অনেক অনেক যুগ আগে থেকে মানুষ শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হত। আর এজন্যই মানব প্রজাতির সৃষ্টি হয়েছে। আমার মনে হয় যে আগে মানুষের বিনোদন বলতে কিছুই ছিল না।
এ কারণে মানুষ অবসর সময় কাটাতে এবং কিছুটা শারীরিক ও মানসিক চাহিদা পূরণেই এই শারীরিক মিলন করত। তবে বর্তমানে অনেকেই বলে থাকেন যে এর অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। সত্যিই কি তাই, আমার তো মনে হয় এটি আরও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কেননা এর ফলে শরীর দুর্বল হয়ে যায়, সবাই ক্লান্তি অনুভব করে থাকে। আমাকে এই বিষয়ে জানাবেন প্লিজ?
উত্তর:
আপনার কথার কিছু অংশ সত্য কিন্তু বাকি অংশ একেবারেই ভুল ধারণা। আদিম যুগে বলা চলে অবসর সময়ের বিনোদনের জন্যই শারীরিক মিলন করা হয়ে থাকত তবে এর প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয় শারীরিক এবং মানসিক চাহিদা থেকেই। আপনি যেমনটা যুক্তি দেখিয়েছেন যে শারীরিক মিলন করলে মানুষ ক্লান্ত হয়ে যায় সেক্ষেত্রে এর স্বাস্থ্য উপকারিতা আদৌ আছে কি না এই বিষয়ে বলা যায় যে শারীরিক মিলন একজনকে ক্লান্ত করে ঠিকই কিন্তু তা সাময়িকের জন্য। আমরা শারীরিক ব্যায়াম করাকালীন সময়ে যেমন শারীরিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ি তবে এই শারীরিক মিলন আমাদের শারীরিক গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ঠিক তেমনি শারীরিক মিলনও শারীরিক ব্যায়ামের ন্যায় সাময়িকভাবে ক্লান্ত করে কিন্তু এটি নিয়মিত করলে স্বাস্থ্যগত কিছু উপকারিতাও পাওয়া যায়। শারীরিক মিলন শারীরিক ব্যায়ামের মতই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। আসুন জেনে নিই এই শারীরিক মিলন আমাদের স্বাস্থ্যে কী ধরনের উপকার করতে পারে।
শারীরিক মিলনের স্বাস্থ্য উপকারিতা :
১) আপনার হার্টকে ভাল রাখতে পারে এই শারীরিক মিলন। যার কামোদ্দীপনা ও অনুভূতি যতো বেশি জোরালো হবে তার হার্ট ততো বেশি সক্রিয় ও বলিষ্ঠ হবে।
২) প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিকে কমিয়ে দেয় শারীরিক সম্পর্ক। ৩) কর্মস্থলে নিজেকে গুটিয়ে রাখার প্রবণতা থাকে না। আগের চেয়ে বেশি বহির্মুখী ভাবধারা প্রকাশ পায় সার্বিক আচরণে। সমস্যা সমাধানের দক্ষতা ও সৃজনশীলতা বাড়ে। ৪) এর ফলে আপনাকে দেখে আরও তরুণ, সজীব ও প্রাণবন্ত মনে হবে। কারণ এটি এক ধরনের শারীরিক ব্যায়ামও বলা চলে। ৫) স্বাস্থ্যসম্মত শারীরিক মিলন মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। ৬) মস্তিষ্ককে সজাগ ও সক্রিয় করে তোলে।
