Home / ইসলাম / কেউ মারা গেলে চুলা জ্বালানো নিষেধ, কি বলে ইসলাম ?
Kobor Jiarot

কেউ মারা গেলে চুলা জ্বালানো নিষেধ, কি বলে ইসলাম ?

আল্লাহর মনোনিত ও সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলাম। শান্তির ধর্ম ইসলাম জীবনকে সহজ করেছে, দিয়েছে সবার প্রাপ্য মর্যাদা।তবে ইসলাম ধর্মের মানুষের মাঝেও ছড়িয়ে আছে কুসংস্কার সহ নানান আজগুবি বিষয়, যেগুলো কখনো ইসলাম সমর্থন করেনা। তেমনি একটি কুসংস্কার হল, মানুষ মারা গেলে পাঁচ দিন বা তিন দিন কি চুলা জ্বালানো যায় না।

এমন একটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।

প্রশ্ন : মানুষ মারা গেলে পাঁচ দিন বা তিন দিন কি ওই বাড়িতে চুলা ধরানো যায় না? বলা হয় এখানে নাকি আত্মারা আসে।

উত্তর : না, এগুলো কুসংস্কার। তিন দিন বা পাঁচ দিন আগুন জ্বালানো যাবে না, চুলা ধরানো যাবে না, আত্মার আগমন হবে ইত্যাদি ইত্যাদি এগুলো আমরা ভিন্ন সংস্কৃতি থেকে পেয়েছি।

খুব কাছাকাছি একটা সংস্কৃতি আছে, যাঁরা মনে করে থাকেন এই আত্মাগুলো আশপাশে ঘোরাফেরা করে। এ ধরনের বক্তব্য আমরা অন্য সংস্কৃতি থেকে নিয়েছি। এটি ইসলামী সংস্কৃতির সঙ্গে সামান্যতম মিল নেই।ইসলাম এটি কোনোভাবেই অনুমোদন দেয়নি।

নবীজির (সা.) কবর সম্পর্কে ৬ অজানা তথ্য

মদীনার মসজিদে নববীতে সবুজ গম্বুজের নিচে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)। তার কবরটি বর্তমানে চারদিকে সুরক্ষিত বেষ্টনীতে আবদ্ধ। ফলে সরাসরি দেখার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু, এই কবর যিয়ারত করতে প্রতিনিয়ত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য মুসলমান ছুটে আসেন রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কর্মময় জীবনের শেষ ১০ বছরের অবস্থানস্থল মদীনাতুল মুনাওয়ারায়।

এ নিবন্ধে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কবর সম্পর্কিত সাধারণের অজানা ছয়টি তথ্য পেশ করা হলো—

১. প্রবেশ পথে সোনালী গ্রিলের বেষ্টনী: রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং খলীফা হযরত আবু বকর (রা.) ও হযরত উমর (রা.)- এর কবরের কামরাটির প্রবেশ পথ স্থায়ীভাবে সোনালী গ্রিলে তৈরি বেষ্টনী দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহর (সা.) কবরের কামরায় প্রবেশের এখন কোনো সুযোগ নেই।

২. আয়েশার (রা.) ঘর: রাসূলুল্লাহকে (সা.) তার ইন্তেকালের পর উম্মুল মুমিনিন হযরত আয়েশার (রা.) ঘরে দাফন করা হয়। অর্থাৎ, রাসূলুল্লাহর (সা.) কবরের কামরাটি হযরত আয়েশার (রা.) ঘর ছিল। রাসূলুল্লাহর (সা.) অন্যান্য স্ত্রীর মতোই মসজিদে নববীর আঙ্গিনায় অবস্থিত ছোট এই ঘরটিতে আয়েশা (রা.) বসবাস করতেন। এই কামরাগুলো তখন মূল মসজিদ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। পরবর্তীতে রাসূলুল্লাহর (সা.) কবর মসজিদে নববীর মূল মসজিদের অভ্যন্তরে সংযুক্ত হয়।

৩. গ্রিলের তিন ছিদ্রপথ: রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কবরগাহের কক্ষটি চারপাশে বেষ্টনীতে আবদ্ধ থাকায় রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং তার দুই সঙ্গীর কবর বাইরে থেকে দেখার কোনো সুযোগ নেই। শুধু কামরাটির প্রবেশ পথের গ্রিলে তিনটি ছিদ্র পথ রয়েছে, যা দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং তার দুই সঙ্গীর কবর সরাসরি দেখা যায়। বাম থেকে প্রথম বড় ছিদ্রপথ দিয়ে রাসূলুল্লাহর (সা.) কবর, মাঝের ছিদ্রপথে হযরত আবু বকরের (রা.) কবর এবং সর্বডানের ছিদ্রপথে হযরত উমরের (রা.) কবর দেখা যায়।

৪. দেওয়ালে ঘেরা: রাসূলুল্লাহর (সা.) কবরগাহের দেয়াল কালো পাথরে তৈরি এবং এই দেয়াল রাসূলের ও তার দুই সঙ্গীর কবরকে আবেষ্টন করে রেখেছে। ৯১ হিজরিতে খলিফা হযরত উমর ইবনে আবদুল আযীযের (র.) দেয়াল নির্মাণ করেন, যাতে কেউ রাসূলের কবরগাহে প্রবেশ করতে না পারেন।

