বাংলাদেশে বহুল আলোচিত সমালোচিত এবং প্রবীণ রাজনীতিবিদ, জামায়াত-শিবিরের শ্রদ্ধারপাত্র প্রয়াত জামায়াতের সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমেরই এক পুত্র বাংলদেশ সেনা বাহিনীর এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। গোলাম আযমের পুত্র সেনাবাহিনীর এত্ত বড় অফিসার এটা অনেকেরই অজানা ছিল তখন পর্যন্ত যতোদিন তিনি এই বাহিনিতে কর্মরত ছিলেন। দেশের জনগণ তখনই জানতে পারল যে তিনি গোলাম আযমের ছেলে যখন সরকার তাঁকে দেশের জন্য হুমকি বা ‘আতঙ্ক’ মনে করে তাঁকে বহিষ্কার করেন। তিনি অবশ্য এই আদেশের বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা করে রেখেছেন।
বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়, চারদলীয় জোট সরকারের আমলে অনেক সময় তাঁকে সেনাবাহিনীর প্রধান করার বিষয়ে কিছুটা কানাঘুষাও হয়েছিল! তবে এই সবই বাতাসে ভাসা খবর। যদিও শেষ পর্যন্ত জেনারেল মঈন ইউ আহমেদকে সেনা প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয় তৎকালীন সরকার। সমালোচকদের অনেকের অভিমত গোলাম আযমের পুত্র আব্দুল্লাহহিল আমান আযমিকে যদি সেনা প্রধান হিসেবে সেই সময়ের সরকার নিয়োগ দিত তাহলে পরবর্তীতে চারদলীয় জোট সরকারের পরিণতি ভিন্ন হতে পারত। যাইহোক এই বিষয়গুলো রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের জন্য। আমারা আজ আমাদের পাঠকদের জন্য তাঁর নিজের বহিষ্কার আদেশ কেন, কিভাবে দেয়া হল এবং এটা শুনার পর তাঁর নিজের এবং পরিবারের অনুভূতি কেমন ছিল তা তাঁর নিজের দেয়া ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে জানতে পেরেছি। আর সেটি হুবহু আমাদের পাঠকদের জন্য এখানে তুলে ধরা হচ্ছে;-
‘মনে হচ্ছিল নিজের চামড়া নিজেই টেনে খুলছি …
নানা কারণে আমার প্রায় ৩০ বছরের সামরিক জীবনটা ছিল অনেক ঘটনাবহুল। সিলেকশন প্রক্রিয়ার নানা নাটকীয়তা (প্রথমবার পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর দরখাস্ত জমা দিয়েও লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারা, দ্বিতীয়বার পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির পর দরখাস্ত করে পরীক্ষা দেয়ার পর পত্রিকায় প্রকাশিত ফলাফলে প্রথমে ভুলবশতঃ আমার রোল নম্বর প্রকাশ না হওয়া, মেডিকেল ফিটনেসের সময় চোখের জন্য টেম্পরারী আনফিট হয়ে তারপর চশমা নিয়ে ফিট হওয়া [আমি ছোটবেলা থেকেই চশমা পরি], আইএসএসবি’তে আমার ব্যাচে একমাত্র আমিই ‘সিলেক্টেড’ হওয়া ইত্যাদি) থেকে শুরু করে জয়েনিং লেটার পাওয়ার পর জয়েনিং ডেইট এর তিনদিন পূর্বে সেনাসদর থেকে চিঠি দিয়ে তা ক্যান্সেল করা, আমার কোর্সের সবাই বিএমএ’তে যোগদানের পর পুনরায় সেনাসদর থেকে জয়েনিং লেটার দেয়া, একাডেমিতে বিভিন্ন ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব, অনেক