বিয়ে সামজিক নিয়ম ও পারিবারিক বন্ধন। বিয়ের মাধ্যমে নর-নারী হৃদয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। সংসারজীবনে ভুল বোঝাবুঝি থেকে শুরু করে বিভিন্ন কারণে নামে বিষাদের ছায়া। জীবনে চূড়ান্ত বিপর্যয় থেকে স্বামী-স্ত্রী উভয়কে রক্ষার জন্য ইসলামে তালাকের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে বিয়েতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে দেনমোহর।
বিয়ের কাবিননামায় স্বাক্ষর ও মৌখিকভাবে বিয়ে পড়ানোর পর সহবাস করার আগে দেমোহর দেয়ার নিয়ম থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা মানা হয় না। তবে বিয়ের পরে যদি দেনমোহর পরিশোধ করতে বিলম্ব হয় তবে স্ত্রীর কাছ থেকে নির্দিষ্ট করে সময় চেয়ে নিতে হবে ও অবশ্যই দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে।
মনে রাখতে হবে, স্ত্রীর কাছে দেমোহর হচ্ছে স্বামীর ঋণ। স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক দেয় বা স্ত্রী যদি স্বামীকে তালাক দেয় বা স্বামীর যদি মৃত্যু ঘটে তবে অবশ্যই দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে। দেনমোহর পরিশোধ করা ইসলামে বাধ্যতামূলক। দেনমোহর পরিশোধ না করলে শেষ বিচারের দিন আল্লাহর কাছে জাবাবদিহি করতে হবে।
আবু দাউদ শরিফে বিবাহ অধ্যায়ে দেনমোহর সম্পর্কে ৩৮০৮নং হাদিসে বিস্তারিত বলা হয়েছে। স্ত্রীর মোহর ফাঁকি দেওয়া অতি হীন কাজ। হাদিসে তাকে বলা হয়েছে ‘ব্যভিচারী’।
দেনমোহর কী?
মুসলিম বিয়েতে দেনমোহর হচ্ছে স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীর একটি বিশেষ অধিকার। দেনমোহর সাধারণত বর ও কনের সামাজিক অবস্থান অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। দেনমোহর হিসেবে যে কোনো পরিমাণ অর্থ নির্ধারণ করা যায়। কিন্তু কোনো অবস্থায়ই স্বামী ন্যূনতম ১০ দিরহাম বা সমপরিমাণ অর্থ অপেক্ষা কম নির্ধারণ করতে পারবেন না। মুসলিম আইনানুযায়ী দেনমোহর বিয়ের একটি অন্যতম শর্ত। দেনমোহর স্বামী কতৃর্ক স্ত্রীকে পরিশোধযোগ্য একটি আইনগত দায়।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেনমোহর দেয়া হয় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তালাকের পরে দেনমোহর দেয়া হয়। আর দেনমোহর নিয়ে বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন ধরনের ভুল ধারণা রয়েছে। দেনমোহর সম্পর্কে গুরুপূর্ণ কিছু তথ্য নিচে তুলে ধরা হলো।
দেনমোহর হচ্ছে ঋণ
স্ত্রীর কাছে দেনমোহর হচ্ছে স্বামীর ঋণ। স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক দেয় বা স্ত্রী যদি স্বামকে তালাক দেয় বা স্বামীর যদি মৃত্যু ঘটে তবে অবশ্যই দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে।
অনেকে মনে করেন, স্বামী তালাক দিলে শুধুমাত্র দেনমোহর দিতে হয়। কিন্তু এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। দেনমোহরের সঙ্গে তালাকের কোনো সম্পর্ক নেই। স্বামী বা স্ত্রী যেই তালাক দিক না কেন দেনমোহর অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে। দেনমোহর পরিশোধের বিকল্প কিছু নেই। শুধু স্ত্রী যদি মাফ করে দেন সেক্ষেত্রে মাফ হতে পারে।
কিন্তু মনে রাখতে হবে, দেনমোহর একটি ঋণ। তালাকের পরবর্তী সময়ের দেনমোহর পরিশোধের আগে যদি স্বামীর মৃত্যু হয় তবে স্বামীর জমাকৃত নগদ টাকা কিংবা প্রাপ্ত সম্পত্তি থেকে স্বামীর স্বজনদের দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে। স্ত্রী দেনমোহর পরিশোধের পরেই কেবল মৃত স্বামীর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি সন্তানদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা হবে। এবং সেখানে স্ত্রী একটি অংশ থাকবে।
স্ত্রী যদি ক্ষমা করেন
দেনমোহর হলো স্ত্রীর কাছে স্বামীর ঋণ। কাবিননামায় দেনমোহরের বিষয়ে উল্লেখ থাকে। দাম্পত্যজীবন শুরু করার সময় স্বামীকে এই দেনমোহর পরিশোধ করতে হয়। স্ত্রী ক্ষমা করা ছাড়া এই ঋণ পরিশোধের বিকল্প কিছু নেই।
উশুল
কাবিননামায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে উশুল। বিয়ের সময় স্বামী যদি স্ত্রীকে গহনা বা অন্য কোনো জিনিস দিয়ে থাকে এবং তা যদি কাবিননামায় লিখিতভাবে উল্লেখ থাকে তবে কাবিনের টাকা থেকে কর্তন যাবে।
স্বামীর মৃত্যু
তালাকের পরবর্তী সময়ে যদি স্বামীর মৃত্যু হয় তবে স্বামীর রেখে যাও প্রাপ্ত সম্পত্তি থেকে দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটানোর সুযোগ নেই।
আদালতে মামলা
স্বামী যদি দেনমোহর পরিশোধ না করে তবে স্ত্রী আদালতে স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে।
তবে সম্প্রতি অনেকে বিয়েতে আমরা দেখে থাকি অনেক ভারি অঙ্কের কাবিন করা হয়। কাবিন হচ্ছে ইসলামের বিধান অনুযায়ী নারীকে সম্মান করা। স্বামীর সমর্থন অনুযায়ী কাবিন করতে হবে। জোরপূর্বক অতিরিক্ত অর্থের কাবিন ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়।
মাওলানা হুসাইনুল বান্না, সহকারী অধ্যাপক, উর্দু বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
৩১ জানুয়ারি,২০১৯