‘স্যার বাবা-মায়ের অমতে ঘর থেকে পালিয়ে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম নাছিরকে। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। যদি আগে জানতাম সে একজন চোর, তাহলে এ ভুল করতাম না।’
এভাবেই চট্টগ্রাম সিআইডি কার্যালয়ে আটক হওয়ার পর কথাগুলো বলছিলেন রোখসানা আক্তার (২৫)। গত মঙ্গলবার গভীর রাতে নগরীর পূর্ব বাকলিয়া এলাকার
আশরাফিয়া হাউজিং সোসাইটির তার বাসা থেকে বিপুল অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ।
মূলত রোখসানার স্বামী মোটরসাইকেল চোর নাছিরকে ধরতেই ওই বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। কিন্তু তাকে না পেয়ে পরে ঘরের স্টিলের আলমারিতে সাজানো অবস্থায় অস্ত্র দেখতে পেয়ে রোখসানাকে আটক করে। এ সময় থানা হাজতে আসামি নাছিরকে বিয়ে করে ফেঁসে যাওয়ার বর্ণনা দেন তিনি।
বলেন, প্রতারক নাছির একজন ভণ্ড। কিন্তু তাকে বিয়ে করার ফলে সামাজিক চক্ষুলজ্জায় আর বাড়ি ফিরে যেতে পারেননি। বিয়ের পরপরই নাছিরের এসব অপকর্ম এক এক করে জানতে পারেন রোখসানা। অনেক সময় কেঁদে চোখের জল ফেলেছেন।
থানা হাজতে তিনি জানিয়েছেন, মেয়েদের বিয়ে একবারই হয়।
কিভাবে প্রতারক নাছিরের খপ্পরে পড়লেন- গতকাল তাকে এমন প্রশ্ন করতেই চোখের জল ফেলতে ফেলতে রোখসানা বলেন, বিয়ের আগে তার ছলনাময় কথায় পাগল হয়েছিলাম। কিন্তু কখনো বুঝতে পারিনি সে আসলে ভণ্ড। পড়ালেখা জানে না। পরে জানতে পারি সে মানুষের মোটরসাইকেল চুরি করে। অস্ত্রের ব্যবসা করে।
তিনি বলেন, পরিবারের অমতে বিয়ে করে ফেঁসে গেছি স্যার। কি করবো। ভাত তো খেতে হবে। অনেকবার প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু সে চড় থাপ্পড় মারতো। নাছিরের বাড়ি আনোয়ারা উপজেলার বারশত ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামে। আমার নগরীর হালিশহর এলাকায়। সাত বছর আগে পালিয়ে বিয়ে করি।
রোখসানা বলেন, নাছির আমার মন ভেঙেছে। সে আগেও একটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক করেছে। তার সঙ্গে বিয়ে হয়েছে। ওই ঘরে দুটি সন্তান আছে। আমার কোলে এক সন্তান। সবাইকে আমি দেখাশোনা করি। অনেকবার বলেছি ভালো হয়ে যাও। সে ভালো হয়নি। রাত হলেই চুরি করে।
রোখসানা বলেন, আমার স্বামী অনেক কৌশলী। আমরা যে বাড়িতে থাকতাম সেখানে কারা আসে সে সব দেখতে পেতো। বাসায় চারটি সিসি ক্যামেরা আছে। আছে কন্ট্রোলার ও সিসিটিভি মনিটর। কন্ট্রোলারের সঙ্গে সংযোগ আছে তার মোবাইলের। বাসায় কে আসছে সব জানা যায়।
নগর গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, অভিযানের সময় বাসায় ঢুকতে দিতে চাইছিলো না রোখসানা। পরে প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় আলমারি খোলা হয়। সেখান থেকে পাওয়া যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি একটি ৭ দশমিক ৬৫ বোরের পিস্তল, সাত রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগজিন, একটি কিরিচ ও চারটি ছোরা, একটি কাটার, হাতুড়ি, প্লাস, তিনটি রেঞ্জ এবং একটি সিসিটিভি কন্ট্রোলার।
এ বিষয়ে সিআইডির চট্টগ্রাম জোনের এস আই জাহাঙ্গীর আনাম বলেন, নাছির একজন প্রতারক। সে গত ১৯শে আগস্ট খুলশী আবাসিক এলাকার নাহার বিল্ডিংয়ের সামনে থেকে দুটি মোটরসাইকেল চুরি করে। পরে ভিডিও ফুটেজ দেখে তাকে আমরা শনাক্ত করি। এরপর খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সে ভয়ঙ্কর মোটরসাইকেল চোর।
তিনি আরো বলেন, এর আগে কর্ণফুলী সেতু এলাকায় একজনের পায়ে গুলি করে তার মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায় এই নাছির। তাকে আমরা অনেক দিন থেকে খুঁজছি। সে আশরাফিয়া হাউজিং সোসাইটির পাঁচতলা একটি ভবনের নিচতলায় থাকতো। তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। (মানবজমিন)
নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৫:০০ পিএম, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬, বৃহস্পতিবার
ডিএইচ