়ক পরিবহন আইন সংশোধন করা সম্ভব না। পরিবহন শ্রমিকদের পরবর্তী সংসদ অধিবেশন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’
রাজধানীর সেতু ভবনে সাংবাদিকদের তিনি সরকারের অবস্থান তুলে ধরে বলেন, ‘আমাদের হাতে সময় নেই। পরবর্তী সংসদ অধিবেশন পর্যন্ত পরিবহন শ্রমিকদের অপেক্ষা করতে হবে। ন্যায়সংগত বিষয় থাকলে তখন আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আইন সংশোধনের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমি শ্রমিকদের বলতে চাই, এখনই ধর্মঘট প্রত্যাহার করুন। মানুষকে কষ্ট দিয়ে কোনো লাভ নেই।’
এর আগে গত মঙ্গলবার সড়কমন্ত্রী নিজ মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই কিন্তু এ আইনটা হয়েছে। তিন বছর ধরে এ আইন নিয়ে অনেক আলাপ-আলোচনা, ওয়েবসাইটে দেওয়া সব কিছুই হয়েছে। তার পরও তাদের বলা হয়েছে, আন্দোলন থেকে বিরত থাকতে। পরবর্তী সরকার এলে যদি কোনো বিষয় সংশোধনীর প্রয়োজন হয়, তখন দেখা যাবে। তিনি আরো বলেছিলেন, ‘পরবর্তী সরকার আমরাও থাকতে পারি, অন্য কেউ আসতে পারে। তখনকার ব্যাপার তখন দেখা যাবে। এ মুহূর্তে বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের কিছু করতে যাব না। তাদের (সড়ক পরিবহন শ্রমিক) দাবি তারা করতে পারে।
ধর্মঘটের নামে নৈরাজ্য শক্ত হাতে দমন করা হবে : মুহিত
ধর্মঘটের নামে পরিবহন শ্রমিকরা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে তা সহ্য করা হবে না বলে হুঁশিয়ার করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। তিনি বলেন, ‘যেকোনো ধরনের নৈরাজ্য শক্ত হাতে দমন করা হবে।’ গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে সাধারণ বীমা করপোরেশনের ২০১৭ সালের লভ্যাংশ বাবদ ৪০ কোটি টাকার চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
নতুন আইন সড়কে দুর্ঘটনা কমানোর সহায়ক হবে : আইনমন্ত্রী
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, পরিবহন শ্রমিকরা বোধ হয় আইনটা সঠিকভাবে না বুঝেই ধর্মঘট করছে। কারণ এই আইনে এমন কোনো শর্ত বা প্রভিশন নাই যে অন্যায় না করা সত্ত্বেও চালকদের ভোগান্তিতে পড়তে হবে। নতুন সড়ক পরিবহন আইন সড়কে দুর্ঘটনা কমানোর জন্য যেমন সহায়ক হবে, তেমনি সঠিকভাবে বাস চালালে তা চালকদের জন্যও সহায়ক হবে।
গতকাল ঢাকায় বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে সদ্য যোগদানকৃত বিচারকদের জন্য আয়োজিত দ্বিতীয় ওরিয়েন্টেশন কোর্সের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় মন্ত্রী পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। (কালের কন্ঠ)