কবিতা আমার সন্তানের মত, কবিতা আমার জান আমার প্রাণ। কবিতা আমার মেয়ের মত। কবিরা কবিতার উপমা এভাবেই দিয়ে থাকেন। কিন্তু কবি কি নিজকে নিজের ব্যক্তিস্বত্ত্বা নিয়ে লিখেন?
কবি আপন ঢঙে পাঠক মহলে কবিতা উপহার দেন। কেউ বাহ! বাহ! পান কেউ সম্মাননা।
প্রযুক্তির সহজলভ্যতার কারণে শুধু লাইক কমেন্টের আশায় বর্তমানে কাক বহুগুনে বেড়েছে কিন্তু কবির বড়ই অভাব।
আধুনিকধারায় যতজন কবির কবিতায় ফুটে ওঠে, প্রকৃতি, প্রেম ও প্রতিবাদ তাঁদের মাঝে কবি মানিক মুনতাসির অন্যতম। তাঁর প্রথম কথা, “প্রত্যেক পেশার মানুষের উচিত আগে একজন ভালো মানুষ হওয়া”। মানিক মুনতাসিরের বিশ্বাস ও ধ্যান “একজন ভালো মানুষ সর্বদাই সমাজের জন্য উপকারী”। আর একজন উপকারী মানুষ সর্বদাই স্বপ্নবাজই হবেন।
স্বপ্নবাজরা শুধু স্বপ্ন দেখেন না, তাঁদের কর্ম ও আদর্শে অনুপ্রানিত হয়ে স্বপ্ন দেখেন পাঠকমহল।
একজন স্বপ্নবাজ কবির লেখনীতে সমাজের নানান চিত্র ফুটে ওঠে। অতীত বর্তমান যাদের উৎস ভবিষ্যৎ মানেই ভালো মানুষ হওয়ার ভালো থাকার প্রেরণা। মানিক মুনতাসিরের ভাষায়-
রাজ পথ ডাকে তোমায় আঁক তোমার পদচিহ্ন/
পরাধীনতা আর অত্যাচারীর শৃঙ্খল কর ছিন্ন ভিন্ন
নেতৃত্ব হারা জাতি খুঁজে ফেরে তোমায় তোমায়/
তুমি জাগো, মানবতা জাগো- জেগে ওঠ মানবতা।(খবরের কবর)
বর্তমান বিশ্ব যখন প্রযুক্তির সহজ ব্যবহারে এগিয়ে যাচ্ছে তখন পিছিয়ে যাচ্ছে আমাদের বাংলাদেশীয় ঐতিহ্যময়ী সংষ্কৃতি। মোবাইলের একটি বোতাম চাপলেই প্রিয়জনের সব খবর চলে আসে। চিঠি পত্র আর হয়ে ওঠে না যোগাযোগের মাধ্যম। কবি তবুও ভোলেননি আমাদের সেই সংষ্কৃতি। আবেগী তালে লেখেন-
“খাতা কলমগুলো মাঝে মাঝেই আনমনা আর/
অভিমানী হয়ে ওঠে।/আমি চেষ্টা করি
কিন্তু পারি না।
তাই চিঠিও লিখি না/ আর চিঠিও লেখা হয় না।(আর চিঠি লেখা হয় না) (খবরের কবর)
মানুষ অর্থের মোহে ভুলে যায় পিছনের যত কথা। স্মৃতির ক্যানভাসে ঝুলন্ত ভালো লাগা ভালোবাসা অনেকেই মুচে ফেলেন। সুদিন এসে কষ্টের সোনালী অতীতকে ভুলিয়ে দেয়। কিন্তু মানিক মুনতাসির ভোলেননা তার কত স্মৃতি যা পিছনে রেখে আসছিলেন অজান্তেই। তাই তো বলে ওঠেন-
“পূর্বের কথা ও কাজগুলো চোখের সামনে ভেসে আসে।/
ভ্রমরকালো চোখগুলো নীলিমায় ভরে গেছে।/
শুধু বিশাল এই মনটি আজও বদলায়নি।(সময়ের ব্যবধান),( খবরের কবর)।
হারানো অতীত আর নিজের সোনাঝড়া শৈশব ফিরে পেতে কবি প্রতিনিয়ত অপেক্ষা করেন। বর্তমান প্রজন্ম আজ কোন দিকে যাচ্ছে কবি গভীর ভাবে চিন্তা করেন। তাঁরা কি আধো সৃজনশীল নাকি ধর্বংসের দিকে যাচ্ছে তাই ভাবেন। কবি বলেন-
