করোনা সংক্রমণের কারণে প্রায় ১৮ মাস বন্ধের পর ১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে দেশের শিক্ষাঙ্গন।
১৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তৃতীয় দিনের পাঠ কার্যক্রম চলতে দেখা গেছে।
উপজেলার একমাত্র বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় সিদ্দিকা বেগম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চলছে পাঠদান কার্যক্রম। বিদ্যাপিঠে সরকারের বেঁধে দেওয়া নির্দেশনা মোতাবেক স্বাস্থ্য বিধি নিশ্চিত করে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলছে পাঠদান কার্যক্রম। বিদ্যালয়ের প্রধান গেইটে শিক্ষার্থীদের মাস্ক প্রদান, স্প্রে করা, ও শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করে কক্ষে প্রবেশ করানো হচ্ছে। এছাড়া শ্রেনীকক্ষের ভেতরেও সামাজিক দূরত্ব রেখে শিক্ষার্থীদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার স্কুল খোলার তৃতীয় দিনে স্কুলটিতে গিয়ে এমনিই চিত্র দেখা যায়। বিদ্যালয়ে এ দিন শতকরা ৯০ ভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
তৃতীয় দিনের শুরুতে দেখা গেছেস্বতঃস্ফূর্তভাবে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুলে যেতে দেখা গেছে। পথে পথে মেয়েরা স্কুলের উদ্দেশ্যে হেঁটে যাচ্ছে। কেউ সহপাঠীদের সাথে দল বেঁধে। কেউবা একাকী। তাদের পরনে স্কুলপোশাক ও পিঠে ব্যাগ। বিদ্যালয়ে দলে দলে শিক্ষার্থীরা প্রবেশ করছিল। এসময় তাদের চেহারায় ছিল খুশির ঝিলিক। তাদের মাঝে প্যাণচাঞ্চণ্য দেখা গেছে। অনেকদিন পর বন্ধু-সহপাঠীদের সাথে দেখা হবার আনন্দ। শ্রেণিকক্ষে প্রতিটি বেঞ্চে দুইজন করে বসতে দেখা গেছে।
বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ৩ শতাধিক। এদিন এসএসসি পরীক্ষার্থীদের সকাল ১১টা ৩০ মিনিট থেকে ১২ টা ৫০ মিনিট। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সকাল ১০ টা থেকে ১১ টা ২০ মিনিট পর্যন্ত। সাথে ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী দশম শ্রেণি সকাল ১১ টা থেকে ১২ টা ২০ মিনিট পর্যন্ত ক্লাশ নেওয়া হয়। দীর্ঘদিন পর ক্লাসে ফিরতে পেরে শিক্ষার্থীরা উচ্ছসিত বলে জানান কয়েকজন শিক্ষার্থী। দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর পর ক্লাসে বসতে পেরে জানিয়েছে সুখকর অনুভূতির কথা। তবে ক্লাসে ফেরার আনন্দ কেবল শিক্ষার্থীদেরই নয়; সমানভাবে উচ্ছ্বসিত শিক্ষকরাও।
দীর্ঘ সময়ের করোনা মহামারিতে নিম্নমুখী হওয়া শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে আবারও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফিরতে পারার ভিন্ন অনুভূতির কথা জানিয়েছেন শিক্ষকরাও। শিক্ষকরা বলছেন, মহামারি পরিস্থিতিতে দীর্ঘ সময় পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফিরছেন তারা। ক্লাসে ফেরার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের একঘেয়েমিতা, হতাশা আস্তে আস্তে কেটে যাবে। সরকারের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন তারা।
বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী মোহসেনা বিনমে মামুন জানায়, দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় বাসায় থেকে হাপিয়ে উঠেছিলাম। স্কুল চালু হওয়ায় খুব ভালো লাগছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে তাদেরকে মাস্ক পড়ে, হাত ধুয়ে এবং শারীরিক দূরত্ব মেনে শ্রেণিকক্ষে বসতে হচ্ছে। এরপরও দীর্ঘদিনের ব্যবধানে স্কুলে ফিরতে পারায় তারা খুব খুশি। দূর থেকে হলেও সহপাঠী ও শিক্ষকদের সঙ্গে অনেকদিন পর দেখা হয়েছে। পাশাপাশি লেখাপড়া পিছিয়ে পড়ার যে ক্ষতি হয়েছে তা থেকে এ যাত্রায় রক্ষা পাওয়া গেল। এভাবে নিয়ম মেনে ক্লাস না হলে তাদের ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেওয়া যাবে বলে মন্তব্য করে এই শিক্ষার্থী।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুল হক পাটোয়ারী বলেন, আমরা সরকারি নির্দেশনা মেনে স্কুল খুলেছি। গত রোববার ১২ সেপ্টেম্বর থেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুশৃংখলভাবে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করানো হয়েছে। একই সঙ্গে শুরু হয়েছে পাঠদান। তবে প্রথম দিন করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় করণীয় ও শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ফিরে আসার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন করা হচ্ছে। সোমবার থেকে পুরোদমে চলছে ক্লাশ। তিনি স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তকে সময় উপযোগী বলে উল্লেখ করেন তিনি। আর এজন্য সরকারি সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানান এই প্রধান শিক্ষক। তিনি আরও জানান,এরআগে গোটা স্কুল ক্যাম্পাস, ক্লাস রুম, টয়লেট- সবকিছুই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। যাতায়াতের রাস্তায় দূরত্ব ঠিক রাখতে মার্কিং করা হয়েছে, ক্লাস রুমে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্কুলে পর্যাপ্ত স্যানিটাইজ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক