বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে ২০২৩ সালের নতুন শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে স্মার্ট শিক্ষা শুরু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এই স্মার্ট শিক্ষা দেশের সরকার, অর্থনীতি ও সমাজকে স্মার্ট করে তুলবে বলেও জানান তিনি।
বছরের প্রথম দিন রবিবার (১ জানুয়ারি) গাজীপুরের কাপাসিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মাধ্যমিক পর্যায়ের কেন্দ্রীয় বই উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা জানান।
অপরদিকে, কেন্দ্রীয়ভাবে প্রাথমিকের বই উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে।
মাধ্যমিক পর্যায়ের বই উৎসব অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘পিতা মুজিব বলেছিলেন, ‘কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবা না’, বঙ্গবন্ধুকন্যা সে রকম করেই কেউ যেন বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখতে না পারে, তার জন্য আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরি করে দিয়েছেন। এখন স্বপ্ন দেখিয়েছেন স্মার্ট বাংলাদেশের। সেই বাংলাদেশের নাগরিক হবে স্মার্ট, সরকার হবে স্মার্ট, অর্থনীতি হবে স্মার্ট অর্থনীতি ও সমাজ হবে স্মার্ট সমাজ। আর এগুলো গড়বার জন্য যা দরকার তা হচ্ছে শিক্ষা। সেই শিক্ষা বঙ্গবন্ধুকন্যার সার্বিক দিক নির্দেশনায় নতুন শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে আমরা সেদিকেই এগুচ্ছি।”
দীপু মনি বলেন, ‘আজ ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা— তোমরা যে বইগুলো পেলে সেগুলো আমাদের নতুন শিক্ষাক্রমের। নতুন শিক্ষাক্রম আমরা তৈরি করেছি শিক্ষক, শিক্ষার্থী অভিভাবক, শিক্ষাবিদ, বিশেষজ্ঞ, সবার পরামর্শ ও অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে। এমন শিক্ষাক্রম তৈরি করেছি— যেখানে শিক্ষা হবে আনন্দময়। পরীক্ষা থাকবে, তবে ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা করে শিখবে, সক্রিয় শিখন হবে, অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন হবে। শিক্ষার্থী যা শিখবে তা প্রয়োগ করতে শিখবে। কেমন করে শিখতে হয় তাও শিখবে। পরীক্ষা ভীতি থাকবে না। মুখস্ত বিদ্যার বালাই থাকবে না।’
বই উৎসব অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মা, মাতৃভূমি ও মাতৃভাষা— এই তিন মাকে ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি করিয়ে নেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এ সময় তিনি বলেন, “ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছিলেন, একজন মানুষের তিন জন মা। তার নিজের মা, তার মাতৃভাষা এবং মাতৃভূমি। এই তিন মাকেই ভালোবাসতে হবে।’
শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি শিক্ষকদের বলবো, নতুন শিক্ষাক্রমে আপনাদের মূল দায়িত্ব হবে— শুধু পড়িয়ে যাওয়া নয়, শিক্ষকের ভূমিকা হবে পথপ্রদর্শকের ভূমিকায় নামা। শিক্ষার্থীদের সহায়ক শক্তি হিসেবে দাঁড়ানো, তাদের তত্ত্বাবধান করা। শিক্ষার্থীরা যেন ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে বড় হয়।’
অভিভাবক ও শিক্ষককদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বার বার সন্তানদের না বলতে বলতে তাদের মনের মধ্যে নেতিবাচকতা ঢুকিয়ে দেই। আসুন, আমরা সন্তানদের ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে গড়বার সুযোগ করে দেই, যাতে তারা ভালো মানুষ হয়ে উঠতে পারে। শুধু তাদের ভালো ফলাফলের দিকে নজর দেবেন তা নয়, তারা যেন সুস্থ থাকে এবং ভালো মানুষ হয়, সে বিষয়ে শিক্ষকরাও নজর দেবেন বলে আমরা আশা করি।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘আমরা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেরাই গড়বো। বই পাচ্ছি, কম্পিউটার পাচ্ছি, বিদ্যালয়ের ভবন পাচ্ছি, যার কারণে পাচ্ছি তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। যিনি বাংলাদেশের প্রত্যেক শিশুকে মায়ের দৃষ্টিতে সবাইকে এগিয়ে দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রের সব সক্ষমতা— আমাদের সন্তানদের ওপর বিনিয়োগ করার কথা বলেছেন। আমাদের দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন, শিক্ষা ও পরিবারকে দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন।’
উপমন্ত্রী আরও বলেন, ‘শুধু পাঠ্যবই পড়লেই হবে না, অন্য বইও পড়তে হবে। বাবা-মায়ের কাছ থেকে শিখতে হবে, জীবন থেকে শিক্ষা নিতে হবে, গল্পের বই পড়তে হবে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ভাষা শেখার চেষ্টা করবো। মিল কারখানায় কীভাবে উৎপাদন করা হয় তা শিখবো, কৃষি কাজ কীভাবে করতে হয় তা শিখতে হবে। শ্রেণিকক্ষের বাইরেও আমরা শিখবো। লেখাপড়া করে কাড়ি কাড়ি টাকা করবো সে মানসিকতা যাতে না হয়, মানুষে মানুষে ভালোবাসা শ্রদ্ধাবোধ, সহনশীলতা সৃষ্টি হয়, সেটা শিখবো। ধর্মে, ধর্মে হানাহানি তা যাতে বন্ধ হয়, শ্রেণি-বর্ণ বৈষম্য যাতে বন্ধ হয় তা শিখবো। শিক্ষা অর্জনের জন্য শিখবো। ‘
বই উৎসব উদ্বোধী অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. কামাল হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সদ্য বদলি হওয়া সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ, কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. ওমর ফারুক, এনসিটিবির চেয়ারম্যান, ইইডিরি প্রধান প্রকৌশলী দেলওয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
বার্তা কক্ষ, ১ জানুয়ারি ২০২২