শৈশবে মোবাইলের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার শিশুর সামাজিক ও মানসিক বিকাশে বিরূপ প্রভাব ফেলে। অনেক মা শিশুদের মোবাইল দেখিয়ে খাওয়ান বা কাঁদলেই মোবাইল দিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করেন। এতে শিশু মোবাইলকে খেলনা ভেবে ধীরে ধীরে কার্টুনে আসক্ত হয়ে পড়ে। পরিণতিতে শিশুরা কথা বলতে দেরি করে,খিটখিটে ও জেদি হয়ে পড়ে।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, মা-বাবা দু’জনেই চাকরি বা অন্য কাজে বাইরে থাকলে সন্তান একা থেকে টিভিতে আসক্ত হয়ে পড়ে। যেসব শিশু বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ক্রিয়াকলাপ,যেমন– খেলাধুলা, দৌড়ানো বা সাইকেল চালানোর সুযোগ থেকে বঞ্চিত, তারাই ক্রমাগত মোবাইল বা ভিডিও গেমে আসক্ত হয়ে পড়ে। ফলে কোনো কিছুতে মনোনিবেশ এবং বাস্তব জীবনে কার্যকরভাবে যোগাযোগ করার ক্ষমতা বিঘ্নিত হয়।
এ ছাড়া চোখেরও ক্ষতি হয়। মোবাইল, সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেট গেম আসক্তি অন্যান্য নেশাজাত দ্রব্যের আসক্তির মতোই। একটা আচরণগত আসক্তি, অন্যটা রাসায়নিক আসক্তি। টিভি,মোবাইল গেম বা যে কোনো ধরনের ভার্চুয়াল এন্টারটেইনমেন্ট দেখার সময়ে আমাদের মস্তিষ্কের কোষ থেকে ডোপামিন নিউরোট্রান্সমিটার নিঃসরিত হয়। এই ডোপামিন আমাদের মনে ভালো লাগার অনুভূতি সঞ্চার করে। ফলে অতি সহজেই আমরা আসক্ত হয়ে পড়ি।
শিশুদের স্মার্টফোন ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হওয়া বাঞ্ছনীয়। শিশুদের শয়নকক্ষে সব ধরনের ডিভাইস রাখা বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে মা-বাবাকে তাদের সন্তানদের সঙ্গে একটি প্রযুক্তি ব্যবহারের নীতিমালা পরিকল্পনা তৈরি করে,অর্থাৎ কখন-কীভাবে ডিভাইসগুলো ব্যবহার করা হবে,তা নির্দিষ্ট করে ফেলতে হবে। মা-বাবারও একই নিয়ম অনুসরণ করা উচিত। পাশাপাশি সবারই ঘুমের রুটিন থাকা উচিত।
নিজেদের ব্যস্ততার কারণে সন্তানকে মোবাইল গেম বা ভিডিওতে আসক্ত করা অন্যায়। শিশুদের খেলাধুলা নিশ্চিত করতে হবে। শিশুকে বাগান,পার্ক বা মাঠে খেলাধুলা করতে নিয়ে যেতে হবে। যারা শহরে থাকেন, তারা সপ্তাহে একদিন বা মাসে দু’দিন শিশুকে নিয়ে প্রকৃতির কাছে যেতে পারেন।
শিশুদের ঘরের কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে। সন্তানকে ছোট ছোট কাজে সহযোগিতা করা শেখাতে হবে। এতে শিশুরা ঘরের কাজের প্রতি আগ্রহী হবে এবং মোবাইল আসক্তি থেকে ধীরে ধীরে সরে আসবে।
শিশুর স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণ করতে এবং তাদের চোখের বিশ্রামের জন্য স্ক্রিন থেকে পর্যাপ্ত সময় বিরতি নিতে উপদেশ দিতে হবে।
লেখক : অধ্যাপক ডা.মনজুর হোসেন, সভাপতি, বাংলাদেশ শিশু চিকিৎসক সমিতি; সাবেক অধ্যাপক ও পরিচালক, ঢাকা শিশু হাসপাতাল।