বিনোদন

‘সেদিন ছেলেটিকে দেখতে ২৫ বার পূজামণ্ডপে গিয়েছিলাম’

আমি বড় হয়েছি টাঙ্গাইলের মির্জাপুর ভারতেশ্বরীতে। ওখানেই পড়াশোনা করেছি। আমার বাবা-মা ঢাকায় থাকতেন। আমাদের বাসা পশ্চিম ধানমণ্ডি। বাবা-মা দুজনেই যাত্রাপালার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দুর্গাপূজার সময় মির্জাপুরে যেতেন। তখন পরিবারের সবার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ তৈরি হতো।

কিন্তু আবহটা ছিল উৎসবের। প্রতি পূজায় আমি নাচ-গানে অংশগ্রহণ করতাম। আর পূজার দুই মাস আগেই রিহার্সেল শুরু হতো। তার মানে হলো- আমার পূজা শুরু হতো আরো দুই মাস আগেই। কি শাড়ি পরব, কোনো চুড়ি হাতে দিব, কীভাবে সাজব; এই নিয়ে ছিল অনেক নানা রকম চিন্তা-ভাবনা। সেই অনুযায়ী সবকিছু কেনাকাটা করা।

কালীগঙ্গা নদী পার হয়ে যেতে হতো পূজার মণ্ডপে। এ কথা তো সবারই জানা ভারতেশ্বরীতে ঘটা করে দুর্গাপূজা উদযাপন করা হয়। অসংখ্য মানুষের সমাগম হয় মণ্ডপে। আর প্রতিমা সাজানো হয় একেবারে মহাভারতে বর্ণিত প্রতিমার মতো। প্রতিমাকে সাজানো হতো সোনা-রূপার গয়না দিয়ে। আর পরানো হতো আসল বেনারসি শাড়ি, সব কিছু দেখলে মনে হতো স্বপ্নের প্রতিমা দেখছি। বেনারসিতে সোনা রূপার কাজ করা থাকতো। বড় বাড় রূপার থালায় ভোগ দেয়া হতো।এ সবের আয়োজন করতেন, দানবীর রনদা প্রসাদ সাহা রায় বাহাদুর।

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর ও তার সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান কুমুদিনী কমপ্লেক্স, ভারতেশ্বরী হোমস,কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজ, নার্সিং স্কুল ও বিএসসি নার্সিং কলেজ, কুমুদিনী কল্যাণ সংস্থা এসবই তো উনার। আমি দেখেছি, লাখ লাখ মানুষ একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া করতো। আমিও তাদের সঙ্গে বসে খেয়েছি। অন্যরকম এক অনুভূতি। মনে পড়লে ফিরে যেতে ইচ্ছা করে সেই সময়ে।

একটু একটু করে বড় হলাম। পূজা উদযাপনও একটু একটু করে পাল্টাতে থাকল। আমার বয়স তখন পনের কি ষোল। কালীগঙ্গা পার হয়ে মণ্ডপে গিয়েছিলাম। একটি ছেলেকে দেখে খুব মুগ্ধ হয়েছিলাম। মণ্ডপ থেকে ফিরে এসে আবার গিয়েছিলাম। তাও একবার দু’বার নয় ছেলেটিকে দেখতে ২৫ বার গিয়েছিলাম।

নৌকায় পার হতাম কালীগঙ্গা। গেলে কি হবে ছেলেটিকে কিছুই বলতে পারিনি। ওর সঙ্গে ঘুরতে ইচ্ছে করছিল পুরো মণ্ডপে। কিন্তু আমি ছিলাম একটা ভীতুর ডিম! আর ওই সময় তা খুব সহজও ছিল না। শেষে আর কি, মনে মনেই যা…।

এখন দেখি ছেলে মেয়েরা কত সহজেই কত কিছু করতে পারে, বলতে পারে, দেখতে পারে। আমাদের সময় এ সব মোটেও সহজ ছিল না।

আমি ছোট সময় থেকেই শৃঙ্খলিত জীবন-যাপন করার চেষ্টা করেছি। দুষ্টামী যে করিনি তা নয়, তবে রাতে দেরি করে বাসায় ফেরা, অসময়ে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেয়া, বাবা-মায়ের কথা অমান্য করা; এগুলো কখনো করিনি। সে পূজা হোক বা অন্য যে কোনো উৎসব হোক।

দুর্গাপূজা এলে আমি নতুনভাবে কাজ করার অনুপ্রেরণা পাই। দুর্গাকে নারী আর তার শক্তিকে নারীর শক্তিরূপে যখন পূজিত হতে দেখিন তখন আন্দোলিত হই। সাহস পাই।

এখন আর টাঙ্গাইলের মির্জাপুর ভারতেশ্বরীতে খুব যাওয়া হয় না। আজকের আমি ভারতেশ্বরী হোমসের মেঝেতে চক দিয়ে লেখতে লেখতে বড় হয়েছি। সে সময়ে দেখা প্রকৃতি-পরিবেশ সব মনেও লেখা রয়ে গেছে। সেখানে দেখা পূজা আমার কাছে সেরা পূজা হয়ে আছে।

এবার দশমীতে ছেলের সঙ্গে মালয়েশিয়াতে থাকব। মন তো ওড়ে, সে ঠিকই আসবে মির্জাপুরের ভারতেশ্বরীতে। মরে যাওয়া কালীগঙ্গা প্রবাহিত হবে মনে। শান্তির পলি জমবে। এইতো শান্তি! প্রতিমা ফিরে আসুক মানুষ আর মানুষে তৈরি হোক মানবিক সমাজ।
অনুলিখন : স্বরলিপি

নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৮:০০ এএম, ০৯ অক্টোবর ২০১৬, রোববার
ডিএইচ

Share