নাটকীয়তা এবং জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে রেকর্ড ব্রেক করা ফলাফল (সেই বিশাল অর্জন কেবল মহান আল্লাহ’র ইচ্ছা ও অশেষ রহমতেরই প্রতিফলন, আমার কৃতিত্ব নয়) অর্জন করে আমার কমিশন লাভ, এর পর নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে (পোস্টিং, প্রমোশন ইত্যাদি নিয়ে হাজার নাটকীয়তা!) সাড়ে ২৭ বছরের সফল চাকুরী এবং সবশেষে অস্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় (“এই প্রক্রিয়ায় বরখাস্ত এই উপমহাদেশে প্রথম উদাহরণ” হিসেবে ঢাকা হাইকোর্টে করা আমার রিট মামলায় নথিভূক্ত আছে) চাকুরীচ্যুতি – সবকিছু মিলিয়ে আমার এই সাড়ে ২৯ বছরের সামরিক জীবনটা একটা ইতিহাস হয়েই রয়েছে বলা যায়।
বহুদিন থেকেই অনেকে (অনেক প্রকাশক সহ) অনুরোধ করে আসছেন আমার জীবনের, বিশেষ করে সামরিক জীবনের, স্মৃতিচারণমূলক একটি বই লিখার জন্য। লেখালেখির অভ্যাস থাকায় বই প্রকাশের লক্ষ্যে না হলেও আমি অনেক আগে থেকেই একটু একটু করে স্মৃতিকথা লিখছি। দেখা যাক কোনদিন বই আকারে প্রকাশ করা হয় কি না।
গত ২৪শে জুন ছিল আমার চাকুরীচ্যুতির ৬ বছর পুর্তি। দিনটি আমার জীবনের সবচেয়ে কস্টকর দিনগুলোর একটি। আমার লেখা সেই স্মৃতিচারণমূলক লেখার মধ্যে আমার “বরখাস্ত” নিয়ে একটি অধ্যায় রয়েছে, যার শিরোনাম উপরে দেয়া হয়েছে (“মনে হচ্ছিল… টেনে খুলছি …”)। সেখান থেকে কিছু অংশ গত ২৪শে জুন, অর্থাৎ আমার বরখাস্তের ৬ বছর পুর্তির দিনেই পোস্ট করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু, সেদিনের বাংলাদেশ-ভারত ৩য় ODI টা দেখার সবার যে আনন্দ, তাতে ভাটা পরতে পারে আশংকায় সেদিন আর এটা দেইনি। স্বাভাবিকভাবেই লেখাটি বেশ বড়; পুরোটা এখানে দেয়া বাস্তবসন্মত নয়। তাই, সেই অধ্যায়ের বিভিন্ন স্তবক থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু অংশ আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।
আপনাদের যে কোন মন্তব্য, সুপারিশ, উপদেশ, অনুরোধ স্বাগত জানাবো।
ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য অগ্রীম শুকরিয়া ও ধন্যবাদ।
——————————————————————
জি হাঁ, ঠিক তাই… মনে হচ্ছিল যেন নিজের শরীরের চামড়া নিজেই টেনে টেনে খুলে ফেলছি, ঠিক যেভাবে কোরবানীর সময়ে পশুর চামড়া কসাইরা টেনে টেনে ছিলে ফেলে। এটা কোন স্বপ্নের কথা নয়, বাস্তবের কথাই বলছি। অন্য কারো নয়, আমার নিজের অনুভূতির কথাই বলছি।
