Home / খেলাধুলা / ইতিহাস গড়ার স্বপ্ন নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশ
ইতিহাস গড়ার স্বপ্ন নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশ

ইতিহাস গড়ার স্বপ্ন নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশ

দল একটাই। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাচ্ছে তিন ভাগ হয়ে। কাল সকালে গেছে এক ভাগ, সন্ধ্যায় আরেক—আর আজ শেষ ভাগে পাকিস্তানফেরত তামিম ইকবালের একক যাত্রা। আলাদাভাবে গেলেও লক্ষ্যে তাঁরা একাট্টা। ইতিহাসের যতই চোখরাঙানি থাকুক, এবার নতুন ইতিহাস গড়তে উদ্গ্রীব মুশফিকুর রহিমের দল।

ইতিহাসের পাতাটি অবশ্য বিবর্ণ বড্ড। ২০০২ ও ২০০৮ সালে দুইবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করেছে বাংলাদেশ। চার টেস্টের প্রতিটিতে হেরেছে ইনিংসে। কিন্তু সেই বাংলাদেশের সঙ্গে এই বাংলাদেশের পার্থক্য তো বিস্তর।

এক বছরের মধ্যে ঘরে-বাইরে ইংল্যান্ড-শ্রীলঙ্কা-অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে। তাই তো রংধনুর দেশের উদ্দেশে যাত্রা করার আগে কাল অমন টগবগে আত্মবিশ্বাসী দেখায় টেস্ট অধিনায়ক মুশফিককে।

‘বাংলাদেশ দল কখনোই হারের জন্য খেলে না। অনেকে হয়তো মনে করতে পারেন দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে আমাদের কোনো সুযোগ নেই। আমি তাঁদের সঙ্গে কোনোভাবেই একমত নই। বিশ্বাস না করা শিখলে সাফল্য পাওয়া সম্ভব হয় না। আগে বিশ্বাস করতে হবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে আমাদের হারানো সম্ভব। আমাদের মধ্যে তিন বছর আগেও এই বিশ্বাসটা ছিল না’—কাল আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে অমনটা বলে যোগ করেন মুশফিক, ‘তিন ফরম্যাটেই আমাদের ভালো সুযোগ আছে। কিছুদিন যে ধরনের ক্রিকেট খেলেছি, সেই ধারা ধরে রাখতে পারলে যেকোনো কন্ডিশনেই আমাদের সুযোগ আছে। হয়তো আমাদের বোলিং আক্রমণ কিছুটা অনভিজ্ঞ। অনভিজ্ঞ হলেও তারা অনেক দক্ষ। পরিকল্পনা অনুযায়ী বোলিং করতে পারলে ওদের ব্যাটসম্যানদেরও অনেক ধুঁকতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, এই সিরিজটা আমাদের ক্রিকেটের জন্য বড় মাইলফলক হতে পারে। ’

এত বড় অর্জনের আত্মবিশ্বাসের ঝিলিক অধিনায়কের কণ্ঠে! দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে অতীতের ব্যর্থতাও টলাতে পারে না তাঁকে, ‘ওখানে আমাদের খুব একটা ভালো রেকর্ড নেই। আমাদের খুব কম খেলোয়াড়ই আছে দক্ষিণ আফ্রিকাতে খেলেছে। এটা এমন এক জায়গা, যেখানে সবগুলো দলকে পরীক্ষায় পড়তে হয়। তবে আমরা ভালো খেলার চেষ্টা করব।

ওখানে সর্বশেষ খেলা বাংলাদেশের চেয়ে আমরা এখন অনেক বেশি পরিণত। অনেক উন্নত। আমরা যদি স্কিলগুলো ভালো করে বাস্তবায়ন করতে পারি, আমার মনে হয় আমাদের ভালো সুযোগ রয়েছে। ’

