Home / উপজেলা সংবাদ / ফরিদগঞ্জ / সোনারগাঁয়ে লেখক ফোরামের পদচিহ্ন
লেখক

সোনারগাঁয়ে লেখক ফোরামের পদচিহ্ন

নাহ! সোনারগাঁওয়ে গিয়ে সোনার রহস্য উদঘাটন হয়নি! তবে সোনারগাঁও পেয়েছে লেখক ফোরাম’র একঝাঁক সোনার মানুষ। ভ্রমণের মাধ্যমে কবিতা হয়ে ওঠে মসৃন। কবিতা লাইনগুলো খুঁজে পায় ছন্দ। লেখক ফোরাম সাহিত্য সংগঠন হলেও সাহিত্যকে আষ্টেপৃষ্টে আঁকড়ে ধরতে সমাজের সকল ক্ষেত্রেই এখন ভূমিকা পালন করে।

২৪ ডিসেম্বর হয়ে গেলো ফরিদগঞ্জ লেখক ফোরাম’র বাৎসরিক আনন্দ ভ্রমণ- ২০২২। এবারের আনন্দ ভ্রমণ ছিলো ঐতিহাসিক সোনারগাঁও লোকশিল্প যাদুঘর এবং পানাম নগর। ভ্রমণের আহবায়ক ফরিদগঞ্জ লেখক ফোরাম’র প্রতিষ্ঠাতা নূরুল ইসলাম ফরহাদ ও সদস্য সচিব রাবেয়া আক্তারের অক্লান্ত পরিশ্রমে এবারের ভ্রমণটি শৃঙ্খল এবং সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়।

সকাল সাড়ে সাতটার মধ্যে লেখক ফোরাম কার্যালয়ে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে একত্রিত হয় সকল পর্যটক। বোগদাদ বাসে পূর্বের নির্ধারিত আসন বিন্যাস মোতাবেক স্ব-স্ব আসনে বসে পড়ে। যাত্রা পথে আনন্দ উৎসব আয়োজনের জন্য আগে থেকে প্রস্তুত রাখা সাউন্ড বক্স উঠানো হলো গাড়িতে। তারপর খাবার দাবার সহ আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্র তুলে সকল ভ্রমণার্থীর পরিচয়ের মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয়। যাত্রার শুরতে সকল পর্যটকের জন্য নির্ধারিত উপহার সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। উপহার সামগ্রীর মধ্যে ছিলো টি-শার্ট, প্যাড, কলম ও শিডিউল।

ভ্রমণের মূল আনন্দ স্বাভাবিকভাবে যে স্থানে যাওয়া হয় সেটাকেই কেন্দ্র করে হয়ে থাকে। কিন্তু বরাবরের মত এবারও লেখক ফোরামের মূল আনন্দ হয়েছে গাড়িতেই, বিশেষ করে আসার সময়। উপস্থিত সকলে মনের আনন্দে যে যার মতো করে নাচ, গান, কবিতা উপস্থাপন করেছে। আনন্দের মাঝেই পৌছানো হলো সোনারগাঁয়ে। পথি মধ্যে সুন্দর একটি স্থান দেখে, বাস থামিয়ে সকালের নাস্তা পর্ব শেষ করা হলো। নাস্তা সেরে সবাই যার যার আসনে গিয়ে বসলো। গাড়ীটি ছুটতে লাগলো সোনারগাঁয়ের উদ্দেশ্যে। সোনারগাঁও যাদুঘরে প্রবেশ করে সবাই আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ে। যাদুঘরকে কেন্দ্র করে বাহিরের অংশের পরিপাটি পরিবেশ যে কাউকেই মুগ্ধ করবে। বিস্তৃর্ণ অংশ জুড়ে রয়েছে ফুলের বাগান। রয়েছে জাতির পিতার ভাস্কার্য, গরুর গাড়ির ভাস্কর্য, তোরন, লেগ, লাইব্রেরী। মূল ভবনে প্রবেশের পর বাংলার পুরনো সব শিল্প কর্ম দেখে তরুণরা যেমন অতীত সম্পর্কে জানে তেমনি মোস্তফা কামাল মুকুলের মতো প্রবীনরা হারিয়ে যান অতিতে।

বর্তমান প্রজন্ম আধুনিকতার ছোঁয়ায় ভুলে গেছে অতীতকে। নারীরা এখন আর নকশি কাঁথা তৈরী করে না। পুরনো দিনে নবাবদের ব্যবহার করা জিনিস দেখার মধ্যে বাংলাকে জানা যায়। অথচ জ্ঞান আর শিল্প কর্ম রেখে আজ আমরা ব্যাস্ত শুধুই আধুনিক বিনোদনে।

