যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়ে গাড়িতে দেশের পতাকা তুলে দিয়ে মানচিত্র ও জাতীয় পতাকার মানহানি করা সংক্রান্ত মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ না করলে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হবে বলে আদেশ দিয়েছেন বিচারক।
রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. নূর নবী ওই আদেশ দেন। একইসঙ্গে খালেদা জিয়াকে মামলায় আত্মসমর্পণের জন্য সময় বেধে দিয়ে আগামী ৫ অক্টোবর দিন ধার্য করেন।
বিচারকের দেওয়া আদেশে বলা হয়, ‘খালেদা জিয়া তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এ মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুতর নয়। শুধুমাত্র মানহানি সংক্রান্ত অপরাধ যা জামিনযোগ্য। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত শেষে পুলিশের দাখিল করা প্রতিবেদন গ্রহণ করে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করা হয়। এরপরও আদালতে হাজির হননি। আসামিকে আগামী ৫ অক্টোবর স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেওয়া গেল। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি সংক্রান্তে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ‘
এ সময় মামলার বাদী জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এবি সিদ্দিকী আদালতে হাজির ছিলেন।
গত বছরের ৩ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে নালিশী মামলাটি দায়ের করেন বাদী। মামলায় খালেদা জিয়া ও তার প্রয়াত স্বামী সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে আসামি করা হয়।
মামলায় বলা হয়, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পর মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ৭ নভেম্বর সিপাহী বিপ্লবের মাধ্যমে সামরিক সরকারের দায়িত্ব দখল করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছেন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসলে তাকে হুমকি দিয়ে তার বাবার বাড়িতে প্রবেশ করতে দেন নাই।
এ ছাড়া খালেদা জিয়া ২০০১ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করে স্বাধীনতাবিরোধী আল বদর রাজাকারদের হাতে মন্ত্রিত্ব তুলে দেন। যার মাধ্যমে স্বীকৃত স্বাধীনতাবিরোধীদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়ে দেশের মানচিত্র এবং জাতীয় পতাকার মানহানি ঘটিয়েছেন। ‘
এর প্রেক্ষিতে খালেদার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেওয়া হয়।
চলতি বছর ২৫ ফেব্রুয়ারি তেজগাঁও থানার ওসি (তদন্ত) এবিএম মশিউর রহমান সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে মর্মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। অন্যদিকে প্রচলিত আইনে মৃত ব্যক্তির বিচারের সুযোগ না থাকায় প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেন।
বলা হয়, ‘২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মন্ত্রী পরিষদ গঠন করেন। ওই মন্ত্রী পরিষদে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের যারা প্রকাশ্য এবং আত্মস্বীকৃতিরূপে পাকিস্তানের দোসর হিসেবে নিজেদের পরিচয় প্রতিষ্ঠা করেছিল, সেই জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রশিবির, আল বদর, আল সামস কমিটির সদস্যদের নিয়ে মন্ত্রী ও এমপি বানান।
পরবর্তীতে উক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে মৃত্যুদণ্ডসহ বিভিন্ন দণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। তার মধ্যে তত্কালীন খালেদা জিয়ার সরকারের মন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।
কিন্তু তারা ক্ষমতায় থাকাকালীন মন্ত্রীত্বের সুবিধা নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র এবং জাতীয় পতাকা তাদের বাড়ি এবং গাড়িতে ব্যবহার করেছেন। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া স্বাধীনতাবিরোধী ব্যক্তিদের তার মন্ত্রিসভায় মন্ত্রীত্ব প্রদান করে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত পতাকাকে উক্ত স্বাধীনতা বিরোধীদের গাড়িতে তুলে দিয়ে সত্যিকারের দেশপ্রেমিক জনগণের মর্যাদা ভুলুণ্ঠিত করেছেন। যা প্রচলিত দণ্ডবিধি আইনে ৫০০ ধারায় মানহানির অপরাধ।
আদালতে ওই প্রতিবেদন দাখিলের পর গ্রহণ সংক্রান্ত শুনানি শেষে গত ২২ মার্চ খালেদাকে স্বশরীরে আদালতে হাজির হতে সমন জারি করা হয়। ওই সমন জারি হলেও গত ১১ জুন ধার্য তারিখে খালেদা হাজির হননি। আইন আদালতের প্রতি কোনো শ্রদ্ধা নেই মর্মে বাদী খালেদার বিরুদ্ধে গ্রপ্তোরি পরোয়ানা জারি করার আবেদন করেন। এরপর থেকে আদেশের জন্য তিন দফায় দিন ধার্য করা হয়।
নিউজ ডেস্ক
: : আপডেট, বাংলাদেশ ০৮ : ৪০পিএম, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রোববার
এইউ