সুস্থ ও সুন্দর যৌন জীবনের অনন্য স্বাস্থ্য উপকারিতা :
বিয়ে করার কথা ভাবছেন? তাহলে বিয়েটা করেই ফেলুন। কেননা চিকিৎসকেরা বলছেন যে সুস্থ ও সুন্দর যৌন জীবনের আছে হরেক রকম স্বাস্থ্য উপকারিতা। নিয়মিত যৌন মিলন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি নানান ধরনের শারীরিক সমস্যা কমিয়ে ফেলে। ফলে সুস্থ ও সুন্দর একটি যৌন সম্পর্ক গড়ে তুললে সুখী,সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন লাভ করা যায়। আসুন,জেনে নেয়া যাক সুস্থ যৌন জীবনের ৫টি স্বাস্থ্য উপকারিতা।
বয়স অনুপাতে সহবাসের নিয়ম
বিভিন্ন যৌন বিজ্ঞানীর বক্তব্য, বয়সের সাথে সাথে মিলন ইচ্ছা স্তিমিত হয়ে আসে। তবে ডঃ কিনসী এ ব্যাপারে বহু গবেষনা করে বিবাহিত ও বয়ঃপ্রাপ্ত পুরুষ-নারীর মিলন সংখ্যা নিয়ে একটি রিপোর্ট লিখেছেন। তা হলোঃ
১) ২০ বছর সপ্তাহে ১৪ বার। ২) ২১-২৬ বছর সপ্তাহে ১২ বার। ৩) ২৬-৩২ বছর সপ্তাহে ১০ বার। ৪) ৩২-৩৮ বছর সপ্তাহে ৮ বার।
৫) ৩৮-৪৫ বছর সপ্তাহে ৭ বার। ৬) ৪৫-৫১ বছর সপ্তাহে ৫ বার। ৭) ৫১-৬০ বছর সপ্তাহে ৩ বার। ৮) ৬০+ বছর সপ্তাহে ১ বার বা সম্পুর্ন বন্ধ
অধিক সময় যৌন মিলন বা স্ত্রী সহবাস করার কার্যকর পদ্ধতি
সাধারনত অধিক সময় নিয়ে যৌন মিলন করাটা পুরুষের সক্ষমতার উপরই নির্ভর করে। তথাপি কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে পুরুষরা তাদের মিলনকাল দীর্ঘায়িত করতে পারেন। তবে কে কতটা দীর্ঘ সময় নিয়ে যৌন মিলন করবে এটা অনেকটাই তাদের চর্চার উপর নির্ভর করে থাকে। আসুন জেনে নিই মিলন দীর্ঘায়িত করার কিছু পদ্ধতি।
পদ্ধতি ১:- চেপে/টিপে (স্কুইজ) ধরা
এই পদ্ধতিটি আবিষ্কার করেছেন মাষ্টার এবং জনসন নামের দুই ব্যাক্তি। চেপে ধরা পদ্ধতি আসলে নাম থেকেই অনুমান করা যায় কিভাবে করতে হয়। যখন কোন পুরুষ মনে করেন তার বীর্য প্রায় স্থলনের পথে, তখন সে অথবা তার সঙ্গী লিঙ্গের ঠিক গোড়ার দিকে অন্ডকোষের কাছাকাছি লিঙ্গের নিচের দিকে যে রাস্তা দিয়ে মুত্র/বীর্য বহিঃর্গামী হয় সে শিরা/মুত্রনালী কয়েক সেকেন্ডর জন্য চেপে ধরবেন। (লিঙ্গের পাশ থেকে দুই আঙ্গুল দিয়ে ক্লিপের মত আটকে ধরতে হবে।)। চাপ ছেড়ে দেবার পর ৩০ থেকে ৪৫ সেকেন্ডের মত সময় বিরতী নিন। এই সময় লিঙ্গ সঞ্চালন বা কোন প্রকার যৌন কর্যক্রম করা থেকে বিরত থাকুন।
এ পদ্ধতির ফলে হয়তো পুরুষ কিছুক্ষনের জন্য লিঙ্গের দৃঢ়তা হারাবেন। কিন্তু ৪৫ সেকেন্ড পুর পুনরায় কার্যক্রম চালু করলে লিঙ্গ আবার আগের দৃঢ়তা ফিরে পাবে। স্কুইজ পদ্ধতি এক মিলনে আপনি যতবার খুশি ততবার করতে পারেন। মনে রাখবেন সব পদ্ধতির কার্যকারীতা অভ্যাস বা প্রাকটিস এর উপর নির্ভর করে। তাই প্রথমবারেই ফল পাওয়ার চিন্তা করা বোকামী হবে।