উদাহরণ হিসেবে সর্বশেষ নিউজিল্যান্ড সিরিজের কথা মনে করিয়ে দেন মুশফিক, ‘নিউজিল্যান্ড সফরেও আমাদের রেকর্ড ভালো ছিল না। এর পরও এই বছর আমরা অন্য সময়ের চেয়ে ভালো খেলেছি। হয়তো দুটো ম্যাচেই হেরেছি; কিন্তু আগের চেয়ে ভালো করেছি। সেখানে ব্যক্তিগত অনেক পারফরম্যান্স ছিল। এবারও আমরা চেষ্টা করব, দল হিসেবে যেন দক্ষিণ আফ্রিকায় ভালো কিছু করতে পারি। ’

বন্ধুর এই অভিযানে দলের সেরা খেলোয়াড়টিকেই পাচ্ছে না বাংলাদেশ। বিশ্রামের কারণে টেস্ট সিরিজের দলে নেই সাকিব আল হাসান। অধিনায়ক হিসেবে মুশফিকের কণ্ঠে তাই বিমর্ষতা, ‘সাকিবের জায়গায় দুজন খেলোয়াড়কে খেলাতে হয়। চাইলেই বিকল্প কাউকে পাওয়া যায় না। তবে ও যদি ইনজুরিতে পড়ত, তাহলেও তো আমাদের খেলতে হতো। যদিও ওর মতো নাম্বার ওয়ান ক্রিকেটারকে মিস করা অধিনায়ক হিসেবে আমার জন্য খারাপ খবর। ’ পাশাপাশি এই পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে অন্যদের ভালো খেলার তাগিদ দিন অধিনায়ক, ‘সাকিবের জায়গায় যারা খেলবে তাদের জন্য এটি দারুণ সুযোগ। এই সুযোগটা তাদের নতুনভাবে নেওয়া উচিত। সাকিব থাকলে যেকোনো অধিনায়কের জন্যই প্লাস পয়েন্ট। এর পরও ও ছাড়া আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ জিতেছে। সাকিবকে অনেক মিস করব। আশা করি ও বিশ্রাম নেওয়ার পর সতেজ হয়ে ফিরতে পারবে। ’

সাকিব সতেজ হয়ে ফিরতে ফিরতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশ না ‘নিস্তেজ’ হয়ে যায়! এ আশঙ্কাটা কিন্তু রয়েছেই। বিশেষত সবুজ উইকেটে প্রোটিয়া ফাস্ট বোলারদের বিপক্ষে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। সে চ্যালেঞ্জ জয়ে নিজেদের ওপর বিশ্বাস থাকার কথা মিরপুরে কাল ছড়িয়ে দিয়ে যান মুশফিক, ‘ক্রিকেট খেলাটাই হচ্ছে চ্যালেঞ্জের।

নিউজিল্যান্ডে যাওয়ার আগে অনেকে ভেবেছিল, ওদের সুইংয়ের বিপক্ষে খেলার সামর্থ্য বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের নেই। কিন্তু আমরা সেখানে সফল হয়েছি। এবারও অবশ্যই আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে। তবে আট বছর আগে যে দলটি দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়েছিল, তার চেয়ে এই দলের ব্যাটসসম্যানরা অনেক বেশি পরিণত। আশা করি চ্যালেঞ্জটা ব্যাটসম্যানরা নিতে পারবে।’ চ্যালেঞ্জটা পুরো দল নিতে পারবে বলেই আশাবাদী অধিনায়ক, ‘এ বছর বড় দলগুলোর সঙ্গে আমাদের খেলা হয়েছে। সে হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকাও আমাদের জন্য বড় সুযোগ। দেশের বাইরে গিয়ে যদি দুটি ম্যাচ ভালো খেলতে পারি, তাহলে অন্য রকম একটা বার্তা হবে তা। আমার মনে হয় কাজটা কঠিন হলেও অবিশ্বাস্য কিছু না। ’

অবিশ্বাস্য হয়তো না। তবে সাকিব না থাকায় কাজটি কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে গেছে নিঃসন্দেহে। সে চ্যালেঞ্জও যদি জিতে যায় মুশফিকের দল, বিশ্বক্রিকেট তাহলে বাংলাদেশ ক্রিকেট-সামর্থ্যের কড়া এক বার্তাই পাবে!

নিউজ ডেস্ক
:আপডেট, বাংলাদেশ ০৬ : ০০ এএম, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রোববার
এইউ

Leave a Reply