২০০৯ সালের ২৪শে জুন আনুমানিক বিকেল সাড়ে ৩টা বা ৪টা হবে তখন। আব্বা-আম্মার বেডরুমে বসা সবাই – আব্বা-আম্মা, আমার স্ত্রী ও সন্তানেরা। আমি বসে আমার চাকরি থেকে ‘‘বরখাস্ত’’ হবার চিঠিটি হাতে পাওয়ার ঘটনাটা বিস্তারিত বর্ণনা করছি, আর সময় নিয়ে আস্তে আস্তে ইউনিফর্ম এর শার্টের বুতাম খুলছি, বুটের ফিতা খুলছি, মোজা ও মোজার সাথে পায়ের ইলাস্টিক ইত্যাদি খুলছি। ইউনিফর্ম এর ট্রাউজারটা সন্ধ্যা পর্যন্ত খুলিনি – “আজ তো জীবনের শেষবারের মতো ইউনিফর্ম খুলছি, তাই যত দেরি করে খোলা যায়”, এমন একটা অনুভূতি কাজ করেছিল। নিজেই নিজের শরীরের চামড়া টেনে টেনে খুলছি বলে অনুভূত হচ্ছিল। বুকের ভিতর কি এক জ্বালা, কি যে অসহনীয় যন্ত্রণা তখন অনুভব করছিলাম। সেদিনকার, সেই সময়টার কষ্ট, ব্যথা, বেদনা, দুঃখ প্রকাশের কোন ভাষা নেই। জীবনের শেষবারের মতো ইউনিফর্ম খুলতে এত কষ্ট হবে তা কোনদিনও ভাবিনি। আর যেহেতু এটা হয়েছে আকস্মিক, অপ্রত্যাশিত এবং সম্পূর্ণ অন্যায় ও অস্বাভাবিক উপায়ে, অবৈধভাবে, তাই কষ্টটা অ-নে-ক বেশিই ছিল। আমার মা কেঁদে কেঁদে অস্থির, ছটফট করছিলেন। বাবা এতটাই আঘাত পেয়েছিলেন যে, অধিক শোকে পাথর হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। প্রায় সপ্তাহ খানেক কোনো কথাই বলেন নি বলতে গেলে। তিন দিন পর উনাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল। — বুকের ভেতরে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল, কিন্তু শান্ত ও স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করেছি – অন্য সকলের জন্য আমাকে শক্ত থাকতে হবে যে! — প্রায় ৩০ বছরের সামরিক জীবনে নিজেকে শক্ত রাখার যে ট্রেনিং পেয়েছিলাম তা কাজে লাগালাম প্রথম নিজ পরিবারের উপর, অত্যন্ত কঠিন ও করুণ এক অবস্থায়।
—
সময়টা ২০০৯ এর মে-জুন মাস। আমি তখন দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার অন্তর্গত খোলাহাটিতে বীর উত্তম শহীদ মাহবুব সেনানিবাসে ১৬ পদাতিক ব্রিগেড এর ব্রিগেড কমান্ডার এবং ওই ক্যান্টনমেন্টের স্টেশন কমান্ডার এর দায়িত্ব পালন করছিলাম।
—-
ছুটি থেকে ৩১শে মে ফিরে গিয়ে ১লা জুন যথারীতি সকালে অফিসে গেলাম। জিওসি (আমার বস) জানালেন, দু’দিনের (১ ও ২ জুন) মধ্যেই ব্রিগেড থেকে আমার বিদায়ের সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হবে এবং পরের দিন (৩ জুন) রংপুরে তিনি আমার ফেয়ারওয়েল লাঞ্চ এর আয়োজন করবেন এবং সেই রাতেই আমাকে আমার কর্মস্থল ত্যাগ করতে হবে। এর একদিন পর (৫ জুন) ঢাকায় যোগদান করতে হবে। আমি এত তাড়াহুড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বললেন, সেনাসদর থেকে এমনটাই বলা হয়েছে।
—
আমি বললাম যে, “আপনারা আমাকে ফেয়ারওয়েল দিয়ে মুভ অর্ডার (সামরিক বাহিনীতে একস্থান থেকে অন্যত্র সরকারি কাজে গেলে লিখিতভাবে দেয়া ‘গমণাদেশ’) ইস্যু করতে পারবেন। কিন্তু আপনারা আমাকে ক্যান্টনমেন্ট ছাড়তে বাধ্য করতে পারেন না যদি আমি “অবাঞ্চিত” (PNG) না হই। সেনাবাহিনীর যে কোন অফিসার যে কোন ক্যান্টনমেন্টেই যখন ইচ্ছা তখন অবস্থান করতে পারে।”
—
