সোমবার বিদ্যুতের নতুন দাম ঘোষণা

একমাস আগে বিদ্যুতের পাইকারি দাম না বাড়ানোর ঘোষণা দিলেও সোমবার (২১ নভেম্বর) সেই দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসি। যেহেতু বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো এখনও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়নি। সেহেতু এতে এখনই বাড়ছে না গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম। তবে পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়লে গ্রাহকের বিদ্যুতের দাম বাড়ার শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

বিইআরসির এক কর্মকর্তা জানান, গতবার পিডিবি বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানোর যে প্রস্তাব দিয়েছিল, তাতে বেশ কিছু ত্রুটি ছিল। এরমধ্যে তথ্য ঘাটতি ছিল একটি বড় বিষয়। এছাড়া পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়লে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দামের ওপর কী প্রভাব পড়বে, তারও কোনও ব্যাখ্যা দেয়নি পিডিবি। এজন্য তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তখন দাম বাড়ানো হয়নি।

প্রসঙ্গত, পিডিবি গত ১২ জানুয়ারি বিদ্যুতের পাইকারি দাম পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাব জমা দেয়। এরপর ১৮ মে তাদের প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি হয়েছে। এরপর ১৩ অক্টোবর দাম না বাড়ানোর ঘোষণা দেয় কমিশন। তবে কমিশন সে সময় এই প্রস্তাবের বিপরীতে প্রস্তাবের বিষয়ে রিভিউ করার সুযোগ রেখে দেয় পিডিবির জন্য। আর সেই সুযোগটিই এখন নিলো পিডিবি। গত সোমবার রিভিউ আপিল করে তারা। এক সপ্তাহের যাচাই-বাছাই শেষে কাল সোমবার নতুন দাম ঘোষণা করতে যাচ্ছে বিইআরসি।

বিইআরসি এক গণবিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ‘সংশ্লিষ্ট সবার অবগতির জন্য নির্দেশক্রমে জানানো যাচ্ছে যে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বাবিউবো)-এর বিদ্যুতের পাইকারি (বাল্ক) মূল্যহার পুনর্নির্ধারণ বিষয়ে ১৩ অক্টোবর বিইআরসি আদেশ নম্বর: ২০২২/১৯ পুনর্বিবেচনা সংক্রান্ত কমিশন আদেশ আগামী ২১ নভেম্বর সোমবার দুপুর ১২টায় কমিশন কর্তৃক ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে ঘোষণা করা হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশনের আরেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘গতবার পিডিবির যেসব তথ্যে ঘাটতি ছিল, তারা তা পূরণ করে এই রিভিউ আপিল করে। এখন এটি যাচাই-বাছাই করে সোমবার আমরা বিদ্যুতের নতুন দাম ঘোষণা দেবো।’ এতে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়বে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১৮ মে পিডিবি গণশুনানিতে পাইকারি বিদ্যুতের শুল্ক ৬৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় এবং বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি ভর্তুকি না দিলে ৫৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছিল। আর ভর্তুকি দিলে বাড়ানোর প্রয়োজন নেই বলেও তারা সুপারিশ করে।

বিইআরসি সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যুতের পাইকারি দাম ইউনিটপ্রতি ৫ টাকা ১৭ পয়সা নির্ধারণ করেছিল।

এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগের সূত্রগুলো জানায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর চাপে এবার বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি খাতের ভর্তুকি কমানোর জন্য দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে। আইএমএফ সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রথম কিস্তি ছাড়ের যেসব শর্ত দিয়েছে, এরমধ্যে বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি খাতের ভর্তুকি কমানো অন্যতম।

প্রসঙ্গত, আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সাম্প্রতিক ঢাকা সফরে বিদ্যুৎ জ্বালানি বিভাগ, বিডিবি, বিপিসি, পেট্রোবাংলা এবং বিইআরসির সঙ্গে বৈঠক করে। ওই বৈঠকগুলোতে আইএমএফ মূলত ভর্তুকি নিয়ে আলোচনা করেছে।

সূত্র জানায়, বিতরণ কোম্পানিগুলোকেও দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, ‘আমরা এখনও প্রস্তাবের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেইনি। আগামীকাল দেখি কী পরিমাণ দাম বাড়ে। সেটি বিবেচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো।’

বার্তা কক্ষ, ২০ নভেম্বর ২০২২

Share