চাঁদপুর

৮ম শ্রেণি থেকে স্কুল পালানো ছেলেটি আজ উপ-সচিব

মেরে, অপমান করে বা গালি দিয়ে মানুষ করা যায় না

এটি একটি সত্য ঘটনা ।

অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আমি । স্কুলে যাই না । ছোট একটি দোকানে বসি । বাবা বসতে দেন না । বলেন স্কুলে যাও। কিন্তু স্কুল ভালো লাগে না। পুরো গ্রামে বা চরে ঘুরে বেড়াতে ভালো লাগে । প্রায় তিন মাস স্কুলে যায় নি । বাবা মায়ের সব চেষ্টা বৃথা গেল। এক দিন বাবা দোকানে বসিয়ে বাজারে গেল মানে কৌশলে স্কুলে গেলেন। প্রধান শিক্ষককে সব বললেন। তিনি পাঁচ ছয় জন ছাত্র পাঠালেন । তারা কৌশলে দোকান ঘেরাও করলেন । আমাকে বললেন চলো স্কুলে । আমি রাজি না । তারপর সবাই মিলে ধরে, পাঁজা কোলা করে ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে স্কুলে নিয়ে গেল। সারা পথে আমি চিৎকার করছি । কিন্তু আমার বন্ধুদের মন গলেনি। সোজা প্রধান শিক্ষকের কাছে হস্তান্তর করলেন । তিনি আমাকে পাশের একটি রুমে রেখে দরজা বন্ধ করে দিলেন। কিছুক্ষণ পর অনেকগুলি মোটা বেত নিয়ে রুমে প্রবেশ করলেন । আমার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো। তবে সাহস হারাই নি । কৌশলি হলাম। স্যার কে, নমস্কার দিলাম । বললেন, এতোদিন স্কুলে আসোছনি কেন ? বললাম, ভাল লাগে না তাই আসি নি । বললো ভালো লাগা শিখাচ্ছি এখন !! বললাম, স্যার একটা কথা আছে । বললো কী বলো । বললাম, কাল থেকে আসবো আজ যদি না মারেন । আর মারলে কখনো আসবো না । মরি গেলেও না । শিক্ষক মারেন নি। বললেন যা, কাল থেকে স্কুলে আসো।

এর পরের কাহিনী যে আমি X প্লাস X সমান 2X কিংবা X গুন X সমানও 2X জানতাম, সেই আমি কোচিং বিহীন বা প্রাইভেট বিহীন (টাকার অভাবে) পড়াশোনায় এস.এস.সি তে স্টার মার্কসহ উপজেলায় প্রথম, এইচ.এস.সি তে কুমিল্লা বোর্ডে ১১তম স্ট্যান্ড এবং পরে ঢা:বি তে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স করে বিসিএস(প্রশাসনে) বর্তমানে সরকাররের উপসচিব । আর আমার ঐ ধরে আনা বন্ধুরা মধ্য প্রাচ্যে জব করে ও ইমোতে কল দিয়ে স্মৃতিচারণ করে ।

অরিত্রির আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি । তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা রহিলো।

Share