আমি বললাম যে, “সেনাবাহিনীর আইন অনুয়ায়ী আমি খোলাহাটি ক্যান্টনমেন্ট থেকে ঢাকায় বদলি যেতে হলে ২ দিন জার্নি পিরিয়ড, স্থায়ী বদলি বিধায় ৬ দিন জয়েনিং টাইম এবং মধ্যে ২ দিন সরকারি ছুটি থাকায় অতিরিক্ত ২ দিন, মোট ১০ দিন সময় পাওয়ার কথা। আমি পুরো সময়টাই এখানে কাটিয়ে তারপর ঢাকায় যাবো। এটা আমার বৈধ অধিকার।”
—-
বস্ পরে ফোনে জানালেন, সেনাসদরের আদেশ – কোন জয়েনিং টাইম দেওয়া হবে না, শুধু ২ দিন জার্নি পিরিয়ড দেওয়া হবে। আর, আমার বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে মুভ অর্ডার নিয়ে সেদিনই ক্যান্টনমেন্ট ত্যাগ করতে হবে, ক্যন্টনমেন্টে থাকা যাবেনা ।
—
এক রকম অনিশ্চয়তার মধ্যেই ২রা এবং ৩রা জুন আমার বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা চলতে থাকলো – দরবার, প্রীতিভোজ, কোয়ার্টার গার্ড পরিদর্শন, স্টেশন সদরের আনুষ্ঠানিকতা, ব্রিগেড ফেয়ারওয়েল ডিনার, চেয়ারম্যান হিসেবে স্কুলগুলো (আমি তিনটি স্কুলের চেয়ারম্যান ছিলাম) থেকে বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা ইত্যাদি। পরের দিন (৪ঠা জুন) দুপুরে রংপুরে আমার জন্য আয়োজন করা হয়েছিল জিওসি’র ফেয়ারওয়েল লাঞ্চ।
—
৪ঠা জুন রংপুর যাবার পথে আনুমানিক বেলা ১২টায় জিওসি ফোনে জানালেন, “ঢাকা” থেকে অনুমতি পাওয়া গেছে। আমি চাইলে জার্নি পিরিয়ডটা খোলাহাটিতেই কাটিয়ে যেতে পারি। আমি ধন্যবাদ দিয়ে ফোন রেখে দিলাম। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিলাম, সেদিন রাতের ট্রেনেই ঢাকা ফিরবো।
—
জিওসি’র অফিসে পৌঁছলাম। তিনি ঢাকায় যাবার ব্যাপারে আমার পরিকল্পনা জানতে চাইলে বললাম, “আমি আজই চলে যাবো। আমি কারো দয়া নিতে চাই না!” বস্ আশ্চর্য হয়ে চুপচাপ তাকিয়ে থাকলেন।
—
সন্ধ্যার পর থেকে অফিসাররা দলে দলে স্বপরিবারে আমাকে বিদায় দিতে আসছে, সকলেরই মন ভারাক্রান্ত, কারো কারো চোখ ভেজা। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা পর্যন্ত এসেছে । অকল্পনীয় এক দৃশ্য তখন আমার সরকারি বাসভবনে।
—
আনুমানিক ৪০/ ৪৫ জন সেদিন স্টেশনে আমাকে বিদায় জানাতে এসেছিল। স্টেশনে সে এক করুণ দৃশ্য – সব মানুষ বিস্ময়ের সাথে দেখছে আমাকে বিদায় দেয়ার দৃশ্য। এত মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে ট্রেনে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম।
—
৭ই জুন লগ এরিয়া HQ এ রিপোর্ট করলাম। জানলাম লগ এরিয়া কমান্ডার আমার সংযুক্তির কারণ কিছুই জানেন না! সামরিক সচিবের সাথেও ফোনে কথা বললাম। তিনিও কিছুই জানেন না বলে জানালেন।
সেনাপ্রধান (জে. মইন) এর সাথে দেখা করা বা ফোনে কথা বলার চেষ্টা করেছি কয়েকবার; সম্ভব হয়নি। ১৫ই জুন নতুন সেনাপ্রধান হলেন জে. মুবিন। ১৭/ ১৮ জুনে উনার সাথে দেখা করলাম। জানতে চাইলাম, কি কারণে আমাকে সংযুক্ত করা হয়েছে? তিনি নিজেও জানেন না বলে জানালেন! — বিনয়ের সাথেই বললাম, “স্যার, আমার যদি কোন অপরাধ থেকে থাকে তাহলে তদন্ত করুন। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে বিচার করুন। বিচারে যে কোন শাস্তি আমি মাথা পেতে নিতে প্রস্তুত। কিন্তু এভাবে কোন কারণ না দেখিয়ে কোন দায়িত্ব বা কোন কাজ ছাড়া বসে থাকা আমার জন্য অস্বস্তিকর ও লজ্জাজনক।” সেনাপ্রধানের চেহারায় এক অসহায়ত্বের চাহনি।
