ইয়েমেনের সাধারণ মানুষের খাবারের চাহিদা মেটাতে দেশটির হুদাদিয়াহ বন্দর দিয়ে ৯৫ শতাংশ খাবার আমদানি হতো। সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোটের বিমান হামলায় বন্দরটি ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে অনাহারে মারা যাচ্ছে দেশটির শিশুরা। জাতিসংঘ বলছে, বন্দরটি যদি ব্যবহারের উপযোগী না থাকে, তবে শিশুসহ লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটবে।
ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধের মধ্যেই জন্ম তিন বছরের শিশু আলার। অপুষ্টিতে ভুগতে ভুগতে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত আলা অবিরত বমি করতে থাকে। তাকে হুদাদিয়াহর প্রধান হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়।
বিবিসির দলটি হুদাদিয়াহর প্রধান হাসপাতালে শিশুটির ভিডিও করার ২৪ ঘণ্টা পর সে মারা যায়। ইয়েমেনে শিশুদের কী পরিণতি হচ্ছে, তা বিশ্বকে জানাতে আলার পরিবার বিবিসিকে সঙ্গে শেষ মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করার অনুরোধ জানায়।
ওই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বলছেন, পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে যাচ্ছে। এক চিকিৎসক বলেন, ‘আমরা ক্রমাগত অপুষ্টিতে ভোগা শিশু দেখতে শুরু করেছি। হাসপাতালে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুরা কেবল দরিদ্র পরিবার থেকেই আসছে না; মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুদেরও আমরা চরম অপুষ্টিতে ভুগতে দেখছি।’
ইয়েমেনের বেশির ভাগ খাদ্য আমদানি হতো হুদাদিয়াহ বন্দর দিয়ে। সৌদি আরব ও তাদের মিত্রদের বিমান হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বন্দরটি দিয়ে আমদানি অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বিসলে বলেন, যুদ্ধের অস্ত্র খাবার হওয়া উচিত নয়। খাবার হলো শান্তির অস্ত্র। তিনি বলেন, খাবারের অভাবে ইয়েমেনের লাখো শিশুর মৃত্যু ঘটবে।
ডেভিড বিসলে বলেন, ‘হুদাদিয়াহ বন্দরে সৌদি আরব ও তাদের মিত্ররা বোমা বর্ষণ করেছে। আমরা তাদের বলেছিলাম, দয়া করে এখানে আর বোমা হামলা করবেন না। বন্দরটি ছেড়ে দিন। কারণ, এই বন্দর দিয়ে ৯৫ শতাংশ খাবার আমদানি হয়ে থাকে, যা দিয়ে সাধারণ মানুষের খাবারের চাহিদা মেটানো হয়। আমরা তাদের আরও বলেছিলাম, বোমা বর্ষণের কারণে বন্দরটি যদি ব্যবহারের উপযোগী না থাকে, তবে আক্ষরিক অর্থে লাখো শিশুসহ কোটি খানেক লোক না খেয়ে মারা যাবে।’
এদিকে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুরা হাসপাতালে গিয়েও বাঁচতে পারছে না। কেননা, হাসপাতালে বিদ্যুৎ নেই। অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি সব ধরনের চিকিৎসা যন্ত্রপাতি বন্ধ রয়েছে।
ইয়েমেনে ২০১৫ সালের মার্চে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধে এ পর্যন্ত আট হাজারের বেশি লোক নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। শিয়া হুতি বিদ্রোহীরা রাজধানী সানা দখল করে প্রেসিডেন্ট আবেদ রাব্বো মানসুর হাদিকে ক্ষমতাচ্যুত করে। সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন আরব দেশগুলোর জোট সুন্নি শাসক হাদির পক্ষ নিয়ে হুতিদের বিরুদ্ধে লড়ছে। ইরান হুতিদের সমর্থন দিচ্ছে।
গৃহযুদ্ধে ইয়েমেনের স্বাস্থ্য, পানি ও পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইতিমধ্যেই ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, কলেরায় এ পর্যন্ত ১ হাজার ৩০০ জন প্রাণ হারিয়েছে। এর এক-চতুর্থাংশই শিশু। দেশটিতে কলেরায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
পানিবাহিত এ রোগ সহজে নিরাময়যোগ্য হলেও যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে সবার জন্য চিকিৎসা নিশ্চিত করা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। চলতি বছর এপ্রিলে ইয়েমেনে কলেরাকে মহামারি ঘোষণা করা হয়। কলেরার পাশাপাশি দুর্ভিক্ষের মতো মানবসৃষ্ট বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে ইয়েমেন।
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ ২ : ২০ পিএম, ২৩ আগস্ট ২০১৭, বুধবার
ডিএইচ