বয়স হলে স্মৃতিশক্তি কমবে, তা নিয়ে বলার কিছু নেই৷ দুঃখ হলেও তার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়৷ কিন্তু কম বয়সে, মোটামুটি ফিট হওয়া সত্ত্বেও যদি স্মৃতি বিশ্বাসঘাতকতা করে, সব কাজে ভুল হতে থাকে, তা কি মানা যায়?
‘মানা যায় না ঠিকই, কিন্তু ঘটনা হল, এই সমস্যা কিছুটা ডেকে আনি আমরাই৷’ জানালেন স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ অনুপম দাশগুপ্ত৷ তাঁর মতে, প্রযুক্তির কল্যাণে আজ আর অনেক কিছুই মনে রাখতে হয় না৷ ফোন নম্বর জমা থাকে স্মার্ট ফোনের অন্দরে, বোতাম টিপলে সে এসে হাজির হয়৷ মনে রাখতে হয় না জন্মদিন, বিবাহ বার্ষিকী বা মিটিংয়ের তারিখ, মোবাইলে অ্যালার্ম সেট করে দিলেই ঝামেলা শেষ৷ রাস্তাঘাট চেনার সমস্যা থেকেও মুক্তি দিয়েছে নানা অ্যাপ।
মনে রাখার কোষেদের গায়ে তাই মরচে পড়ছে৷ সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আমাদের কিছু অভ্যাস ও বদভ্যাস৷ যেমন, সঠিক খাবার না খাওয়া, শুয়ে–বসে থাকা, একসঙ্গে একাধিক কাজ করা৷ যুক্ত হয়েছে মদ্যপ হয়ে ওঠার ‘আনন্দ’, সপ্তাহান্তের বাধ্যতামূলক ‘লেট নাইট’, কম ঘুমিয়ে বেশি কাজ করার ছটফটানি ও প্রবল মানসিক চাপ৷ স্মৃতিশক্তি কমাতে যাদের বেশ ভাল ভূমিকা আছে৷ কাজেই বিপদ কমাতে চাইলে এ সব দিকে কিছুটা অন্তত নজর দেওয়া প্রয়োজন।
তার পাশাপাশি কিছু বিশেষ খাবার খেতে শুরু করুন, স্মৃতিবর্ধক হিসাবে যাদের বেশ সুনাম আছে৷
স্মৃতি বাড়ানোর খাবার
‘নিউরোসায়েন্স’-এ প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন, যে সমস্ত স্থূলাকৃতি মানুষ ছ’–মাস ধরে নিয়মিত রেসভারেট্রল সাপ্লিমেন্ট খেয়েছেন, তাঁদের মনে রাখার ক্ষমতা বেশ খানিকটা বেড়েছে৷ আর যাঁরা তা খাননি তাঁরা যে তিমিরে ছিলেন, সেই তিমিরেই রয়ে গিয়েছেন৷
রেড ওয়াইন ও ডার্ক চকোলেটে প্রচুর রেসভারেট্রল থাকে৷ এর আসল কাজ বয়স ধরে রাখা৷ তার পাশাপাশি মনে রাখার ক্ষমতা বাড়াতেও যে তার জুড়ি নেই, তা জানা গেল সাম্প্রতিক এই গবেষণায়।
ডিএইচএ নামের ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড খেলেও স্মৃতিশক্তি বাড়ে বলে জানা গিয়েছে। তৈলাক্ত মাছে এটি আছে প্রচুর পরিমাণে৷
ফল, শাক-সব্জির অ্যান্টি অক্সিডেন্টও কম নয়৷ বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, বয়স হলে মস্তিষ্কের তথ্য সামলানোর ক্ষমতা কমতে থাকে। তার ভুলে যাওয়ার গতি কমাতে ও স্মৃতি বাড়াতে এই সব প্রাকৃতিক খাদ্য খুবই কার্যকর৷ কাজে আসে গ্রিন টি–র অ্যান্টি অক্সিডেন্টও৷
তা হলে কী করণীয়
সারা দিনে বার দুই–তিন দুধ–চিনি ছাড়া গ্রিন টি খান৷ তবে অম্বলের ধাত থাকলে খালি পেটে খাবেন না৷
দিনে দু’–তিন রকম টাটকা মরসুমি ফল খান৷ ওজন ও সুগার বেশি হলে খাবেন কম মিষ্টি ফল৷ খাদ্যতালিকায় সব্জি রাখুন পর্যাপ্ত৷ শাক–সব্জি, ফল কাটার আগে ভাল করে ধুয়ে ও কিছু ক্ষণ জলে ভিজিয়ে রেখে তবে খাবেন৷ কীটনাশকের বিষ দূর করতে চাইলে ‘ভেজি ওয়াশ’ ব্যবহার করতে পারেন৷ কারণ জৈব সারে পুষ্ট জিনিসপত্রের দাম আকাশ–ছোঁয়া৷
দু’–চারটে করে আমন্ড, আখরোট, কিসমিস খান রোজ৷ বেশি খেলে কিন্তু ওজন বাড়বে৷ পেটেরও গোলমাল হতে পারে৷
দুপুরে খান ঘরে বানানো ভাত বা রুটি, সঙ্গে ডাল, মাছ, তরিতরকারি। রাতেও তাই৷ মাঝে মাঝে তৈলাক্ত ও সামুদ্রিক মাছ খাবেন৷ জাঙ্ক ফুড, ফাস্ট ফুড যত কম খাবেন, তত ভাল৷
সপ্তাহে ৩–৪ দিন এক–আধ গ্লাস রেড ওয়াইন খেতে পারেন৷ তবে একেবারেই তার বেশি নয়৷ অভ্যাস না থাকলে নতুন করে শুরু করার একেবারেই দরকার নেই৷
দু’–এক টুকরো ডার্ক চকোলেট খেতে পারলে খুব ভাল৷ তবে মাত্রা ছাড়ালে ওজন বাড়বে৷ সুগার থাকলে না খাওয়াই ভাল৷
ডাক্তারের পরামর্শ মতো রেসভারেট্রল সাপ্লিমেন্ট খেতে পারেন৷
একসঙ্গে একাধিক কাজ আজকের দিনে প্রত্যেককে করতে হয়৷ কাজেই ভাল করে টাইম ম্যানেজ করার চেষ্টা করুন৷ বিপদ কিছুটা কমবে৷
টেনশন বাড়লে স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট করুন যে কোনও মূল্যে৷ প্রয়োজনে মনোবিদের সাহায্য নিন৷
ডিপ ব্রিদিং, যোগা ও মেডিটেশন করুন নিয়মিত৷ মন শান্ত থাকলে ভোলার মাত্রা কমবে৷
সকালে বা বিকেলে খোলা জায়গায় একটু জোরে জোরে হাঁটুন, সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন৷ সাঁতার, জগিং বা জিমও করতে পারেন৷ নিয়মিত ঘাম ঝরানো ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কের কোষেরা বেশি দিন তরতাজা থাকে৷
ব্যায়াম ও কাজের খাতিরে ঘুমকে নির্বাসনে পাঠাবেন না৷ সব কিছু ভুলতে থাকার বড় কারণ কিন্তু কম ঘুমোনো৷