Sunday, May 10, 2015 11:02:15 AM
প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, স্ত্রী ডিভোর্স দিতে পারে কি?
প্রথম উত্তরটি হচ্ছে, “তালাকের” (ডিভোর্স) ক্ষেত্রে স্বামী এবং স্ত্রী’র ক্ষমতা এক নয়। স্বামী যখন-তখন কোনরূপ কারণ ছাড়াই বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে, কিন্তু মুসলিম আইনে স্ত্রী’র ক্ষেত্রে এই ক্ষমতা সীমিত। তবে বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে স্বামীর একচ্ছত্র ক্ষমতা থাকেলেও স্বামীকে কিছু আইন মানতে হয়।
দ্বিতীয় উত্তরটি হচ্ছে, স্ত্রী ও “তালাক” দিতে পারে, তবে নিম্মোক্ত পদ্ধতিতে, ক্ষমতাবলে এবং কারণে। ক্ষমতাবলে তালাক (তালাক-ই-তৌফিজের মাধ্যমে)
আগেই বলা হয়েছে মুসলিম আইনে তালাকের বিষয়ে স্ত্রীর ক্ষমতা সীমিত। স্ত্রী’কে তালাক প্রদানের ক্ষমতা দেওয়া হলে তবেই একজন স্ত্রী তার স্বামীকে তালাক দিতে পারেন। স্ত্রীকে এরূপ ক্ষমতা অর্পনকে “তালাক-ই-তৌফিজ” বলে।
তালাক-ই-তৌফিজ স্ত্রীর একক ক্ষমতা নয়।
নিকাহমার ১৮ নং ঘরে “স্বামী স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা অর্পণ করছে কি না? করে থাকলে কী শর্তে?” এই প্রশ্নটি থাকে। এখানে স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা দেয়, তবেই স্ত্রীও স্বামীর মতো তালাক দিতে পারে।
সেক্ষেত্রে স্ত্রীকেও স্বামীর মতো ১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিষ্টেশন আইন ও ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবাবিক আইন অধ্যাদেশ অনুযায়ী এখতিয়াভূক্ত বা সংশ্লিষ্ট নিকাহ্ রেজিস্টার বা কাজীর মাধ্যমে তালাক দিতে হবে এবং তালাকের নোটিশ স্বামী’কে ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পৌরসভা চেয়ারম্যান/সিটি কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানকে পাঠাতে হবে।
খুলার মাধ্যমে তালাক/বিচ্ছেদ: স্ত্রী আরেকটি উপায়ে স্বামীকে তালাক/বিচ্ছেদ দিতে পারে। এটি হচ্ছে খুলা, যা চুক্তিভিত্তিক বিচ্ছেদ হিসেবেও পরিচিত। অর্থাৎ যখন কোন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা হচ্ছে না বা স্ত্রী স্বামীপ উপর বিরূপ মনোভাব পোষণ করেন তখন স্ত্রী চাইলে প্রতিাদনের (অর্থ বা সম্পত্তি) বিনিময়ে স্বামীকে বিচ্ছেদ ঘটাতে রাজী করাতে পারে। এই ধরনে বিচ্ছেদকে খুলা বলে। এক্ষেত্রেও স্ত্রী’কে চেয়ারম্যানের কাছে নোটিশ পাঠাতে হবে৷ খুলা তালাকের ক্ষেত্রে স্ত্রীদের দেনমোহরের বিনিময়ে স্বামীকে রাজী করানোর বিষয়টি বেশী প্রাধান্য পায়। স্ত্রীর এরূপ বিচ্ছেদের প্রস্তাবটি স্বামী কর্তৃক অগ্রাহ্য হলে স্ত্রী আদালাতের শরনাপন্ন হতে পারেন।
