জাতীয়

‘সেলফি’ তুলতে গিয়ে সাকিবকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত

কক্সবাজারের উখিয়ার রেজু নদী সংলগ্ন সাগর মোহনায় যাত্রীবাহী হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ হিসেবে পাইলটের কথা অমান্য করে সেলফি তোলাকে দায়ী করেছেন হেলিকপ্টারটির মালিকপক্ষের কর্মকর্তা।

তাদের দাবি, নিহত শাহ আলম পাইলটের পাশের সিটেই বসে ছিলেন। তিনি পাইলটের কথা না মেনে দরজা খুলে ছবি তুলতে থাকে। যার এক পর্যায়ে হেলিকপ্টারটির ভেতরে বাতাস ঢুকে তা নিচে পড়ে বিধ্বস্ত হয়। ঘটে হতাহতের ঘটনা।

শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উখিয়ার ইনানী এলাকার হোটেল রয়েল টিউলিপে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে পৌঁছে দিয়ে ঢাকা ফিরছিলো মেঘনা এভিয়েশনের মালিকানাধীন হেলিকপ্টারটি। এ সময় রেজু নদী সংলগ্ন স্থানে বিধ্বস্ত হয় হেলিকপ্টারিটি।

ঈগল বি এজেন্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে বিজ্ঞাপনচিত্রে অংশ নিতে সাকিব ওই হেলিকপ্টারে কক্সবাজারে গেছেন।

বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানটির স্থানীয় প্রতিনিধি সেকান্দার আবু জাফর হিরো জান‍ান, সকালে সাকিবকে হোটেলে নামিয়ে দেওয়া হয়। ফেরার পথে তাদের প্রতিষ্ঠানের দুই কর্মচারী শরিফুল ও শাহ আলম (৩৫) হেলিকপ্টারটিতে ওঠেন। এ সময় পাইলট নিচ দিয়ে হেলিকপ্টারটি চালিয়ে নিচ্ছিলেন।

নিহত শাহ আলম (৩২) সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার রাজারপুর ইউপির তেতুলিয়া গ্রামের শেখ মো. শামসুর রহমানের ছেলে। তিনি ঢাকার বেঙ্গল বে নামে একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার কর্মকর্তা।

উদ্ধার আহতরা হলেন- পাইলট উইন কমান্ডার শফিকুল ইসলাম, বিজ্ঞাপনী সংস্থার কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম ও তার ২ ছেলে। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল খায়ের জানান, সকালে উখিয়ার ইনানী এলাকার হোটেল রয়েল টিউলিপে ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসানকে নিয়ে হেলিকপ্টারটি অবতরণ করে। তাকে নামিয়ে দিয়ে হেলিকপ্টারটি বিজ্ঞাপনী সংস্থা বেঙ্গল বে এর লোকজন নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়।

হেলিকপ্টারটি সোনারপাড়ার রেজু নদীর মোহনা সংলগ্ন এলাকায় এসে বিধ্বস্ত হয়ে সৈকতে পড়ে। এতে এ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পরপরই স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে

কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তার মৃতদেহ হাসপাতাল মর্গে রয়েছে।

বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারটির পরিচালনাকারী সংস্থা মেঘনা গ্রুপের মার্কেটিং ম্যানেজার খোরশেদ আলম চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনায় ৫ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করলেও এতে এক যাত্রী নিহত হন। পাইলট ও অপর ৩ যাত্রীকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় হেলিকপ্টারটি জোয়ারের পানি থেকে মুক্ত রাখার জন্য কূলে উঠিয়ে রাখা হয়েছে।

আহত পাইলটের বরাত দিয়ে খোরশেদ আলম বলেন, `উইন কমান্ডার শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন নিহত শাহ আলম হেলিকপ্টারের দরজা খুলে ভিডিও করলে পাইলট তাকে নিষেধ করেন। কিন্তু তিনি পাইলটের কথা অমান্য করে দরজা খোলা রেখে ভিডিও করছিলেন। এক পর্যায়ে সেলফি তোলা শুরু করেন। এতে হেলিকপ্টারের ভেতরে বাতাস প্রবেশ করে উঠা নামা শুরু হয়। যার এক সময় এটি বালিতে পড়ে যায়।’

এদিকে, কক্সবাজার বিমানবন্দরের ম্যানেজার সাধন কুমার মোহন্ত বলেন, `হেলিকপ্টারটি কক্সবাজারে ঢোকার সময় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে
অবহিত করেনি। দুর্ঘটনার ব্যাপারে বিস্তারিত কোনো কিছু আমি অবগত নই।’

এ ব্যাপারে মেঘনা গ্রুপের মার্কেটিং ম্যানেজার খোরশেদ আলম জানান, `হেলিকপ্টার নিয়ে কক্সবাজারের আকাশ সীমায় ঢোকার বিষয়টি ফ্যাক্স-বার্তা পাঠিয়ে কক্সবাজার বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল।’

বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারটি উদ্ধার তৎপরতা শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

অপরদিকে, দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সিভিল এভিয়েশনের সিনিয়র কর্মকর্তারা। এর মধ্যে ছিলেন- গ্রুপ ক্যাপ্টেন জাফর ও সিনিয়র কনসালটেন্ট হাসমী। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে তারা ঢাকায় ফিরে গেছেন।

গ্রুপ ক্যাপ্টেন জাফর জানান, `হেলিকপ্টারটির দরজা খোলা থাকায় এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। তবে, কি কারণে দরজা খোলা ছিল বলা যাচ্ছে না।'(উৎস- বাংলানিউজ)

নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৭:১০ পিএম, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬, শুক্রবার
ডিএইচ

Share