সেক্টর কমান্ডার আবু ওসমান চৌধুরী’র্ মৃত্যুতে জেলা জাসদের শোক

মুক্তিযুদ্ধের ৮নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার ও চাঁদপুর জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক লে.কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী (৮৫) আর নেই। ৫ সেপ্টেম্বর শনিবার সকাল ৮ টায় তিনি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল-সিএমএইচে মৃত্যুবরণ করেন ( ইন্না…রাজেউন) ।

এদিন বাদ আছর ক্যান্টম্যান্ট কেন্দ্রিয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সশস্ত্র বাহিনীর গার্ড অব অনার, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সেনাবাহিনীর শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তার মরদেহ বনানী বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

জাতির এ শ্রেষ্ঠ সন্তান আবু ওসমান চৌধুরীর মৃত্যুতে চাঁদপুর জেলা জাসদের সভাপতি অধ্যাপক হাসান আলী সিকদার ও সাধারণ সম্পাদক মো.মনির হোসেন মজুমদার গভীর শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।

চাঁদপুর জেলা জাসদের নেতৃবৃন্দ আবু ওসমান চৌধুরীর স্বাধীনতা যুদ্ধে তাঁর অবদানের কথা শ্রদ্দার সাথে স্মরণ করেন ।

আবু ওসমান চৌধুরী ১৯৩৬ সালের ১ জানুয়ারি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার মদনেরগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে বিএ পাস করার পর ১৯৫৮ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন পান। ১৯৬৮ সালের এপ্রিল মাসে তিনি পদোন্নতি পেয়ে মেজর হন। ১৯৬০ সালে কুমিল্লার মৌলভী পাড়ার মনসুর আহম্মেদের বড় মেয়ে নাজিয়া খানমের সঙ্গে আবু ওসমানের বিয়ে হয়। নাসিমা ওসমান ও ফাওজিয়া ওসমান তাদের দু’মেয়ে।

একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে যখন ঢাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞ অপারেশন সার্চ লাইট শুরু হয়, সেই খবর আবু ওসমান পান কুষ্টিয়া সার্কিট হাউজে বসে। সে সময় তিনি ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের চতুর্থ উইংয়ের কমান্ডার হিসেবে চুয়াডাঙ্গার দায়িত্বে ছিলেন।

পরদিন সকালে তিনি কুষ্টিয়া থেকে চুয়াডাঙ্গায় পৌঁছান এবং বিদ্রোহ ঘোষণা করে একদল সৈনিককে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। পরে তাকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের ৮ নম্বর সেক্টরের কমান্ডারের দায়িত্ব দেয়া হয়। ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদ গঠিত হলে আবু ওসমান চৌধুরী এক প্লাটুন সৈন্য নিয়ে মন্ত্রিপরিষদকে গার্ড অব অনার দেন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবু ওসমান চৌধুরীকে লেফটেনেন্ট কর্নেল হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয় এবং বঙ্গবন্ধু তাকে আর্মি সার্ভিস কোরের (এএসসি) পরিচালকের দায়িত্ব দেন।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে আবু ওসমান চৌধুরীকে বিজেএমসির চেয়ারম্যান করা হয়। পরে তাকে চাঁদপুর জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বাধীনতাযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ২০১৪ সালে আবু ওসমান চৌধুরীকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করেন।

আবদুল গনি , ৬ সেপ্টেম্বর ২০২০