আপোসহীন ও রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্মলাভ করেছে আমাদের সশস্ত্রবাহিনী। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জ্বীবিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের সবার গর্ব ও অহংকারের প্রতিষ্ঠান, বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিতে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি প্যারেড গ্রাউন্ডে ৭৩তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদী কোর্স এবং ৪৪তম বিএমএ স্পেশাল কোর্সের ক্যাডেটদের কমিশন প্রদান অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে ১৯৪ জন ক্যাডেট বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অফিসার হিসেবে কমিশন লাভ করেন।
কমিশনপ্রাপ্তদের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা আজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বৃহৎ কর্মজীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন। আপনাদের ওপর ন্যস্ত হতে যাচ্ছে দেশমাতৃকার মহান স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনে আপনাদের সর্বদা সজাগ ও প্রস্তুত থাকতে হবে। শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করাই হবে আপনাদের জীবনের একমাত্র ব্রত।
কমিশনপ্রাপ্তদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, মনে রাখতে হবে, আপনারা এদেশের জনগণের সুখ-দুঃখ ও হাসি-কান্নার সমান অংশীদার। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি দেশমাতৃকার সার্বিক সেবায় এখন থেকে আপনারাও ব্রতী হবেন, এই প্রত্যাশা রাখি।
সেনাবাহিনীর প্রশংসা করে তিনি বলেন, দেশের যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুঃসময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সব সময়ই বিপন্ন মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। দেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষা ও আমাদের জাতীয় উন্নয়নে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার কাজেও সশস্ত্র বাহিনীর তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
সেনাবাহিনীর সদস্যদের ত্যাগ ও সাহসী ভূমিকার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি বিরাজ করছে এবং উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় সেনাবাহিনীর অবদানের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিশীল দেশ। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সর্বাধিক শান্তিরক্ষী পাঠানোর মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বশান্তি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। আমাদের সেনাবাহিনী দেশে ও বিদেশে অর্পিত দায়িত্ব পালনে স্বীয় দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের জন্য সব মহলের প্রশংসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এ সুনাম অক্ষুণ্ন রেখে সেনাবাহিনীকে উত্তরোত্তর উন্নতির দিকে এগিয়ে নিতে হবে। বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের মানুষ শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জানবে, এটিই আমার প্রত্যাশা।
সেনাবাহিনীকে অত্যাধুনিক ও সময়োপযোগী করে গড়ে তুলতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ৭ বছরে আমাদের সরকার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে একটি গতিশীল, চৌকস এবং যুগোপযোগী বাহিনীতে পরিণত করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সেনাবাহিনীতে নতুন নতুন ডিভিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আমাদের সময়োচিত পদক্ষেপের ফলে সেনাবাহিনীর অপারেশনাল সক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন করে আমরা সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর উন্নয়ন করে যাচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য, বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীকে বিশ্বের বুকে আরও মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে তুলে ধরা।
আধুনিক ও চৌকস সেনাবাহিনী গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির জনক স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ ও সাংগঠনিক কাঠামো উন্নয়নের জন্য মিলিটারি একাডেমি, কম্বাইন্ড আমর্ড স্কুল ও প্রতিটি কোরের জন্য ট্রেনিং স্কুলসহ আরও অনেক সামরিক প্রতিষ্ঠান ও ইউনিট স্থাপন করেছিলেন।
দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ২০২১ সালের আগেই আমরা বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করব।
নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০৬:০৩ পিএম, ১০ ডিসেম্বর ২০১৫, বৃহস্পতিবার
এমআরআর