চাঁদপুর-শরীয়তপুরে হচ্ছে স্বপ্নের সেতু

চাঁদপুর ও শরীয়তপুর জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি মেঘনা নদীতে একটি সেতুর। অবশেষে এই নৌ-রুটে দুই জেলাবাসীর সেই স্বপ্নের সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে। সে জন্য সেতু বিভাগকে সম্ভাব্যতা যাচাই (ফিজিবিলিটি স্টাডি) করতে বলা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে বিশেষজ্ঞ কমিটি। সেই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম নিজ জেলা চাঁদপুরে আসলে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ তথ্য জানান।

ড. শামসুল আলম জানান, নদীতে টানেল নির্মাণ সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি। এতে নদী রক্ষা পায়। সেতু নির্মাণে যে অর্থ ব্যয় হয়, টানেলে খরচ কয়েকগুণ বেশি। এ মুহূর্তে টানেল নির্মাণের ব্যয় বহন করা সম্ভব নয়। চাঁদপুর-শরীয়তপুর নৌরুটে একটি ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা হচ্ছে। এর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞ কমিটি প্রস্তাবিত ব্রিজের লাভ-ক্ষতি, প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়তা, যাতায়াত সুবিধা-অসুবিধা, পরিবেশ রক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখবে। এরপর তারা রিপোর্ট দেবে। সেই রিপোর্টের আলোকে ব্রিজ নির্মাণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। এর ফলে মুন্সীগঞ্জ-মতলব-চাঁদপুর-শরীয়তপুর-ভোলা আঞ্চলিক মহাসড়ক এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হবে।

শুধু তাই নয়, এই ব্রিজ নির্মিত হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ২২ জেলা, সিলেটের চার জেলা এবং চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলার সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এছাড়া তিনটি সমুদ্রবন্দরের মধ্যে সড়কপথে পণ্য পরিবহণে সময় কমিয়ে আনাও সম্ভব হবে। এর ফলে দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এই সেতুর একপ্রান্তে চাঁদপুরের হরিণা ফেরিঘাট আর অন্যপ্রান্তে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার আলুবাজার ফেরিঘাট। দুই ফেরিঘাটের মধ্যে দূরত্ব নদী ও চর মিলিয়ে ১০ কিলোমিটার। ইতোমধ্যে পদ্মা নদীর শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের নাওডোবা থেকে শরীয়তপুর সদর পর্যন্ত চারলেন সড়ক নির্মাণের ডিপিপি প্রস্তুত করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর।

সড়ক বিভাগের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আলুবাজার থেকে হরিণা ফেরিঘাট পর্যন্ত নদী ও চর মিলিয়ে ১০ কিলোমিটার সেতু নির্মাণ করা হলে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের মধ্যে যোগাযোগ সহজ হবে। চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরের পণ্য সড়কপথে পরিবহণের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সেতু বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আলুবাজার ফেরিঘাট থেকে হরিণাঘাট ফেরিঘাট পর্যন্ত সেতুর দৈর্ঘ্য ১০ কিলোমিটার হলেও এখানে মূল সেতুর দৈর্ঘ্য মাত্র ২ দশমিক ৬৫ কিলোমিটার। বাকিটা চর এলাকা। এখানে নদীর গভীরতাও প্রায় ৬৫ মিটার।

এ ব্যাপারে চাঁদপুরের সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, সরকারের আইডব্লিউএম বিভাগসহ আরো অন্য কয়েকটি বিভাগের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এ বিষয়ে বাস্তবতা বলা সম্ভব। তবে সেতু বিভাগ ভালো বলতে পারবে। ইতোমধ্যে শরীয়তপুর থেকে মাপজোখ করা হয়েছে।

চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট আলহাজ জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিম জানান, সেতুটি হলে চাঁদপুর ও শরীয়তপুরেরই শুধু লাভবান হবে না, সারাদেশে অর্থনীতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিবর্তনে বিপ্লব সাধিত হবে।

চাঁদপুর করেসপন্ডেট

Share