প্রায় অর্ধকোটি টাকা খরচ করে একটি স্কুল ভবন নির্মাণ করা হলেও তাতে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়নি। প্রেষণে একজন শিক্ষক দেয়া হলে তিনি’ই এখন ‘সবেধন নীলমনি’র মতো একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরো দায়ভার কাঁধে তুলে নিয়েছেন। এপ্রিল মাসে চালু করা ঐ বিদ্যালয়ে এখন ৪৩ জন শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে।
মতলব উত্তর উপজেলার লামচরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে ‘বিদ্যালয়বিহীন এলাকায় ১৫০০ প্রাথমিক বিদ্যালয় শীর্ষক উন্নয়ন প্রকল্প’-এর মাধ্যমে লামচরি গ্রামে নির্মাণ করা হয়। বিধি অনুযায়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও কোন শিক্ষকের পদ সৃষ্টি বা নিয়োগ করা হয়নি। নান্দুরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রেষণে সহকারী শিক্ষক মো. শাহআলমকে দেয়া হয় এ বছরের ৩০ মার্চ।
শিক্ষার্থী অনুযায়ী বিদ্যালয়ে নিয়মিত শিক্ষক থাকার নিয়ম থাকলেও বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে একজন শিক্ষক দায়িত্ব পালন করছেন। তাও আবার ধার করা একজন শিক্ষক দিয়ে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
ওই বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তৃতীয় শ্রেণিতে ৩ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ক্লাশ করাচ্ছেন শিক্ষক শাহআলম। তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া জানান, সব ক্লাশ একজন স্যারই করান। শিক্ষার্থী রিয়া জানান, স্যারে অফিসে গেলে স্কুলে আমরা নিজেরাই পড়ি। শিক্ষার্থী ইয়াছমিন জানান, স্কুলে সামনে মাঠ নেই। মাঠ ভরাট না থাকায় আমরা খেলাধুলা করতে পারছি না।
এ বছরের এপ্রিলে বিদ্যালয়টি চালু হয়। বছরের শুরুতে চালু হলে শিক্ষার্থী হতো অনেক। এখন শিশু শ্রেণিতে ১২ জন (৮ জন ছাত্র ও ৪ জন ছাত্রী), প্রথম শ্রেণিতে ১৭ জন (১৪ জন ছাত্র ও ৩ জন ছাত্রী), দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৫ জন (২ জন ছাত্র ও ৩ জন ছাত্রী) এবং ৩য় শ্রেণিতে ৯ জন (৪ জন ছাত্র ও ৫ জন ছাত্রী) ভর্তি হয়েছে। ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণিতে আগামি বছর ভর্তি নেয়া হবে।
শিক্ষক মো. শাহআলম চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, আমি একাই সব দায়িত্ব পালন করছি। বিদ্যালয়টি বছরের এপ্রিলে চালু হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রী কম। আগামি বছর প্রচুর শিক্ষার্থী ভর্তি হবে আশা করছি।
বিদ্যালয়ের সভাপতি আবদুস শুক্কুর মাস্টার চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করে শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করতে দপ্তরে কয়েকবার জানিয়েছি।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ কবির হোসেন শিক্ষক সংকটের কথা স্বীকার করে চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, দ্রুত ওই স্কুলের শিক্ষক সংকটের সমাধান করা হবে। জানুয়ারি থেকে বিদ্যালয়টি পুরোপরি চালুর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শিক্ষক সংকটে ৪৩ জন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকিত বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি, অভিভাবক ও এলাকাবাসী। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। একাধিকবার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হলেও কোনো সুরাহা হয়নি।
বিশেষ প্রতিনিধি: ।। আপডেট ০১:২০ পিএম ০৭ নভেম্বব, ২০১৫ শনিবার
ডিএইচ