Thursday, 26 March, 2015 01:48:38 PM
লাইফস্টাইল ডেস্ক:
প্রথম দৈহিক মিলনে রক্তপাতের মাধ্যমে নারীর কুমারিত্ব প্রমাণিত হয়- এটি বিশ্বব্যাপি প্রচলিত একটি ধারণা। অনেকের ধারণা, নারীর যৌনাঙ্গের ভেতরে সতীচ্ছদ পর্দা নামে এক টুকরো মাংসপিণ্ড থাকে; যা প্রথম মিলনে ছিন্নভিন্ন হয়ে রক্তপাত ঘটায়।
আবার অনেকের মতে, মাংসপিণ্ড নয়; এটা আসলে রক্তনালী দিয়ে তৈরি একটা জালের মত বস্তু, যা প্রথম মিলনে ছিড়েগিয়ে রক্তপাত ঘটায়।
তবে বেশিরভাগ মানুষের ধারণা হলো, এটি আসলে একটি পর্দা; যা যৌনাঙ্গের ভেতরের দিকে থাকে এবং যৌনাঙ্গের প্রবেশপথকে সম্পূর্ণ বন্ধ করে রাখে। প্রথম যৌনমিলনে তা ছিড়ে গিয়ে রক্তপাত ঘটায়।
একবার চিন্তা করে দেখুন, তাই যদি হতো, তাহলে মহিলাদের ঋতুস্রাব কি আসলেই সম্ভব হতো?
আসলে নারীর যৌনাঙ্গ সন্মন্ধে স্বচ্ছ ধারণার অভাবই এসব ধারণার মূল কারণ। এই সম্পর্কে আধুনিক ধারণার প্রবর্তক বিখ্যাত আরব বিজ্ঞানী ইবনে-সিনা। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী, নারীর যৌনাঙ্গের প্রবেশ পথের ১-২ সেন্টিমিটার ভেতরে ইলাস্টিক বা স্থিতিস্তাপক এক ধরণের টিস্যু থাকে। একে বলা হয় hymen. এটাকে তুলনা করা যেতে পারে দরজার ফ্রেম বা চৌকাঠের সঙ্গে; যা দরজার চারিদিকে লাগানো থাকে। কিন্তু কোনোভাবেই এটি বদ্ধ দরজার সঙ্গে তুলনীয় না। এটির আকৃতি এবং আকার একেক নারীর ক্ষেত্রে একেক রকম হয়।
কারো ক্ষেত্রে এটি যৌনাঙ্গের প্রবেশপথের চারিদিকে গোল করে লাগানো থাকে, কারো ক্ষেত্রে এটি অর্ধচন্দ্রাকৃতির অর্থাৎ শুধু একপাশে লাগানো। বেশিসংখ্যক নারীর ক্ষেত্রেই এটি অর্ধচন্দ্রাকৃতির। এটির আকারও একেক নারীর ক্ষেত্রে একেক রকম হয়। যোনীপথকে একটা ঘড়ি আকৃতির জিনিস হিসেবে কল্পনা করলে, সবচেয়ে বড় hymen এর আকার হলো- একটা ঘড়িতে যদি ১০টা ১০ বেজে থাকে, তবে ঘন্টা ও মিনিটের কাটা দুটির মধ্যবর্তী স্থানটুকু hymen দ্বারা আবৃত থাকলে। সবচেয়ে ছোট hymen হলো যদি ঘড়িতে ৬টা বেজে থাকে, তবে ঘন্টা ও মিনিটের কাটা দুটির মধ্যবর্তী স্থানটুকু hymen দ্বারা আবৃত থাকলে, খুব কমসংখ্যক নারী (০.০৩% নারী) hymen ছাড়া জন্মগ্রহণ করেন। আবার খুব কমসংখ্যক নারী যৌনাঙ্গের প্রবেশপথ রুদ্ধকারী hymen নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন। যতদিন পর্যন্ত এরা প্রাপ্তবয়স্ক না হয় এবং ঋতুস্রাব না হয়, তারা কোনো সমস্যা বোধ করেন না। বয়প্রাপ্তির পর ঋতুস্রাব বের হতে নাপেরে ভিতরের দিকে চলে যায় ও ব্যাথার সৃষ্টি করে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায়, একে বলা হয়, hematocolpos এদের (hymen) অপসারণের মাধ্যমে ঋতুস্রাববের করে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হয়।
