প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা, শিল্পী ও অভিনেতা সুভাষ দত্ত ১৯৩০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুরের মুনশিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাসস্থান বগুড়া জেলার চকরতি গ্রামে। সুভাষ দত্ত দিনাজপুর সুরেন্দ্রনাথ কলেজে আইএসসি পাস করে ভারতের বোম্বেতে চলে যান এবং সেখানে কমার্শিয়াল আর্ট শেখেন ও বোম্বের চলচ্চিত্রাঙ্গনের সঙ্গে পরিচিত হন।
ঢাকায় ফিরে ১৯৫৬ সালে এভারগ্রিন পাবলিসিটি নামের একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায় যোগ দেন। ঢাকার চলচ্চিত্র জগতে তার পদার্পণ ঘটে ১৯৫৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত দেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এর পোস্টার ডিজাইনার হিসেবে।
১৯৫৮ সালে চলচ্চিত্র পরিচালক এহতেশামের ‘এ দেশ তোমার আমার’ চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। এরপর কয়েকটি চলচ্চিত্রে কৌতুকাভিনেতা হিসেবে অভিনয় করে প্রশংসা পান। ‘মাটির পাহাড়’ চলচ্চিত্রে শিল্প নির্দেশনার মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্র পরিচালনার জগতের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে যান। সুভাষ দত্ত পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘সুতরাং’ ১৯৬৪ সালে মুক্তি পায়। এ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে চিত্রনায়িকা কবরীর অভিষেক ঘটে। এটি বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র হিসেবে আন্তর্জাতিক সম্মাননা লাভ করে।
১৯৬৮ সালে ‘আবির্ভাব’ চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে নির্মাণ করেন ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’। ১৯৭৭ সালে আলাউদ্দিন আল আজাদের বিখ্যাত উপন্যাস ‘২৩ নম্বর তৈলচিত্র’ অবলম্বনে ‘বসুন্ধরা’ নামে তিনি যে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন,তা আজও চলচ্চিত্র সমালোচকদের কাছে প্রশংসিত।
১৯৭৭ সালে ‘বসুন্ধরা’ চলচ্চিত্রটি সেরা পরিচালক ও প্রযোজকসহ মোট পাঁচটি পুরস্কার লাভ করে। এছাড়া সুভাষ দত্ত পরিচালিত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ কাগজের নৌকা, আয়না ও অবশিষ্ট, আবির্ভাব, বলাকা মন, সবুজ সাথী, পালাবদল, আলিঙ্গন, বিনিময়, আকাক্সক্ষা, সকাল সন্ধ্যা, ডুমুরের ফুল ইত্যাদি। সুভাষ দত্ত একাধারে চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালক, চিত্রনাট্যকার ও শিল্প নির্দেশক হিসেবে কাজ করেছেন এবং এর প্রতিটি ক্ষেত্রেই ঈর্ষণীয় সাফল্য পেয়েছেন।
এছাড়া ১৯৭২ সালে ঢাকার আরণ্যক নাট্যদলের প্রথম প্রযোজনা ‘কবর’ নাটকে প্রথমবারের মতো মঞ্চাভিনয় করেছিলেন তিনি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সুভাষ দত্ত ১৯৯৯ সালে ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। ২০১২ সালের ১৬ নভেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন সুভাষ দত্ত।
বার্তা কক্ষ,১৬ নভেম্বর ২০১৯