পদ্ধতি ২:- সংকোচন (টেনসিং)
এ পদ্ধতি সম্পর্কে বলার আগে আমি আপনাদের কিছু বেসিক ধারনা দেই। আমরা প্রস্রাব করার সময় প্রসাব পুরোপুরি নিঃস্বরনের জন্য অন্ডকোষের নিচ থেকে পায়ুপথ পর্যন্ত অঞ্চলে যে এক প্রকার খিচুনী দিয়ে পুনরায় তলপেট দিয়ে চাপ দেই এখানে বর্নিত সংকোচন বা টেনসিং পদ্ধতিটি অনেকটা সে রকম। তবে পার্থক্য হল এখনে আমরা খিচুনী প্রয়োগ করবো – চাপ নয়।
মিলনকালে যখন অনুমান করবেন বীর্য প্রায় স্থলনের পথে, তখন আপনার সকল যৌন কর্যক্রম বন্ধ রেখে অন্ডকোষের তলা থেকে পায়ুপথ পর্যন্ত অঞ্চল কয়েক সেকেন্ডের জন্য প্রচন্ড শক্তিতে খিচে ধরুন। এবার ছেড়ে দিন। পুনরায় কয়েক সেকেন্ডের জন্য খিচুনী দিন। এভাবে ২/১ বার করার পর যখন দেখবেন বীর্য স্থলনেরে চাপ/অনুভব চলে গেছে তখন পুনরায় আপনার যৌন কর্ম শুরু করুন।
সংকোচন পদ্ধতি আপনার যৌন মিলনকে দীর্ঘায়িত করবে। আবারো বলি, সব পদ্ধতির কার্যকারীতা অভ্যাস বা প্রাকটিস এর উপর নির্ভর করে। তাই প্রথমবারেই ফল পাওয়ার চিন্তা করা বোকামী হবে।
পদ্ধতি ৩ :- বিরাম (টিজিং / পজ এন্ড প্লে)
এ পদ্ধতিটি বহুল ব্যবহৃত। সাধারনত সব যুগল এ পদ্ধতির সহায়তা নিয়ে থাকেন। এ পদ্ধতিতে মিলনকালে বীর্য স্থলনের অবস্থানে পৌছালে লিঙ্গকে বাহির করে ফেলুন অথবা ভিতরে থাকলেও কার্যকলাপে বিরাম দিন। এই সময় আপনি আপনাকে অন্যমনস্ক করে রাখতে পারেন। অর্থ্যৎ সুখ অনুভুতি থেকে মনকে ঘুরিয়ে নিন।যখন অনুভব করবেন বীর্যের চাপ কমে গেছে তখন পুনরায় শুরু করতে পারেন।
বিরাম পদ্ধতির সফলতা সম্পুর্ন নির্ভর করে আপনার অভ্যাসের উপর। প্রথমদিকে এ পদ্ধতির সফলতা না পাওয়া গেলেও যারা যৌন কার্যে নিয়মিত তারা এই পদ্ধতির গুনাগুন জানেন। মনে রাখবেন সব পদ্ধতির কার্যকারীতা অভ্যাস বা প্রাকটিস এর উপর নির্ভর করে। তাই প্রথমবারেই ফল পাওয়ার চিন্তা করবেন না।
একটা বিষয় প্রতিটা পুরুষেরই জেনে রাখা দরকার – বিষয়গুলি নিয়ে অবশ্যই আপনার স্ত্রীর সাথে আলোচনা করবেন। তাতে আপনারা দু’জনেই লাভবান হবেন। আপনি আপনার স্ত্রীকে পদ্ধতিগুলো বুঝিয়ে বলুন। দেখবেন সেই আপনাকে সাহায্য করছে। কারন সে জানে আপনি বেশি সময় নেয়া মানে তার নিজেরই লাভবান হওয়া।
তথ্যটি আপনার কাছে কিছুটা হলেও শিক্ষনীয় অথবা উপকারী মনে হলে, নিচের ফেইসবুক, গুগলপ্লাস, টুইটার ইত্যাদি বাটনে ক্লিক করে শেয়ার দিয়ে আপনার বন্ধুদেরও জানিয়ে দিবেন আশা রাখি। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, সুন্দর থাকুন । আনন্দময় হোক আপনার প্রতিটি ক্ষণ। ধন্যবাদ।