একটি নারী কুমারী হলেও নিম্নের কিছু কারণে, প্রথম মিলনে রক্তপাত না হতে পারে। >দরজার চৌকাঠের উদাহরণ থেকে বোঝা যায় যে, প্রথম মিলনে রক্তপাত র্যান্ডম বা আপেক্ষিক ব্যাপার। এটি নির্ভর করবে মিলনের তীব্রতা/রুক্ষতা, যোনীপথের পিচ্ছিলতা ইত্যাদি বিষয়ের উপর। আগের যুগে প্রথম মিলনে অনেক নারীই ভীত থাকতেন এবং সঠিকভাবে উত্তেজিত হতে পারতো না, তাই hymen ছিড়ে রক্তপাতের শিকার হতেন। বর্তমান যুগে যৌনক্রীড়ায় মেয়েদের স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহণ প্রথম মিলনে রক্তপাতের সম্ভাবনা আরো কমিয়ে দেয়। >কারো কারো hymen জন্মগতভাবে পাতলা থাকতে পারে এবং শারীরিক এক্টিভিটি যেমন ব্যায়াম, সাইকেল চালানো ইত্যাদির কারণে তা অজ্ঞাতসারে ছিড়ে যেতে পারে।
>উপরে hymen এর যে আকার বলা হয়েছে সেই অনুযায়ী কারো hymen এর আকার ছোট হতে পারে। সে ক্ষেত্রে hymen ছিড়ে যাওয়া নির্ভর করে পুরুষাঙ্গের আকারের উপরে। >আবার নারীভেদে hymen এর স্থিতিস্থাপকতা কম-বেশি হতে পারে। যার স্থিতিস্থাপকতা বেশি, তার hymen ছেড়ার সম্ভাবনা কম। > বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে hymen এর স্থিতিস্থাপকতা বাড়তে থাকে। পুরোন যুগে মেয়েদের কম বয়সে বিয়ে এবং কমস্থিতিস্থাপক hymen প্রথম মিলনে ছিড়ে রক্তপাত ঘটাতো বলেই নারীর সতীত্বের সঙ্গে রক্তপাতের সম্পর্কের ধারণা গড়ে উঠে। কিন্তু বর্তমানে মেয়েদের বেশি বয়সে বিয়ে হওয়াতে, অধিকতর স্থিতিস্থাপক hymen এর কারণে অনেকে রক্তপাতের সম্মুখীন না হতে পারেন।
> এছাড়াও খুব কমসংখ্যক নারীর জন্মগতভাবে hymen থাকে না। এদের ক্ষেত্রে তাই প্রথম মিলনে hymen থেকে রক্তপাতের কথাটা খাটে না। আবার কোনো কোনো নারী কুমারী না হলেও তার রক্তপাত হতে পারে । >যদি কোনো নারী যথেষ্ট পরিমাণে উত্তেজিত না থাকেন এবং যৌনরস দ্বারা যোনিপথ পিচ্ছিল না থাকে অথবা পুরুষসঙ্গী যদি রুক্ষভাবে মিলনে অভ্যস্ত থাকেন সে ক্ষেত্রে যোনীর টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রক্তপাত হতে পারে। কিন্তু এই রক্ত hymen থেকে আসে না। তবে আপেক্ষিকভাবে রক্তের উৎস সম্মন্ধে জানার কোনো উপায় থাকে না।
>কিছু ইনফেকশনের কারণে মিলনের সময় রক্তপাত হতে পারে (যেমন Chlamydia infection) >প্রথম মিলনেই hymen নির্মূল হবে তা নয়। আবার কয়েকটি মিলনে অল্প অল্প করে নির্মূল হতে পারে। ফলে কুমারী না- এমন নারীও কিন্তু মিলনের সময় রক্তপাতের সম্মুখীন হতে পারেন, যদিও এটা তার প্রথম মিলন নয়। ঠিক কতোভাগ নারী প্রথম মিলনে রক্তপাতের সম্মুখীন হন, তা নিয়ে তেমন ব্যপক কোনো গবেষণা হয়নি।
১৯৯৮ সালে Dr. Sara Patterson-Brown এর করা the British Medical Journal এ প্রকাশিত একটি গবেষণার কথা জানা যায়। গবেষণাতে অংশগ্রহণকারী ৬৩% মহিলা জানান যে, তারা প্রথম মিলনে রক্তপাতের সম্মুখীন হননি। যুগ যুগ ধরে, এই রক্তপাতের মাধ্যমে সতীত্বের পরীক্ষার কারণে অনেক নারীর প্রতি সন্দেহের আঙ্গুল উঠেছে। পৃথিবীর কোথাও কোথাও বিয়ের পর রক্তমাখা বিছানার চাদর প্রদর্শনের রেওয়াজ আছে। আরব বিশ্বে এমন কি বিয়ের আগে অনেক নারী অপারেশন করে hymen প্রতিস্থাপন করেন। যদিও ইসলামি কোনো বই-পুস্তকের কোথাও এই পদ্ধতিতে নারীর সতীত্ব প্রমাণিত হয় বলে উল্লেখ নেই।