“এ কেমন যুব সমাজ দেখছি আজ/
সৃষ্টি নয়, শুধু ধ্বংসের দিকে এগুচ্ছে।
মনের বিশুদ্ধতা নয়, শুধু পশুত্বই বেড়ে চলছে।
মত্ত সবাই সম্পদের পাহাড় গড়তে।/ মহত্ত্ব আর বীরত্ব নয়, নিষ্ঠুরতাই বাড়ছে বহুগুন।(ধ্বংসের শৃঙ্খল)-(খবরের কবর)
সত্য যখন মিথ্যার কাছে মাথা নত করতে চায়। সাংবাদিক কখন কবি বনে যায়। মনে জমানো যত ক্ষোভ যত প্রতিবাদ নীরবে জানান দেন পাঠক মহলে। মানিক বলেন,
“ডাস্টবিনে পড়ে থাকা নবজাতক আর/
ষোড়শী তরুণীর গলিত মরদেহ উদ্ধার।
বাইরের পাতায় জায়গা নেই।/
ভেতরের পাতায়, সিঙ্গেল কলাম।
তিন দিন পর
ময়না আর রাহেলার লাশের ময়নাতদন্ত।/
অবশেষে দাফন/চব্বিশ ঘন্টা পর/
অপমৃত্যুর মামলা/
সেটাও ছাপা হলো না/
বিশাল বাংলায়।
এই তো খবর
খবরের কবর।”(খবরের কবর)
স্বপ্নবাজ কবি মানিক মুনতাসির একজন অপ্রতিষ্ঠিত কবি। তাঁর লেখার উপজীব্যই হলো মানুষ, মনুষ্য প্রকৃতি সমাজ-সংষ্কৃতি আর প্রেম। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ- ‘খবরের কবর’ প্রকাশিত হয় বইমেলা ২০১৬ তে। অসাধারণ এই কাব্যগ্রন্থে ওঠে এসেছে সমাজের নানা অসঙ্গতি, প্রকৃতি, ক্ষোভ, দ্রোহ আর প্রেমের কথা।
তরুণ স্বপ্নবাজ কবি মানিক মুনতাসির পিছিয়ে পড়া জনপদ ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ থানার সৈয়দপুর গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। কবির মা বলেন, প্রচন্ড রোদ ও গরমের দিনে কবির জন্ম। বাংলা মাস ফাল্গুনের শেষ। যা ১২ ই এপ্রিল ১৯৮০। প্রত্যন্ত অঞ্চল ঠাকুরগাঁও গ্রামে কবির বেড়ে ওঠা।
প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখার ইতি টানেন তিতুমীর কলেজ (ঢাকা) থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্স ও মাস্টর্স সম্পন্ন করে। কর্মজীবনে একজন সাংবাদিক। বহুল প্রচারিত ‘দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন’ পত্রিকায় অর্থনীতি বিষয়ে সুনামের সাথে রিপোর্টং করছেন। সম্মাননায় পেয়েছেন, “পেডরোলো সেরা কৃষি লেখক-২০১৪”, পুরস্কার। সহধর্মীনি শিক্ষক হাসিনা মুনতাসির মুন্নী ও একমাত্র পুত্র সন্তান তাজওয়ার মুনতাসির কল্পকে নিয়েই কবির যাপিত জীবন। ১২ এপ্রিল কবির জন্মদিন। তাঁর প্রতি রইলো শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা। অনেক বছর বেঁচে থাকুক এটাই কামনা।
http://ch ]হাসান সাইদুল [/author]
||আপডেট: ১১:০৩ অপরাহ্ন, ১১ এপ্রিল ২০১৬, সোমবার
চাঁদপুর টাইমস /এমআরআর