মোবারত এর মাধ্যমে তালাক/বিচ্ছেদ: মোবারাতও খুলার মত এক ধরণের চুক্তি ভিত্তিক বিবাহ বিচ্ছেদ। যখন স্বামী এবং স্ত্রী একে অন্যের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করেন তখন তারা মোবারতের মাধ্যমে বিচ্ছেদ ঘটাতে পারেন। খুলা এবং মোবারত উভয়ই চুক্তিভিত্তিক বিচ্ছেদ হলেও উভয়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। খুলা হচ্ছে এককভাবে বিরূপ মনোভাবসম্পন্ন স্ত্রীর পক্ষ থেকে প্রতিদানে বিনিময়ে বিচ্ছেদ ঘটানো। আর মোবারত হচ্ছে, উভয়ে যখন উভয়ের প্রতি বিরূপ মনোভাব সম্পন্ন হয়, তখন উভয়ের সম্মতিতে বিচ্ছেদ। মোবারতের ক্ষেত্রেও চেয়ারম্যানের কাছে নোটিশ পাঠাতে হবে। এক্ষেত্রে যিনি বিচ্ছেদের প্রস্তাব দিবেন নোটিশ পাঠানোর দায়িত্ব তার।
আদালতের মাধ্যমে বিচ্ছেদ: উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো ব্যতিত নিম্মোক্ত ৯টি ক্ষেত্রের যে কোন একটি বা একাধিক কারণে একজন স্ত্রী বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য আদালতের শরনাপন্ন হতে পারেন। ১৯৩৯ সালের বিবাহ বিচ্ছেদ আইনে স্ত্রীকে এরূপ ক্ষমতা বা অধিকার দেওয়া হয়েছে। কারণগুলো হচ্ছে,
(১) স্বামী ৪ বছরের অধিক সময় নিরুদ্দেশ থাকলে;
(২) দুই বছর যাবত স্ত্রীর খোরপোষ দিতে স্বামী ব্যর্থ হলে;
(৩) স্বামী ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান লঙঘন করে অতিরিক্ত স্ত্রী গ্রহণ করলে;
(৪) স্বামী সাত বছর বা তার বেশি সময় কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে;
(৫) কোনো যুক্তি-সঙ্গত কারণ ছাড়া তিন বছর ধরে স্বামী তাঁর দাম্পত্য দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে;
(৬) স্বামী বিয়ের সময় পুরুষত্বহীন থাকলে এবং তা মামলা দায়ের করার সময় পর্যন্ত বজায় থাকলে;
(৭) স্বামী দুই বছর ধরে পাগল থাকলে অথবা মারাত্বক যৌনব্যধিতে আক্রান্ত থাকলে;
(৮) নাবালিকা অবস্থায় বিয়ে হয়ে থাকলে অথবা সাবালকত্ব লাভের পর অর্থাৎ ১৮ বছর পূর্ণ হবার পর স্ত্রীর বিয়ে অস্বীকার করলে (কিন্তু এক্ষেত্রে স্বামীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপিত হয়ে থাকলে এরকম মামলা দায়ের করা যাবে না)
(৯) নিম্নলিখিত যে কোনো অর্থে স্ত্রীর সাথে স্বামী নিষ্ঠুর আচরণ করলে:
(ক) যদি স্ত্রীকে শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করা;
(খ) কুখ্যাত মহিলাদের (women of ill reputation) সঙ্গে স্বামীর মেলামেশা করা কিংবা নৈতিকতা-বর্জিত জীবন যাপন করা।
(গ) নৈতিকতা-বর্জিত জীবন যাপনের জন্য স্ত্রীকে বাধ্য করা;
(ঘ) স্ত্রীর সম্পত্তি হস্তান্তর করা, কিংবা স্ত্রীকে তার সম্পত্তির আইনসম্মত অধিকার প্রয়োগে বাধা দেওয়া;
(ঙ) স্ত্রীকে তার ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালনে বাধা দেওয়া;
(চ ) যদি স্বামীর একাধিক স্ত্রী থাকে, তবে পবিত্র কোরানের নির্দেশে তাদের সাথে সমান ব্যবহার না করা;
লেখক: এডভোকেট জয়নাল আবেদীন চৌধুরী রিগ্যান
লেখাটি কপিরাইট সংরক্ষিত, লেখকের অনুমতি ব্যতিরেকে কপি করা যাবে না।
চাঁদপুর টাইমস : এমআরআর/2015
নিয়মিত ফেসবুকে নিউজ পেতে লাইক দিন : www.facebook.com/chandpurtimesonline/likes
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur