দুনিয়াবাসীর আকর্ষণ কেড়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। শুধু ফেসবুকেই প্রতি মাসে ভিজিটের সংখ্যা প্রায় ২.২ বিলিয়ন, তার মধ্যে ঢাকা শহরেই প্রতি বর্গকিমিতে ২৩,২৩৪ জন ফেসবুক ব্যবহারকারী রয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে প্রত্যেকেই তার প্রিয় মানুষটির সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখতে পারে। বিভিন্ন পেজ বা গ্রুপের সদস্য হয়ে অনেক অজানাকে জানতে পারে খুব সহজে। নিজের সুচিন্তা শেয়ার করতে পারে অন্যদের সঙ্গে। অবসর সময় কাটানোর সবচেয়ে বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়া। কিন্তু একান্ত প্রয়োজন ছাড়া এতে সময় দেওয়া কোনোভাবেই ঠিক নয়। এর ভালো দিক যত আছে, তার চেয়ে এর মন্দ দিক অনেক বেশি। যার ফলে দুনিয়া-আখিরাত দুটিই ভেস্তে যেতে পারে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘এমন দুটি নিয়ামত আছে, যে দুটিতে বেশির ভাগ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। তা হচ্ছে, সুস্থতা ও অবসর।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪১২)
রাসুল (সা.) আল্লাহপ্রদত্ত পাঁচ নিয়ামত হারিয়ে যাওয়ার আগে মূল্যায়ন করতে বলেছেন। বার্ধক্য আসার আগে যৌবনকে, অসুস্থ হওয়ার আগে সুস্থতাকে, অসচ্ছল হওয়ার আগে সচ্ছলতাকে ও মৃত্যু আসার আগে জীবনকে। কিন্তু কিছু কিছু মানুষ এর অপব্যবহার করছে। সোশ্যাল নেটওয়ার্ককেই তারা তাদের নোংরা মানসিকতা প্রচারের মাধ্যম বানিয়েছে। নিজের ব্যক্তিগত পেজ বা গ্রুপের ভিজিটর বাড়াতে প্রতিনিয়তই ছড়িয়ে দেয় বিভিন্ন অশ্লীল ছবি বা ভিডিও। অথচ পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘স্মরণ রেখো, যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের আছে যন্ত্রণাময় শাস্তি।’ (সুরা : নূর, আয়াত : ১৯)
অনেকে সোশ্যাল মিডিয়াকে গুজব ছড়ানোর সবচেয়ে বড় মাধ্যমে পরিণত করেছে। যেহেতু বর্তমান যুগে বেশির ভাগ মানুষেরই সোশ্যাল মিডিয়ায় বিচরণ। তাই মানুষকে বিভ্রান্ত করতে তারা সোশ্যাল মিডিয়াকেই বড় মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে। ব্যক্তিগত আক্রোশ ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব পুঁজি করেই এ ধরনের কাজ বেশি করা হয়। নিজেদের আদর্শের বাইরে হলেই তার বিরুদ্ধে মিথ্যা ছড়ানো, ফটোশপে কারসাজির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তিত্বকে অপমান করার চেষ্টা করাই এখন যেন এক শ্রেণির মানুষের ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। অথচ এর পরিণাম যে কত ভয়াবহ, তা তাদের কল্পনায়ও আসে না।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আর যে ব্যক্তি কোনো অপরাধ বা পাপ অর্জন করে, অতঃপর কোনো নির্দোষ ব্যক্তির ওপর তা আরোপ করে, তাহলে সে তো মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য গুনাহের বোঝা বহন করল।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১১২)
মিথ্যা বলা বা গুজব ছড়ানো মুনাফিকের আলামত। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মুনাফিকের আলামত তিনটি : ১. যখন সে মিথ্যা কথা বলে, ২. ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে, ৩. আর যখন তার কাছে আমানত রাখা হয়, সে খেয়ানত করে।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৩)
কোনো খবর দেখলেই যাচাই-বাছাই করা ছাড়া তা বিশ্বাস করা অনুচিত। পবিত্র কোরআনে ভুল তথ্য অনুসরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তার অনুসরণ কোরো না। নিশ্চয়ই কান, চোখ, অন্তর—এগুলোর প্রতিটি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩৬)
সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অনেক অনিয়ম প্রশাসনের চোখে আসে। ফলে অপরাধীর উপযুক্ত শাস্তি হয়। এটা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু যাচাই-বাছাই না করে কোনো খবর ছড়ানোর কারণে যদি কোনো নিরপরাধ ব্যক্তির জীবন নষ্ট হয়, ক্যারিয়ার নষ্ট হয়, তাহলে তার দায়ভার আমাদের ওপরই বর্তাবে, যা আমাদের ব্যক্তিত্বকে মানুষের কাছে হালকা করে দিতে পারে। আমরা হয়ে যেতে পারি চিহ্নিত মিথ্যাবাদী। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘সব শোনা কথা (যাচাই-বাছাই করা ছাড়া) বলা কোনো ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৯২)
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে এসব অনর্থক কাজ থেকে হেফাজত করুন। আমিন।