স্বাস্থ্যবিধি ভাঙলে ইজারা বাতিল

এবার রাজধানীতে পশুর ২০টি হাট বসতে যাচ্ছে। এর মধ্যে ১৮টি অস্থায়ী এবং ২টি স্থায়ী। ইতোমধ্যে হাটগুলোর ইজারা চূড়ান্ত হয়েছে। ইজারাদাররা হাট বসানোর প্রস্তুতিমূলক কাজ ও প্রচার শুরু করেছেন। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে কঠোর বিধিনিষেধ দিয়েছে দুই সিটি করপোরেশন। এসব শর্ত ভাঙলে জরিমানা ও হাট ইজারা বাতিল হবে। ১৭ জুলাই থেকে হাটগুলোয় পশু বিক্রি শুরু হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দুই সিটির পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের স্বাস্থ্য নির্দেশনা যথাযথভাবে মেনে চলার কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইজারাদাররা হাটে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা উপকরণ সরবরাহসহ পর্যাপ্তসংখ্যক সিসি ক্যামেরা এবং তাপমাত্রা মাপার যন্ত্রের ব্যবস্থা করবেন। তারা ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কে মাস্ক পরা নিশ্চিত করবেন। ক্রেতারা একটি গেট ব্যবহার করে হাটে প্রবেশ করবেন এবং অন্য গেট দিয়ে বেরিয়ে যাবেন।

সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, শর্ত অনুযায়ী ঈদের দিনসহ চার দিনের জন্য ইজারাদারদের নির্দিষ্ট জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়। হাট বসানোর প্রস্তুতি গ্রহণের অংশ হিসেবে দুদিন আগ থেকে কাজ শুরু করতে পারবেন ইজারাদাররা। সে হিসাবে আগামীকাল থেকে হাটের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম শুরু করার কথা। যদিও কাগজে-কলমের এ নিয়ম পুরোপুরি বাস্তবায়িত হচ্ছে না। অস্থায়ী হাটের ইজারাদাররা ইতোমধ্যে প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম সম্পন্ন করে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। কারণ হিসাবে তারা বলছেন, দুদিন একটি হাট বসানোর জন্য যথেষ্ট নয়। কয়েকদিন আগ থেকে কাজ শুরু করতে হয়। ইজারার শর্ত মেনে তারা নির্ধারিত দিন থেকে পশু বিক্রি শুরু করবেন। এবার হাটগুলোর পশু বিক্রির হাসিল নির্ধারণ করা হয়েছে শতকরা ৫ টাকা।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ডিএনসিসির হাটগুলো ব্যবস্থাপনা করতে ১২ জন কাউন্সিলর ও ২ জন ভেটেরিনারি কর্মকর্তার সমন্বয়ে মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। তারা হাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করাসহ সার্বিক কার্যক্রম তদারকি করবেন। তিনি বলেন, করোনার ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে পশুর হাটগুলোর সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে কঠোর তদারকি অব্যাহত থাকবে। শর্ত ভাঙলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন যুগান্তরকে বলেন, পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে কঠোর শর্ত দেওয়া হয়েছে। এসব শর্ত ভাঙলে জরিমানা এবং হাটের ইজারা বাতিলও হতে পারে।

হাট বসাতে কাউন্সিলরের বাধা : দক্ষিণখানের কাওলা শিয়ালডাঙ্গা এলাকায় একটি অস্থায়ী পশুর হাট ইজারা দিয়েছে ডিএনসিসি। এ হাটের ইজারাদার সোহেল রেজা হাট স্থাপনের প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেছেন। কিন্তু হাটসংলগ্ন ঘাওয়াইর দক্ষিণপাড়া, মাঝিপাড়া ও লকুরিয়া এলাকার জলাবদ্ধতার কারণে ওই এলাকায় চলাচলে মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে।

ইজারাদার জানান, সুষ্ঠুভাবে হাট পরিচালনায় তিনি নিজ থেকে টিম গঠন করে পানি নিষ্কাশনের কাজ শুরু করেন। কিন্তু ডিএনসিসির ৪৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিছুর রহমান নাঈম এ কাজে বাধা দিচ্ছেন। বিষয়টি ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলামকে অবহিত করলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। ইজারাদারের অভিযোগ, ওই কাউন্সিলরের পক্ষে দরপত্রে অংশ নিয়েছিল একটি প্রতিষ্ঠান। তারা ইজারা না পাওয়ায় কাজে বাধা দিচ্ছেন কাউন্সিলর।

অভিযোগ প্রসঙ্গে ডিএনসিসির ৪৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিছুর রহমান নাঈম বলেন, ইজারাদার একজন সন্ত্রাসী, প্রতারক। আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে সে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে সে আমার বিরুদ্ধে ডিএনসিসি মেয়রের কাছে অভিযোগ দিয়েছে।

ডিএসসিসির হাট : ডিএসসিসি এলাকায় পশুর অস্থায়ী হাটগুলো হলো-হাজারীবাগ ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজসংলগ্ন খালি জায়গা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, মেরাদিয়া বাজার ও আশপাশের খালি জায়গা, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, আফতাব নগর (ইস্টার্ন হাউজিং) ব্লক-ই, এফজিএইচ এবং সেকশন-১ ও সেকশন-২ এলাকা, গোলাপবাগস্থ ডিএসসিসি মার্কেটের পেছনের খালি জায়গা, উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘ ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, দনিয়া কলেজসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধুপখোলা ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা এবং রহমতগঞ্জ ক্লাবসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা। এছাড়া ডিএসসিসির সারুলিয়াতে রয়েছে স্থায়ী কোরবানির পশুর হাট।

ডিএনসিসির হাট : ডিএনসিসি এলাকায় পশুর অস্থায়ী হাটগুলো হলো-বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং (আফতাবনগর)-এর ব্লক-ই, সেকশন-৩ এর খালি জায়গা; কাওলা শিয়ালডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গা, মিরপুর সেকশন-৬ এর ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা, উত্তরখান মৈনারটেক হাউজিং প্রকল্পের খালি জায়গা, উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরে বৃন্দাবন হতে বিজিএমইএ পর্যন্ত খালি জায়গা, ভাটারা (সাঈদ) নগর, মোহাম্মদপুর বছিলাস্থিত ৪০ ফুট সড়ক সংলগ্ন রাজধানী হাউজিং, স্বপ্নধারা হাউজিং ও বছিলা গার্ডেন সিটির খালি জায়গা এবং ডিএনসিসির ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন ৩০০ ফুট সড়ক সংলগ্ন উত্তর পাশের সালাম স্টিল লিমিটেড এবং যমুনা হাউজিং কোম্পানি লিমিটেড ও ব্যক্তিমালিকানাধীন খালি জায়গা। এছাড়া গাবতলীতে রয়েছে ডিএনসিসির কোরবানির পশুর স্থায়ী হাট।

ঢাকা ব্যুরো চীফ, ১৩ জুলাই ২০২১

Share