Home / উপজেলা সংবাদ / মতলব উত্তর / মতলবের সৈনিক শাহিন হত্যার ঘটনায় ৩ ছিনতাইকারী গ্রেফতার
সৈনিক

মতলবের সৈনিক শাহিন হত্যার ঘটনায় ৩ ছিনতাইকারী গ্রেফতার

নারায়নগঞ্জ মহানগরের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার চিটাগাংরোড়ে ছিনতাইকারীদের হাতে নিহত চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তরুণ সৈনিক শাহীন আলম (২২) হত্যার ঘটনায় ৩ ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে সিদ্দিরগঞ্জ থানা পুলিশ পুলিশ।

গ্রেফফতারকৃতরা হলো জীবন (২৩), সুমন ওরফে বিয়ার সুমন (২৫), ও জুম্মন (২২)।

বুধবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য জানান, নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক-সার্কেল) মোহাম্মদ নাজমুল হাসান।

গ্রেফতারকৃতরা পেশাদার ছিনতাইকারী বলে জানিয়েছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মশিউর রহমান (পিপিএম বার)। গত ১৫ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৩ টায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য শেখ হাসিনা ক্যান্টনমেন্ট লেবুখালী, পটুয়াখালীতে কর্মরত সৈনিক (কুক) শাহীন আলম (২২) সাত দিনের ছুটি ভোগ করার জন্য নিজ বাড়ি চাঁদপুরের মতলব উত্তরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে তাঁর বন্ধু ফারহাবিব এর বাসায় (সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন হিরাঝিল এলাকা) রাত্রিযাপন করতে যাচ্ছিলেন। এসময় মৌচাক ১০ তলার মোড়ের সামনে পৌঁছালে পেছন দিক থেকে পেশাদার ছিনতাইকারী জীবন, সুমন ওরফে বিয়ার সুমন ও জুম্মন অটোরিকশা যোগে এসে শাহীনকে গতিরোধ করে।

এসময় ছিনতাইকারীরা সৈনিক শাহীন আলম এর নিকট থাকা মানিব্যাগ, টাকা পয়সা ছিনতাইকালে সে বাধা প্রদান করায় ছিনতাইকারী জীবন ও সুমন তাদের হাতে থাকা সুইচ গিয়ার দিয়ে প্রাণ নাশের উদ্দেশ্যে উপর্যুপরি শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাত করে।

খবর পেয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ সৈনিক শহীন আলমকে উদ্ধার করে দ্রুত সাইনবোর্ড এলাকার প্রো-এ্যাকটিভ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে যায়। সেখানে তাঁর অবস্থার অবনতি ঘটলে দ্রুত এ্যাম্বুলেন্স যোগে আহত সৈনিক শাহীন আলমকে ঢাকা সিএমএইচ এ প্রেরণ করা হয়। পরে ভোর সাড়ে ৫ টায় সিএমএইচ এর কর্তব্যরত ডাক্তার সৈনিক শাহীন আলমকে মৃত ঘোষণা করেন।

আরও পড়ুন…   মতলবের সেনাসদস্য শাহিনকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন, এলাকায় শোকের মাতম

এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে ঐ দিন রাতেই সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় অজ্ঞাত আসামি করে একটি হত্যা মামলা (২৯) দায়ের করেন। পরে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নামেন তদন্তে। ১৮ জানুয়ারি রাতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পেশাদার ছিনতাইকারী জীবন, সুমন ওরফে বিয়ার সুমন ও জুম্মনকে গ্রেফতার করে। এসময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত সুইচ গিয়ারটি উদ্ধার করা হয়।

সিদ্দিরগঞ্জ থানা পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামিরা ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ছিনতাই, দস্যুতা, মাদক মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সিদ্দিরগঞ্জ থানার এসআই ও এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ ফয়সাল আলম জানান গত ৩ দিন ধরে অনেক অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এই তিন ছিনতাইকারীদেরকে আটক করতে পেরেছি। আটক তিন ছিনতাইকারী এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা নিজ মুখে শিকার করেছে। আসামীরা এখন আমাদের থানায় আটক রয়েছে। আগামী কাল বৃহস্পতিবার তাদেরকে কোর্টে প্রেরণ করা হবে।

নিহত সেনা সদস্য শাহিন আলমের সেজ বড় ভাই সাইফুল ইসলাম বলেন,আমাদের পরিবারের আদরের ছোট ভাইয়ের হত্যার সাথে জড়িত তিন ছিনতাইকারীদেরকে ধরতে পেরেছে এতে আমরা কিছুটা স্বস্তি প্রকাশ করছি। পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশকে ধন্যবাদ জানাই। তারা অনেক সহযোগিতা করেছে আমাদের। তার সাথে অতি দ্রুত এ ঘটনার সাথে জড়িতদেরকে ধরতে পেরেছ্যে। আমরা আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের বিচারের মাধ্যমে ফাঁসি দাবী জানাই।

এদিকে চাঁদপুরের মতলবের তরুন সেনা সদস্য শাহিন আলমের হত্যকান্ডের সাথে জড়িত থাকায় ৩ ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করায় সিদ্দিরগঞ্জ থানা পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রসংশা কুড়িয়েছে। নিজ সন্তানের হত্যার সাথে জড়িত তিন ছিনতাইকারীকে পুলিশ ধরেছে খবর পেলে নিহত শাহিনের পরিবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও থানা পুলিশকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তারা এবং মতলবের সর্বস্তরের জনসাধারণ এ হত্যাকারীদের ফাঁসি দাবী জানান।

প্রসঙ্গত,  গত ১৫ জানুয়ারি রাত ৩ টার সময় নারায়নগঞ্জ মহানগরের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার চিটাগাংরোড়ে ছিনতাইকারীদের হাতে নিহত হন চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তরুন সৈনিক শাহীন আলম (২২)। গত ১৬ জানুয়ারি সকাল ১১টার সময় ঢাকার সিএমএই হাসপাতাল থেকে নিহত সেনা সদস্য শাহিন আলমের লাশ ঢাকা সিএমএইচ এর হিমাগার থেকে হেলিকাপ্টারযোগে তার গ্রামের বাড়িতে এনে কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে আগত ক্যাপ্টেন মোঃ জাকারিয়ার নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি চৌকস টিম নিহত শাহিন আলমকে গার্ড অব অর্নার ও রাষ্ট্রীয় সালাম জানিয়ে রাষ্ট্রীয় মর্যদায় তাকে দাফন করা হয়।

শাহিন আলম স্থানীয় ছেংগারচর সরকারী ডিগ্রি কলেজের অর্নাস প্রথম বর্ষে লেখাপড়া করতো এবং এলকায় ফুটবল খেলোয়াড় হিসাবে সে ছিল খুবই জনপ্রিয়। তার মৃত্যুর সংবাদে সহপাঠী, বন্ধু-বান্ধব, সুভাকাঙ্খী ও স্থানীয় ক্রীড়াপ্রেমিরা এসে তার বাড়ীতে ভীড় জমায়। সকলের উপস্থিতিতে শাহিনের বাড়ীতে এক শোকাবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে।নিহত সেনা সদস্য শাহিন আলম মতলব উত্তর উপজেলাস্থ ছেংগারচর পৌরসভার মানিকের কান্দি গ্রামের আরব আলী প্রধানীয়ার অত্যন্ত আদরের সন্তান এই শাহীন আলম। ৫ ভাই ২বোনের মধ্যে শাহিন সবার ছোট।

নিজস্ব প্রতিবেদক