হাজীগঞ্জ

হাজীগঞ্জের দেশগাঁও ‘ভূমিদস্যুর’ কবলে প্রতিবন্ধীসহ ক’টি পরিবার

চাঁদপুর হাজীগঞ্জ উপজেলার গন্ধব্যপুর ইউনিয়নের দেশগাঁও গ্রামে ‘ভূমিদস্যুর’ কবলে প্রতিবন্ধীসহ ক’টি পরিবার। তথ্য ও অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে গেলে উঠে আসে একজন নয় ৪/৫টি পরিবারের জিম্মি দশার করুণ পরিস্থিতি।

জানা যায়, দেশগাঁও গ্রামের মৃত. আব্দুল জলিল মিয়ার ছেলে আব্দুল হামিদ, তার স্ত্রী সুফিয়া বেগম, তাদের ছেলে সুমনসহ তারা একটি সংঘবদ্ধ চক্র। তাদের বিরুদ্ধে চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপারের কাছে পৃথক পৃথক চারটি অভিযোগ জমা পড়েছে।

এর মধ্যে গত ১৯ অক্টোবর তারিখে পুলিশ সুপার বরাবর- মৃত আলী আশ্রাফ মিয়ার মেয়ে মরিয়ম বেগম বাদী হয়ে সুফিয়া বেগম, স্বামী আব্দুল হামিদকে বিবাদী করে অভিযোগ দাখিল করেন।

অভিযোগে জানা যায়, বিবাদীরা তার আপন বোন ও বোন জামাতা। ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে বাবার মৃত্যুর পর অভিযুক্তরা মরিয়ম ও তার মা’কে বাড়ি থেকে বিতাড়িত করে দেয় এবং এককভাবে পুরো সম্পদ ভোগ দখল করে।

একপর্যায়ে স্থানীয় এলাকাবাসীর চাপের মূখে পড়ে মরিয়মকে দেখা-শুনার কথা বলে তার কাছ থেকে ৮ শতাংশ সম্পত্তি দানপত্রের কথা বলে সাড়ে ৬২ শতাংশ সম্পত্তি লিখে নেয়। সম্পত্তি লিখে নেয়ার পর মরিয়মকে এড়িয়ে যায়। বিভিন্ন সময় মারধরের হুমকি প্রদান করারও অভিযোগ করেছেন মরিয়ম।

মরিয়ম বেগম জানান, ‘আমার কাছ থেকে যে সাড়ে-৬২’ শতাংশ সম্পত্তি লিখে নিয়েছে তা আমার অজান্তেই করা হয়েছে। আমার চাচা/জেঠারা পরবর্তিতে আমাকে জানালে আমি হতাশ হয়ে যায়। আমিতো এত সম্পত্তির মালিক নই। তারা আমার কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে উক্ত সম্পত্তি লিখে নেয়। আমি অসহায়, আমি এর সুষ্ঠ সমাধান চাই।’

অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য আব্দুল মতিন অভিযোগ করেন, ‘১৯৭০ সালে ২৬৬নং কাশিমপুর মৌজায় ৪৪২ দাগে আমার পৈত্রিক ২৪ শতাংশ সম্পত্তি বিক্রয় করে ২৬৪নং দেশগাঁও মৌজায় ১০৮৭নং দাগে ও অন্যান্য দাগে সম্পত্তি খরিদ করে। কিন্তু আমার পিতার নামে ১০৮৭নং দাগে উক্ত পরিমাণ সম্পত্তি সাব-রেজিস্ট্রি করে দেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু তারা তাও দেয়নি।’

চাচাতো ভাই প্রতিবন্ধী মাসুদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে একই তারিখে চাঁদপুর পুলিশ সুপারের নিকট অভিযোগ করেন আবুল কালাম।

তার অভিযোগে দেখা যায়, ‘প্রতিবন্ধী মাসুদের ৫ শতাংশ সম্পত্তি জোরপূর্বক বিবাদী আব্দুল হামিদ, সুফিয়া বেগম, সুমনরা দখল করে নেয়। প্রতিবন্ধীর পক্ষ হয়ে কেউ কথা বললে তাদের উপর বিভিন্ন সময় হামলা চালিয়েছে।

একই অভিযোগ দেশগাঁও গ্রামের মৃত. শামছুল হকের ছেলে ফজলুল হকের। তার অভিযোগ ২৬৪নং দেশগাঁও মৌজায় ১০৮৭নং দাগে ২৬৭৩নং দলিল মূলে ৫ শতাংশ সম্পত্তির মালিক ও দখলদার ছিলেন। কিন্তু ওই সম্পদ সুফিয়া বেগমরা জোরপূর্বক দখল করেন এবং কাগজপত্রে মালিক হয়েও নিজের সম্পত্তিতে জেতে পারছেন না ফজলুল হক।

এব্যাপারে দেশগাঁও আটিয়া বাড়ির বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী আলী আহমেদ মাস্টার বলেন, ‘সুফিয়া বেগম আমার ভাইয়ের মেয়ে। তারা বিভিন্ন সময় যে ১৫ শতাংশ সম্পত্তি দাবি করে আসছে, তারা সেই ১৫ শতাংশ সম্পত্তির মধ্যেও ১০ শতাংশ সম্পত্তি একজনের কাছে বিক্রি করেন। বাকি ৫ শতাংশ সম্পত্তি বিক্রয় করার কথা বলে আমার ছেলের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। এখন তারা তালবাহানা করছে। সুফিয়া বেগম যে বাড়ীতে বসবাস করেন, সেই বাড়ির অধিকাংশ সম্পত্তি আমাদের। সুফিয়া বেগম আমাদের সম্পত্তি জবর দখল করে রেখেছে। আমরা মান সম্মানের ভয়ে উক্ত সম্পত্তিতে যাই না। কারন সুফিয়া বেগম গংরা এ পর্যন্ত অনেকের গায়ে হাত তুলেছেন।’

বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ১০নং গন্ধব্যপুর ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন বাচ্চু বলেন, ‘আমাকে থানা থেকে মৌখিকভাবে তাদের বিষয়টি সুরাহার জন্য বললে আমি আলী আহমেদ গং ও সুফিয়া বেগম গংদের নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেয়া হলে আলী আহমেদ গংরা ডাকে সাড়া দেয়। কিন্তু অভিযুক্ত সুফিয়া বেগম গংরা বিভিন্ন অজুহাত ও শর্ত দিয়ে বৈঠকে হাজির হয়নি।’

এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ শাহ্ আলম (এল.এল.বি) বলেন,‘পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশে আমি একজন অফিসারকে তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেই এবং স্থানীয়ভাবে বিষয়টি সুরাহার জন্য ইউপি চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেয়া হয়। ইউপি চেয়ারম্যান স্থানীয়ভাবে বিষয়টির সুরাহার সিদ্ধান্ত নিলে আমরা পুলিশ সুপার মহোদয়ের সাথে আলাপ করে সমাধানের চেষ্টা করবো।’

About The Author

প্রতিবেদক- জহিরুল ইসলাম জয়, হাজীগঞ্জ
Share