কুমিল্লার চান্দিনায় প্রবাসী শহীদ উল্যাকে হত্যার দায়ে স্ত্রীসহ চারজনকে মৃত্যুদণ্ড ও কন্যাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন কুমিল্লার একটি আদালত। আজ বুধবার দুপুরে কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পঞ্চম আদালতের বিচারক জাহাঙ্গীর হোসেন এ রায় দেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার কাশারী খোলাগ্রামের নিহত শহীদ উল্ল্যার স্ত্রী হাছনেয়ারা বেগম ওরফে হাছেনা, একই গ্রামের প্রয়াত খলিলুর রহমানের ছেলে মো. শাহজাহান, প্রয়াত মধু মিয়ার ছেলে আমির হোসেন ও প্রয়াত তৈয়ব আলীর ছেলে মো. মোস্তফা। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেন নিহতের কন্যা খাদিজা বেগম ওরফে খোদেজা। রায় ঘোষণার সময় মোস্তফা ও শাহজাহান ছাড়া সবাই উপস্থিত ছিলেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার কাশারীখোলা গ্রামের শহীদ উল্ল্যা (৪৮) দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলেন। ২০০৮ সালের শেষের দিকে তিনি বাড়িতে আসেন। ২০০৯ সালের ২১ নভেম্বর দিবাগত রাতে লোকজনের চিৎকার শুনে ঘুম থেকে ওঠেন শহীদ উল্ল্যার ভাই হাবিব উল্যা। তিনি জানতে পারেন যে শহীদ উল্যাকে পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজি করে পরদিন সকাল সাতটার দিকে ধানখেতে শহীদ উল্যার লাশ পাওয়া যায়।
এ ঘটনায় ২০০৯ সালের ২২ নভেম্বর হাবিব উল্যা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) তারেক মো. হান্নান এ হত্যায় জড়িত থাকা সন্দেহে শহীদ উল্যার স্ত্রী, মেয়েসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেন। আদালতে তাঁরা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, বিদেশ থেকে এসে স্ত্রীর কাছে টাকার হিসাব চেয়েছিলেন শহীদ উল্ল্যা। এতে ক্ষিপ্ত হন তাঁর স্ত্রী হাছনেয়ারা ও মেয়ে খাদিজা। পরে হাছনেয়ারা একই এলাকার শাহজাহান, আমির ও মোস্তফাকে নিয়ে শহীদ উল্যাহকে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ ধানখেতে ফেলে রাখেন।
২০১০ সালের ৩১ মার্চ হোছনেয়ারা বেগমসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। পরবর্তী সময়ে মামলাটি বিচারে এলে ২০১০ সালের ২৬ এপ্রিল আসামিদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হয়।
সাক্ষ্য–প্রমাণ শেষে আসামি হাছনেয়ারা, মো. শাহজাহান, আমির হোসেন ও মো. মোস্তফা প্রত্যেককে মৃত্যুদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেন আদালত। তাঁদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেন আদালত। এ ছাড়া আসামি খাদিজা বেগমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সহকারী সরকারি কৌঁসুলি জাকির হোসেন ও মফিজুল ইসলাম। রায়ে সন্তুষ্ট প্রকাশ করে জাকির হোসেন বলেন, মামলার পাঁচ আসামির মধ্যে মোস্তফা শুরু থেকেই পলাতক। শাহজাহান গ্রেপ্তারের পর জামিনে যান। এরপর আর আদালতে হাজির হননি। তিনিও পলাতক।
কুমিল্লা প্রতিনিধি, ৩০ আগস্ট ২০২৩
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur