হাইমচর

সৈয়দ আলী আহসান পদক পেলেন চাঁদপুরের কৃতিজন কবি মনসুর আজিজ

কবি, শিক্ষাবিদ, মনীষী, জাতীয় অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান এর নামে প্রবর্তিত ‘সৈয়দ আলী আহসান সিএনি পদক’ পেলেন নব্বই দশকের অন্যতম কবি মনসুর আজিজ। দীর্ঘ তিন দশক ধরে কবিতার সাথে বসবাস মনসুর আজিজ ১৯৭৪ সালের ১৫ আগস্ট চাঁদপুর জেলার হাইমচরে জন্মগ্রহণ করেন। এ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে তার একুশটি গ্রন্থ।

২৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাত ৯টায় সেন্টার ফর ন্যাশনাল কালচার (সিএনসি) প্রবর্তিত এই পদক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাকে প্রদান করা হয়। ‘জীবনশিল্পী সৈয়দ আলী আহসান স্মরণে আলোচনা ও পদক প্রদান (ভার্চুয়াল) অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও ভারতের বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যক, সাংবাদিক, সম্পাদক ও আবৃত্তিশিল্পীগণ উপস্থিত ছিলেন।

সিএনসির নির্বাহী পরিচালক ও বিশিষ্ট সাহিত্যিক মাহবুবুল হক এর উদ্বোধনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বর্তমান সময়ের উল্লেখযোগ্য কবি ও বৈচিত্র সম্পাদক শাহীন রেজা, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতের কবি ও সম্পাদক সৌমিত বসু, বিশিষ্ট আবৃত্তি শিল্পী নাসিম আহমেদ ও শায়লা আহমেদ, কবি জাকির আবু জাফর, কবি ও গবেষক ড. শাহনাজ পারভীন, ছড়াকার আতিক হেলাল, কবি-গবেষক ড.ফজলুল হক তুহিন ও কবি প্রত্যয় হামিদ। কবি মনসুর আজিজ এর কবিতা থেকে আবৃত্তি করেন এই সময়ের তরুণ কবি ও আবৃত্তিকার আশিক বিন রহিম, মামুন অপু ও ফেরদৌস জান্নাতুল।

সিএনসির নির্বাহী পরিচালক তার উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন- কবি মনসুর আজিজ তার কবিতা ও নানামাত্রিক লেখার মাধ্যমে এতোমধ্যেই বাংলাসাহিত্যে একটি নিজস্ব জায়গা তৈরি করেছেন। আমরা তাকে এই পদক প্রদান করে সম্মানিত করছি না বরং নিজেরাই সম্মানিত হচ্ছি। সৈয়দ আলী আহসান এর মতো কবি ও মনীষীর নামে প্রবর্তিত পদক আমরা যোগ্য মানুষের হাতে তুলে দিতে পেরে গৌরব বোধ করছি।

প্রধান অতিথি কবি শাহীন রেজা বলেন, আমার এক দিকে সৈয়দ আলী আহসান অন্যদিকে কবি মনসুর আজিজ। একজন শ্রদ্ধার, অন্যজন স্নেহের। সৈয়দ আলী আহসান এর জন্মশতবর্ষকে কেন্দ্র করে সিএনসির এই আয়োজনকে অভিনন্দন জানান তিনি। একজন যোগ্য কবির হাতে সৈয়দ আলী আহসান পদক তুলে দেয়ার জন্য সিএনসিকে ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, এই পদকপ্রাপ্তির মাধ্যমে মনসুর আজিজ এর দায়িত্ব বেড়ে গেলো। এই দায়িত্ব তাকে পালক করে যেতে হবে। তার সম্পাদিত আড্ডাপত্রের মাধ্যমে তরুণরা একত্রিত হয়। তিনি তরুণদের সাথে প্রবীণদেরও একত্র করছেন। এজন্য মনসুর আজিজকে অভিনন্দন জানাই।
কবি সৌমিত বসু সৈয়দ আলী আহসান এর কবিতা থেকে পাঠ করে তার গভীরতা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, মনসুর আজিজকে পদক প্রদান করা হলো মানে আমাদেরকেই প্রদান করা হলো। কবিদের কারো প্রাপ্তি বা স্বীকৃতি যেন নিজেদেরই প্রাপ্তি।

কবি জাকির আবু জাফর বলেন, মনসুর আজিজ আমাদের সময়ে প্রবলভাবে সাহিত্যে বিচরণ করছেন। তিনি তারুণ্যদীপ্ত কবি ও শিশুসাহিত্যিক। লেখায়, দেখায়, অনুষ্ঠানে, আয়োজনে তার ভিতরে তারুণ্য প্রবলভাবে উপস্থিত। সিএনসি একজন শক্তিমান কবির হাতে সৈয়দ আলী আহসান পদক তুলে দিয়ে দায়িত্বশীল কাজ করেছে, সেজন্য তাদের অভিনন্দন জানাই। অভিনন্দিত করছি কবিকে।

কবি মনসুর আজিজ পদক প্রাপ্তির প্রতিক্রিয়ায় বলেন, সৈয়দ আলী আহসান এর উপর প্রবর্তিত পদক গ্রহণ করবো তা ভাবিনি কখনো। সেন্টার ফর ন্যাশনাল কালচার (সিএনসি) এর নির্বাহী পরিচালক জনাব মাহবুবুল আলম কিছুদিন আগে ফোনে আমাকে খবরটি দেন। আমি বিস্ময়ে হতবাক! সৈয়দ আলী আহসান শুধুমাত্র একজন খ্যাতিমান কবি বা শিক্ষাবিদই নন।আমাদের মননের প্রতীক। সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতিটি ক্ষেতে তার বিচরণ ও পাণ্ডিত্য আমাদের বিস্মিত করে। এই মহান মনীষীর সান্নিধ্যলাভের সুযোগ হয়েছিলো বহুবার। সবশেষে তার সাথে দেখা হয় শেষ জন্মদিনে। ২০০২ সালের ২৬ মার্চ। জন্মদিনে বাসায় গিয়ে শুভেচ্ছা জানাই। ওই বছরই আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘‘অতলান্ত নীলচোখ’’ বের হয়। তাকে একটি কপি উপহার দেই। পাতা উল্টিয়ে কয়েকটি কবিতায় চোখ বুলান। এরপর মিষ্টি হেসে হাত মিলিয়ে অভিনন্দন জানান। এর কয়েক মাস পর ২৫ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

সৈয়দ আলী আহসান প্রতিষ্ঠিত সংগঠন কতৃক প্রবর্তিত ‘সৈয়দ আলী আহসান সিএনসি পদক’ এর জন্য আমাকে মনোনীত করার জন্য প্রতিষ্ঠানের ট্রাস্টিবোর্ডসহ সকলের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা আমার অগুনতি বন্ধু, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদের জানাই আনন্দবার্তা।’

প্রসঙ্গগত : কবি মনসুর আজিজ চাঁদপুর জেলার হাইমচরে ১৯৭৪ সালের ১৫ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মোহাম্মদ আজিজুল হক, মা আনোয়ারা বেগম। বর্তমানে বসবাস করছেন ঢাকার মিরপুরে। হাইমচর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসি (১৯৯২) ও সাভার কলেজ থেকে এইচএসসি (১৯৯৪) পাস করার পর ব্যবস্থাপনায় অনার্স (১৯৯৮) ও মাস্টার্স (১৯৯৯) করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এরপর এমবিএ (২০১২) পাস করেছেন মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি থেকে।

এ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে তার একুশটি গ্রন্থ। এর মধ্যে কাব্যগ্রন্থ ৯টি, শিশুকিশোর কাব্যগ্রন্থ ৫টি, উপন্যাস ২টি, ছোটগল্প ১টি; কিশোরগল্প ১টি; ছড়াগ্রন্থ ১টি, কিশোরগদ্য ১টি ও গবেষণা ১টি।

স্টাফ করেসপন্ডেট ২৯ আগস্ট ২০২০

Share