সোনারগাঁয়ে দারুন সময় কাটানোর পর মধাহ্নভোজ গ্রহণ করা হয় স্থানীয় একটি হোটেলে। তারপর যাত্রা করা হয় ঐতিহাসিক পানাম নগরে। যেটি আমাদের প্রাচীন নদী বন্দর ও সুবর্ণ গ্রাম। একটি সড়কের দুই পাশে মোট ৫২ টি ভবন নিয়ে পানাম নগর। সেই নগরে পা রেখে লেখক ফোরাম প্রাচীন বাংলার রাজত্বের নিদর্শনে বিমোহিত হয়। সংগঠনের সদস্যরা তখন যেন স্বপ্নের দেশে চলে যায়। সকলে যে যার মতো স্মৃতিতে মূহুর্ত গুলোকে ক্যামরা বন্ধী করতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে বিকাল ৫টায় পানাম নগর সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক বন্ধ করে দেওয়ার আগে সংগঠনের সকল সদস্য এই পানাম নগরেই স্মৃতির ফ্রেমে বন্ধী হয়।
তারপর পুরোদিন উপভোগের পর নেমে আসে সন্ধ্যা। এবার বাড়ি ফেরার পালা। সকলে আবারও বাড়ি ফেরার জন্য রিজার্ভ বাসটিতে উঠে পড়ে। ফেরার সময়টা ছিলো আরও রোমাঞ্চকর, নাচ, গান, কবিতায় বিমোহিত ছিলো সকলে। ভ্রমণে উপস্থিত বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ সমাজে সেবক আকবর হোসেন মনির এবং এ্যাডভোকেট মাহবুব আলম এবং প্রবীন মোস্তফা কামাল মুকুলের গান, কবিতায় সকলে খোলস ছেড়ে মেতে ওঠে উল্লাসে। সাংবাদিক ইকবাল এবং শিমুল হাছানও এদিন নিজেদের প্রথাগত খোলস থেকে বেরিয়ে এসে ভ্রমণকে স্মৃতি বিজড়িত করে তোলে।

ভ্রমণে ঢাকা থেকে অংশ গ্রহণ করেন ফরিদগঞ্জ বার্তার সম্পাদক ও প্রকাশক মো. বিল্লাল হোসেন সাগর, সংগঠনের সিনিয়র সদস্য সাংবাদিক ফরিদ আহমেদ মুন্না ও নবিন সদস্য তানজিল হৃদয়। প্রায় ৫০ জনের বিশাল বহর নিয়ে এটাই সংগঠনের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এবং বড় ভ্রমণ। সকলের সুশৃঙ্খল সহযোগীতার জন্য ভ্রমণ কমিটির আহবায়ক ও সদস্য সচিব সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এ সময় তারা বলেন, এভাবে যদি ভবিষ্যতেও সবাই সহযোগীতা করে তবে ইনশাআল্লাহ আগামীতে ২/৩ দিনের জন্য ট্রুর দেওয়া সম্ভব হবে।

ভ্রমণ কে আরো উপভোগ্য করার জন্য আয়োজন করা হয় সোনারগাঁয়ের যাদুঘর এবং পানাম নগর নিয়ে উপস্থিত জাবাবের ভিত্তিতে কুইজের আয়োজন করা হয়। কুইজ প্রতিযোগিতার ছয়জন বিজয়ীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন ভ্রমণ কমিটির নেতৃবৃন্দ। ভ্রমণ কে আকর্শনীয় করতে র‌্যাফেল ড্রয়ের আয়োজন করা হয়। লেখক ফোরাম প্রতিষ্ঠাতা নূরুল ইসলাম ফরহাদ’র একমাত্র কন্যা মেহরিমা ফরহাদ মালিহা লটারীর প্রথম পুরস্কারের একমাত্র টিকেট তোলার সুযোগ পেয়ে বাবার টিকেটই তোলে উৎসবে বাড়তি মাত্র যোগ করে। ঘটনাটি সবাইকে বিস্মিত করে! মেয়ে তুলেছে বাবার ভাগ্য সকলে এটা বলে বিস্ময়কর হাসিতে লটারীর সমাপ্তি ঘটায়।

আনন্দ উল্লাসের মধ্য দিয়ে কখন যে সময় পুরিয়ে গেলো টেরই পেলো না কেউ। রাত দশটায় বাড়ি ফেরা। সুন্দর দিনের স্মৃতি নিয়ে শান্তির রাত সকলের। লেখক ফোরাম’র ভ্রমণ মানেই ভিন্ন রকম কিছু এবারও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। সাহিত্য-সংস্কৃতির বৈতরণি বেয়ে লেখক ফোরাম পুরো সামাজিক দর্পন।

ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি, ২৮ ডিসেম্বর ২০২২