করোনা মহামারীর শুরুর পর থেকে হাতের জীবাণু ধ্বংস করতে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার অনেকাংশে বেড়ে গেছে। অ্যালকোহল বেসড হ্যান্ড স্যানিটাইজার করোনাভাইরাস ধ্বংস করে বলে এর জনপ্রিয়তাও আকাশচুম্বী।
এই তরল পদার্থ ভালোর জন্য ব্যবহার করা হলেও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে অথবা ঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই হাতের জীবাণু ধ্বংসে হ্যান্ড স্যানিটাইজারে সাবধানতা অবলম্বান জরুরি।
একজিমার ঝুঁকি বাড়ায়: হ্যান্ড স্যানিটাইজারের অতি ব্যবহারে হ্যান্ড ডার্মাটাইটিস বা একজিমার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এটি ব্যবহারে একজিমার উপসর্গ হিসেবে ত্বক লাল হতে পারে, শুকিয়ে যেতে পারে, ফেটে যেতে পারে ও এমনকি ফোসকা ওঠতে পারে যা চুলকানি বা ব্যথার কারণ হবে।
হাতের একজিমা প্রতিরোধে মিনারেল অয়েল বা পেট্রোলিয়াম সমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন। হাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ঢেলে ১৫-৩০ সেকেন্ড ঘষে শুকিয়ে আসলে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে, বলেন ডা. নেলসন।
ত্বককে উক্ত্যক্ত করে: ফ্রিল্যান্স ফর্মুলেশনসের প্রতিষ্ঠাতা ও কসমেটিক কেমিস্ট ভেনেসা থমাস বলেন, ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজার হলো অ্যান্টিসেপ্টিক প্রোডাক্ট, যা ত্বককে জীবাণুমুক্ত করতে ফর্মুলেট করা হয়। হ্যান্ড স্যানিটাইজারের প্রধান জীবাণু ধ্বংসকারী উপাদান হলো ইথাইল অথবা আইসোপ্রপাইল অ্যালকোহল। অ্যালকোহলের কড়া গন্ধ দূর করতে অন্যান্য উপকরণও ব্যবহার করা হয়। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ঘনঘন ব্যবহার করলে ত্বক উক্ত্যক্ত হতে পারে অথবা শুকিয়ে যেতে পারে। আপনার ত্বক সংবেদনশীল হলে এ প্রতিক্রিয়া খুব খারাপ হতে পারে। অ্যালকোহলের কারণে ত্বক শুষ্ক হয়।’ এ সমস্যা এড়াতেও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন।
বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়ায়: ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির ক্লিনিক্যাল অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ক্রিস নরিস বলেন, ‘কিছু হ্যান্ড স্যানিটাইজারে ইথাইল অ্যালকোহল অথবা আইসোপ্রপাইল অ্যালকোহল থাকে। কিন্তু নন-অ্যালকোহল বেসড কিছু হ্যান্ড স্যানিটাইজারে ট্রাইক্লোসান বা ট্রাইক্লোকার্বান নামক অ্যান্টিবায়োটিক কম্পাউন্ড থাকে। কিছু গবেষণাতে ট্রাইক্লোসানের স্বাস্থ্য ঝুঁকি পাওয়া গেছে। এটির অতি ব্যবহারে উর্বরতা, ভ্রুণের বিকাশ ও হাঁপানির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।’ তাই বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি এড়াতে ট্রাইক্লোসান বা ট্রাইক্লোকার্বান রয়েছে এমন হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করবেন না। নিশ্চিত হোন যে অ্যালকোহল বেসড হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনছেন।
অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি রেজিস্ট্যান্স তৈরি করে: ডা. নরিস বলেন, ‘ট্রাইক্লোসান সমৃদ্ধ হ্যান্ড স্যানিটাইজার বেশি ব্যবহার করলে ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি রেজিস্ট্যান্ট হয়ে পড়ে, অর্থাৎ অ্যান্টিবায়োটিক সেবনেও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ওপর প্রভাব পড়ে না।’ এছাড়া হ্যান্ড স্যানিটাইজারে অ্যালকোহল না থাকলে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়ে।
ইমিউন সিস্টেমকে দুর্বল করে: গবেষণায় দেখা গেছে, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ট্রাইক্লোসান ইমিউন সিস্টেমেরও ক্ষতি করতে পারে। কিন্তু রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকতে শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেম গুরুত্বপূর্ণ। ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান স্কুল অব পাবলিক হেলথের গবেষকদের মতে, ট্রাইক্লোসান ইমিউন ফাংশনের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। ইমিউন সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হলে অ্যালার্জির প্রবণতা বেড়ে যায়, বলেন ডা. নরিস।
শারীরিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে: যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার থেকে বেশি সুবাস ছড়ায় সেখানে থালেট ও পারাবেনের মতো বিষাক্ত কেমিক্যাল বেশি থাকে। থালেট এন্ডোক্রাইন কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটায়, যা শারীরিক বিকাশ ও প্রজননের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। পারাবেনও হরমোন কার্যক্রম, উর্বরতা ও প্রজননকে প্রভাবিত করতে পারে।
সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়: করোনাভাইরাসের মতো রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু থেকে সুরক্ষায় অ্যালকোহল-বেসড হ্যান্ড স্যানিটাইজারের অতি ব্যবহারে একজিমা ও অন্যান্য চর্মরোগ হতে পারে। ডা. নরিসের মতে, চর্মরোগে সংক্রমণের ঝুঁকিও বেড়ে যেতে পারে। কারণ কিছু চর্মরোগে ত্বকের মধ্য দিয়ে শরীরে সহজে জীবাণু প্রবেশ করতে পারে। এছাড়া হ্যান্ড স্যানিটাইজার অতিরিক্ত ব্যবহার করলে ত্বকের কিছু নিরীহ ব্যাকটেরিয়াও দূর হয়ে যায়, এসব ব্যাকটেরিয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
বার্তাকক্ষ,২৮ নভেম্বর,২০২০;