চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক। আপডেট: ০২:৩১ পূর্বাহ্ন, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫, বুধবার
নগরীর ডবলমুরিং থানার মাদারবাড়িতে ১৪ বছরের কিশোরি ইশরাত জাহানের বিয়ের আয়োজন করেছিল তার পরিবার। মাদারবাড়িতে সিটি করপোরেশনের একটি স্কুলে নবম শ্রেণীতে পড়ে ইশরাত। হঠাৎ বিয়ের সিদ্ধান্তে তার লেখাপড়ার স্বপ্ন ধুল্যিসাৎ হতে বসেছিল। সোমবার বিকেলে পশ্চিম মাদারবাড়ির যুগীচাঁদ মসজিদে ইশরাতের আকদ হবার কথা ছিল।
কিন্তু এর আগেই বাল্যবিয়ের এ আয়োজনের খবর পৌঁছে যায় নারীর অধিকার আদায়ে সোচ্চার সংগঠন ‘ফাইট ফর উইমেন রাইটস’র কাছে। সংগঠনটির চেয়ারপার্সন ও নারীনেত্রী অ্যাডভোকেট রেহেনা বেগম রানু এ বিয়ে বন্ধের তোড়জোড় শুরু করে দেন। তিনি দ্বারস্থ হন থানা পুলিশের কাছে। শেষ পর্যন্ত সোমবার গভীর রাতে পুলিশের মাধ্যমে ইশরাতের বাবার কাছ থেকে বিয়ে দেবেনা মর্মে লিখিত প্রতিশ্রুতি আদায় করেই নেন অ্যাডভোকেট রানু।
ইশরাত জাহান নগরীর পূর্ব মাদারবাড়ি দুই নম্বর গলির অলি মিয়া কন্ট্রাক্টর বাড়ির রশিদ বিল্ডিংয়ের বাসিন্দা স্থানীয় প্রভাবশালী ইয়াছিন রেজার মেয়ে।
ফাইট ফর উইমেন রাইটস’র চেয়ারপার্সন অ্যাডভোকেট রেহেনা বেগম রানু বলেন, ‘আইন অনুযায়ী বিয়ের জন্য মেয়ের বয়স অবশ্যই ১৮ বছর হতে হবে। কিন্তু ইশরাতকে ১৪ বছর বয়সেই তার পরিবার বিয়ে দিচ্ছিল। ১৪ বছর বয়স লেখাপড়া করার বয়স, এ বয়সে কোন মেয়ের সমাজ-সংসার সম্পর্কে প্রয়োজনীয় বোধটুকুও সৃষ্টি হয়না। কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা থেকে তাকে বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়ে দেয়া হচ্ছিল।’
অ্যাডভোকেট রানু জানান, ইশরাতের সহপাঠীদের সূত্রে তার বিয়ের আয়োজনের বিষয়টি জানতে পারেন তিনি। কিন্তু প্রথমে তাকে ঠিকানা বলা হয়েছিল সদরঘাট থানায়। রানু প্রথমে সোমবার দুপুরে সদরঘাট থানায় এ বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পাশাপাশি ইশরাতের পরিবারের কাছেও বিভিন্ন মারফতে আকদের আয়োজন বন্ধ করার জন্য বার্তা পাঠান।
জিডি দায়েরের পর সদরঘাট থানার সেকেন্ড অফিসার ঠিকানা অনুযায়ী মেয়ের বাড়িতে যান। কিন্তু তিনি জানতে পারেন মেয়ের বাসা পড়েছে ডবলমুরিং থানা এলাকায়।
বিকেলের দিকে অ্যাডভোকেট রানু দ্রুত ডবলমুরিং থানায় গিয়ে আরেকটি জিডি করেন। সঙ্গে সঙ্গে ডবলমুরিং থানার এস আই আসিফ তার টিম নিয়ে যূগী চাঁদ মসজিদে যান। মসজিদে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, অ্যাডভোকেট রানুর তোড়জোড়ের কারণে ইশরাতের আকদের আয়োজন ভন্ডুল হয়ে গেছে।
পরে গভীর রাতে এস আই আসিফ অ্যাডভোকেট রেহেনা বেগম রানুকে নিয়ে যান ইশরাতের বাসায়। সেখানে ইশরাতের বাবা লিখিত মুচলেকা দেন, বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে তিনি মেয়ের বিয়ের আয়োজন করবেন না।
অ্যাডভোকেট রানু বলেন, ‘আমার ভাল লাগছে, আমি এই সমাজের একটি মেয়েকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের হাত থেকে রক্ষা করতে পেরেছি। এই মেয়ে হয়ত লেখাপড়া শিখে অনেক বড় মানুষ হবে। দেশ, জাতি, সমাজের অনেক উপকারে আসবে। কিন্তু অপরিণত বয়সে বিয়ে দিয়ে তার স্বপ্নকে হত্যা করা হচ্ছিল, তাকে নিশ্চিত ঝুঁকির দিকেও ফেলে দেয়া হচ্ছিল। ’
বাল্যবিয়ের মত অভিশাপ থেকে দেশকে বাঁচাতে সবাইকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান অ্যাডভোকেট রেহেনা বেগম রানু।
চাঁদপুর টাইমস- ডিএইচ/২০১৫।