৫. মাটির গভীর থেকে পরিবেষ্টন: সুলতান নূরউদ্দীন জঙ্গী গলিত সীসা দিয়ে রাসূলুল্লাহর (সা.) কবরের চারপাশকে মাটির গভীর থেকে আবদ্ধ করে দেন। বিভিন্ন সময়ে দুষ্কৃতিকারীরা কবর থেকে রাসূলুল্লাহর (সা.) লাশ চুরি করার চেষ্টা করলে সুলতান এই বেষ্টনী তৈরি করেন।

৬. ইন্তেকালের স্থানেই শায়িত: রাসূলুল্লাহ (সা.) যে জায়গাতে ইন্তেকাল করেছেন, ঠিক সে জায়গাতেই তাকে কবর দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহর (সা.) ইন্তেকালের পর অনেকেই তাকে তার মিহরাবের কাছে কবর দেয়ার কথা বলে আবার অন্যরা তাকে জান্নাতুল বাকী কবরস্থানে দাফনের পরামর্শ দেন।

কিন্তু, হযরত আবু বকর (রা.) বলেন, তিনি রাসূলুল্লাহকে (সা.) বলতে শুনেছেন একজন নবী যেখানেই ইন্তেকাল করেন, সেখানেই তাকে দাফন করতে হয়। হযরত আবু বকরের (রা.) এ কথা অনুযায়ী তখন আয়েশার (রা.) কামরায় রাসূলুল্লাহর (সা.) ইন্তেকালের স্থানেই কামরার মেঝেতে কবর খনন করা হয় এবং এই কবরেই তাকে দাফন করা হয়।

রাব্বুল আলামিন আমাদের বাইতুল্লাহর হজ নসিব করুন এবং নবীজির রওজা মুবারক দেখে আসার তাওফিক দান করুন।

কোরআন ও মাথা ছুঁয়ে শপথ কিন্তু জানেন কি, ইসলাম কি বলে?

দেখা যায়, অনেকেই কোরআন ছুঁয়ে, মাথা ছুঁয়ে, মাজার বা পীরের নামে শপথ করে। কিন্তু জানেন কি ইসলাম কি বলে? ইসলামী বিধান মতে, তা শিরক ও সবচেয়ে বড় গুনাহ। হাদিস শরিফে আছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে শপথ করে, সে অবশ্যই কুফরি বা শিরক করল।’ (তিরমিজি শরিফ, হাদিস : ১৫৩৫)

শপথ আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নামে করতে হয়। কিন্তু কোরআন স্পর্শ করে যদি কেউ শপথ করে, তাহলে সে শপথও রক্ষা করতে হবে। কেননা কোরআন আল্লাহর কালাম। এটি রাব্বুল আলামিনের কথা। তাই এটিও এক ধরনের কসম।

এই ধরনের কসম করলে অবশ্যই তা পূরণ করতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কালাম হওয়ার কারণে কোরআনের মর্যাদা কোনোভাবেই ক্ষুণ্ন করার সুযোগ নেই। আল্লাহর নামে কসম করলে যেমন তার মর্যাদা রক্ষা করা জরুরি, তেমনি কোরআন ছুঁয়ে শপথ করলে এর মর্যাদা কোনোভাবে ক্ষুণ্ন করা যাবে না।

কোনো ব্যক্তি আল্লাহর নামে করা শপথ ভঙ্গ করলে কাফফারাস্বরূপ তিনটি কাজের মধ্যে যেকোনো একটি কাজ করতে হবে।

এক. ১০ জন দরিদ্রকে মধ্যম শ্রেণির খাদ্য সকাল-বিকাল দুই বেলা খাওয়াতে হবে। এটি অর্থমূল্যে দিতে চাইলে প্রত্যেককে পৌনে দুই সের গম বা তার অর্থমূল্য দিতে হবে।

দুই. ১০ জন দরিদ্রকে ন্যূনতম ‘সতর ঢাকা’ পরিমাণ পোশাক-পরিচ্ছদ দান করতে হবে।

তিন. ক্রীতদাস থাকলে একজন ক্রীতদাস মুক্ত করে দিতে হবে। কেউ যদি এ আর্থিক কাফফারা দিতে সমর্থ্য না হয়, তার জন্য কাফফারা হলো তিনটি রোজা রাখা। হানাফি মাজহাব মতে, ওই রোজা উপর্যুপরি ও ধারাবাহিকভাবে রাখতে হবে।

কেউ যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে কসম করে, তাহলে তার কাফফারা হলো কালেমা ত্বাইয়েবা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ পাঠ করা। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি শপথ করতে গিয়ে লাত ও উজজার (আরবের মূর্তির) নামে শপথ করে বসে, সে যেন বলে, ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’। (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত, হাদিস : ৩৪০৯)

স্মরণ রাখতে হবে, অহেতুক শপথ করা ইসলাম সমর্থন করে না। আবার শপথ ভঙ্গ করাও ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

ইসলাম ডেস্ক