সত্যিই হৃদয়বিদারক। চোখের পানি ধরে রাখা যায় না। এ রকম ঘটনা পৃথিবীতে খুব কমই ঘটে। যা মানুষের হৃদয়কে নাড়া দিয়ে যায়।
বলছি বৃহস্পতিবার মিনায় পাথর নিক্ষেপের সময় পদদলিত হয়ে মৃত এক বাংলাদেশী হাজির কথা। মৃত ওই হাজির স্বামী মোহাম্মাদ বেলাল মিনার আল-জিসর হাসপাতালের বারান্দায় বসে আছেন শেষবারের মতো তার স্ত্রীর মুখখানি দেখার জন্য।
মোহাম্মাদ বেলাল বিশ্বাসই করতে পারছেন না যে তিনি তার স্ত্রীকে এতো তাড়াতাড়ি হারিয়েছেন। বিশেষ করে যেখানে ২০ বছর পর তাদের দেখা হয়েছিল এই হজে।
দু’চোখ দিয়ে ঝর ঝর করে পানি পড়ছে, কণ্ঠ জড়িয়ে আসছে। তারপরও বাংলাদেশী অন্য হাজিদের বেলাল বলছেন, কেউ তার স্ত্রীকে দেখেছেন কিনা। যদিও তিনি জানেন যে, তার স্ত্রী চলে গেছেন না ফেরার দেশে।
‘সে আমার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছে, আর কোনো দিন আমাকে ছেড়ে যাবে না, সব সময় পাশে থাকবে। কিন্তু সে চিরদিনের জন্য চলে গেল।’ আল-হায়াত পত্রিকাকে বলছিলেন বেলাল।
প্রসঙ্গত, ২৫ বছর আগে সৌদি আরব যান বেলাল। সেখানকার ধাহারন আল-জানুব শহরের একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করেন তিনি। বেলাল বলেন, ‘আমি তার (স্ত্রীর) হজের জন্য ২০ বছর ধরে টাকা জমাচ্ছি। দীর্ঘদিন আমি তার কাছ থেকে দূরে রয়েছি। অবশেষে সে আসল, কিন্তু আমি খুব অল্প সময়ের মধ্যে তাকে হারালাম।’
বেলালের বন্ধু আব্দুল আলিম কুরআনের আয়াত তিলওয়াত করে তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। যখনই তিনি কান্না থামান তখনই অন্যদের জিজ্ঞাসা করেন কেউ তার স্ত্রীকে দেখেছেন। এর পরপরই তিনি বুঝতে পারেন যে, তার স্ত্রী মারা গেছেন এবং আবারও কান্না শুরু করেন।
তিনি বলেন, ‘হজের কার্যক্রম শেষ করার আগেই আমার স্ত্রী মারা গেল। আমার চোখের সামনে সে মারা গেল। সে আর কখনও তার তিন সন্তানকে দেখতে আসবে না।’ তার স্ত্রী হজে আসতে পেরে খুবই খুশি হয়েছিলেন। বলছিলেন মোহাম্মাদ বেলাল।
তিনি আরও বলেন, আমার স্ত্রী তিন সন্তানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিলেন। মনে হয়, সে (স্ত্রী) বুঝতে পারছিল সে আর ফিরবে না।
সকাল সাড়ে ৭টার (বৃহস্পতিবার) দিকে তারা স্বামী-স্ত্রী একই সঙ্গে জামারতে পাথর নিক্ষেপ করে ফিরছিলেন, বলেন বেলাল। তিনি বলেন, ‘আমরা ২০৪ নম্বর রাস্তায় প্রবেশ করেছি, তখন জনস্রোত জামারতের দিকে যাচ্ছে। আমরা সেখান থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করি, কিন্তু আমরা দুইজনই নিচে পড়ে যাই।’ ‘আরও অনেক হাজি আমাদের ওপর পড়ে যায়। কিন্তু আমি উঠতে সক্ষম হই। উত্তপ্ত মাটিতে আমার মুখ-হাত পুড়ে যায়’, বলতে থাকেন বেলাল।
তিনি বলেন, ‘আমি চিৎকার করে কাঁদছি আমার স্ত্রীকে বাঁচান। কিন্তু কেউ আমার কথা শুনছে না, প্রত্যেকে নিজেকে বাঁচানো নিয়ে ব্যস্ত। আমি আমার স্ত্রীকে টেনে তোলার চেষ্টা করি, কিন্তু লাশের স্তুপ থেকে তাকে তুলে আনতে পারিনি। আমি দেখেছি, তার বিস্তৃত চোখ দুটো আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে আর তার আঙ্গুল উপরের দিকে উঠানো। আমাকে কিংবা সন্তানকে বিদায় জানানোর আগেই সে মারা গেল।’
‘এখন একটাই সান্ত্বনা যে আমার স্ত্রী বিশ্বের সবচেয়ে পবিত্র স্থানে সমাহিত হবে এবং সে তার সৃষ্টিকর্তার (আল্লাহ) কাছে একজন শহীদ হিসেবে সাক্ষাত করবেন।’— যোগ করেন বিলাল।
|| আপডেট: ০৫:১৫ অপরাহ্ন, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫, শনিবার,চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/ এমআরআর/২০১৫