—
দৈনিক অফিস শেষে ইউনিফর্ম খুলি আর নিজ মনে চিন্তা করি যে আগামীকাল আবার ইউনিফর্ম পরবো তো?! অতীত অন্য অনেককে দেখে সেই অভিজ্ঞতার আলোকেই এমনটাই মনে হচ্ছিল। বলা বাহুল্য, প্রায় ৩০ বছর (১৯৭৯-২০০৯) সামরিক-বেসামরিক সকল গোয়েন্দা বাহিনী সমন্বিত ও সম্মিলিতভাবে বাইনোকুলার, মাইক্রোস্কোপ, টেলিস্কোপ ইত্যাদি দিয়েও আমার বিরুদ্ধে একচুল পরিমাণ কোন অপরাধ এর তথ্য খুঁজে পায়নি। তবুও আমি যেন এক মুর্তিমান “আতঙ্ক”! ১৯৯৬-২০০১ এ মেজর ছিলাম বিধায় তখন আমাকে নিয়ে বেশি “আতঙ্ক” ছিলনা বলে মনে হয়! তাই, ‘দয়া করে’ তখন আমাকে “অর্ধচন্দ্র” দান করা হয়নি। তবে, পুরো সময়টাই আমার লে. কর্নেল র্যাং কে প্রমোশন আটকে রাখা হয়েছিল। সে সময়ে একবার “অর্ধচন্দ্র” দান করার সুযোগ থাকতেও তা “কাজে না লগিয়ে” এই “অপয়া মেজর”কে পদোন্নতি পেয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পর্যন্ত উন্নীত হবার সুযোগ দেয়া হয়েছে! ২০০৯’এ কি আর চান্স নেয়া যায়!! Enough is enough!!
—
এলো সেই ‘অভিশপ্ত’ দিন, ২৪শে জুন। — আনুমানিক সাড়ে ১২টায় লগ এরিয়া কমান্ডার এর ফোন। বললেন, “আযমী, কোথায় তুমি? একটু অফিসে আস তো”। আমি জানতে চাইলাম, “স্যার, চিঠি (!) কি এসে গেছে?”
—
খামটা আমার হাতে তুলে দিয়ে বললেন, “খুলো”। — আমি খুলতে উদ্যত হয়ে বললাম, “স্যার, এটা হতে পারে একটা ঐতিহাসিক চিঠি। আপনার এন্টি-কাটারটা দিন, একটু যত্ন করে খুলি।” — খামটা খুললাম, পড়লাম, আর বুকের মাঝে প্রচন্ড এক ঝাকুনি খেলাম! তবে, আল্লাহর রহমতে নিজেকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রেখে বললাম, “আলহামদুলিল্লাহ”। ‘‘স্যার,আল্লাহর যা ইচ্ছা তাই হয়েছে। আল্লাহ নিশ্চয়ই এর মাঝে আমার জন্য মঙ্গল রেখেছেন”।
—
সেনাপ্রধানের অফিসে ফোন করলাম। পিএ ধরলো, জানালো, চীফ বিএমএতে (সম্ভবত) ৬০তম লং কোর্সের পাসিং আউট প্যারেডে গেছেন। — তখন কোত্থেকে যেন একিউ এর অফিসে অনেক অফিসার জড়ো হয়েছে! — আমি হাসতে হাসতেই সবার দিকে চোখ বুলিয়ে বললাম “I’ve been dismissed”। — ওরা বিশ্বাস করছিল না – এটা কি করে সম্ভব?! কোন অপরাধ নেই, কোন অভিযোগ নেই, কোন তদন্ত নেই, কোন বিচার নেই – অথচ ডিসমিস?! ABSURD!! আমি চিঠিটা খাম থেকে বের করে দিলাম, ওরা সবাই একে একে দেখলো। এরই মধ্যে একজন অফিসার আবার আমার অনুমতি নিয়ে মোবাইলে ছবি তুললো আর বললো, “স্যার, এই ছবিটা এক সময় ঐতিহাসিক ছবি হতে পারে”।’সূত্র- আব্দুল্লাহহিল আমান আযমির ফেসবুক স্ট্যাটাস
চাঁদপুর টাইমস : ডেস্ক/ডিএইচ/২০১৫।