আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সোমবার বিকেলে এক অনুষ্ঠানে তিনি এই দাবি জানান। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে খালেদা জিয়া বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হলে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। তাহলে কিছুটা ভালো আশা করতে পারি। কিন্তু হাসিনা সেনাবাহিনী দেবে না। কারণ তারা সেনাবাহিনীকে মাঠে নামাতে চায় না।’
বলেও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
এ সময় দলীয় প্রতীকে পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠানকে ‘সরকারের ষড়যন্ত্র’ বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
শেখ হাসিনা নিজেও বিধি ভেঙেছেন
নির্বাচন কমিশনকে মেরুদণ্ডহীন আখ্যা দিয়ে তাদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে খালেদা বলেন, ‘প্রতিনিয়তই আওয়ামী লীগের লোকেরা আচরণবিধি ভঙ্গ করছে। এর বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। শেখ হাসিনা নিজেও বিধি ভেঙেছেন।’
তিনি বলেন, ‘পুলিশ ও সিভিল সার্ভিসে অনেক ভালো লোক আছে যারা নির্বাচন সুষ্ঠু করতে চায়। কিন্তু সরকারের প্রভাবের কাছে তারা অসহায় হয়ে পড়েছে। কারণ ওপরের নির্দেশ না মানলে তাদের চাকরি চলে যাবে, নির্যাতনের শিকার হতে হবে।’
অনির্বাচিতরা দেশ চালাবে, নতুন নতুন আইন করবে
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের কারণ ব্যাখ্যা করে খালেদা বলেন, ‘স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের স্থানীয় একটি আমেজ থাকে। সেজন্য প্রার্থীরা নির্বাচনে গেছেন। কিন্তু আগের নির্বাচনগুলোতে কি নমুনা দেখা গেছে? উপজেলায় বিএনপি প্রথম ধাপে এগিয়ে গেলে পরের ধাপে তা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জনগণ বিএনপির প্রার্থীদের ভোট দিয়ে জয়ী করলো। কিন্তু সব মেয়রদের নামে মিথ্যে মামলা দিয়ে কারাগারে নেওয়া হয়েছে। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ক্ষমতায় থাকতে পারবে না, কিন্তু অনির্বাচিতরা দেশ চালাবে, নতুন নতুন আইন করবে।’
বিএনপি প্রধান বলেন, ‘দেশে এই মুহূর্তে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নেই। ২০০৮ সালের পর থেকে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হয়নি। আর ২০১৪ সালের পর থেকে তা আরো খারাপ হয়েছে। বিএনপি কোনো নির্বাচনই বর্জন করতে চায় না। কিন্তু আমরা জানতাম ৫ জানুয়ারির ওই নির্বাচনে গেলে আমাদের কোনো এজেন্টকেও বসতে দেবে না। জনগণকে ভোট দিতে দেওয়া হবে না। সেজন্য যায়নি।’
নৌকা ডুবতে বসেছে
খালেদা জিয়া বলেন, ‘নৌকা ডুবতে বসেছে। ভোট দিতে পারলে জনগণ ধানের শীষ ছাড়া ভোট দেবে না।’ পৌর নির্বাচনে ভোট প্রয়োগ করতে জনগণকে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানান খালেদা জিয়া।
সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এ সময় খালেদা জিয়া এক-এগারোর সময়ে বিএনপি ও জিয়া পরিবারের ওপর নির্যাতন-অত্যাচার এবং তার ওপর যেসব চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে সেগুলোর বর্ণনা দেন।
উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি
দেশের সার্বিক উন্নয়নে সবক্ষেত্র ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিচার বিভাগ ঢেলে সাজাতে হবে অর্থাৎ দলীয়করণ নয়, নিরপেক্ষ যোগ্যদের দিয়ে স্বাধীন বিচার বিভাগ করতে হবে। যারা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবেন। প্রশাসন নিরপেক্ষ হবে। কে আওয়ামী লীগ, কে বিএনপি তা বিচার হবে না। বিচার বিশ্লেষণ হবে তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতা অনুযায়ী।’
দেশ পরিচালনায় সরকারের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আওমী লীগের ভুলনীতির কারণে দেশের শিল্পকারখানাগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। দেশ এখন সন্ত্রাসের লুটপাটের স্বর্গরাজ্য। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে লুটপাট করে দেশকে শেষ করে দেওয়া হয়েছে।’
বিডিআর বিদ্রোহ : সব জানতো হাসিনা
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় সরকারকে দায়ী করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘বিডিআর বিদ্রোহের বিষয় হাসিনা সব জানতো। মঈন (তৎকালীন সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদ) কেন নিজের অফিসে না বসে যমুনায় গিয়ে বসে থাকলো। সেনারা বিপদে পড়েছে জেনে নিজের ক্ষমতাবলে কেন ফোর্স পাঠালো না?’
দেশ গড়তে একাত্তরের মতো আবারো মুক্তিযোদ্ধাদের জেগে ওঠার আহ্বান জানান খালেদা জিয়া।
মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে এই সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধারা অংশ নেন। বক্তব্য রাখেন- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজুলল হক মিলন, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান।
নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ১০:২৩ পিএম, ২১ ডিসেম্বর ২০১৫, সোমবার
এমআরআর