সুবিধা বঞ্চিত কুমিল্লার দেবীদ্বারে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুল

প্রয়োজনীয় সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে নানা সমস্যায় জর্জরিত কুমিল্লার দেবীদ্বারে অবস্থিত বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী স্কুল ‘রাজামেহার প্রতিবন্ধী কমপ্লেক্স (আদর্শ বিদ্যালয়)।

কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার উপজেলার রাজামেহার গ্রামে অবস্থিত উপজেলার একমাত্র বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুলটিতে রয়েছে শ্রেণি কক্ষ সংকট। শুধু শ্রেণীকক্ষই নয় টেবিল চেয়ার, বেঞ্চ, আসবাব পত্র এমনকি শিক্ষা উপকরণেরও সংকট। অভাব রয়েছে যানবাহন ও জায়গার। এতেকরে যথাযথ শিক্ষা ব্যবস্থা ব্যহত হচ্ছে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুলটির।

সাধারণ বিদ্যালয়গুলোতে কম্পিউটারর শেকে শুরু করে তথ্য প্রযুক্তি সম্পন্ন ক্লাসরুম চালু হলেও এ উপজেলার বুদ্ধি প্রতিবন্ধীদের একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে নেই একটি কম্পিউটারও।
২০১৫ সালে ১৫ শতক জমিতে নির্মিত একটি টিনসেডের ভাড়া ঘরে ৩৫ জন শিক্ষার্থী আর ১০জন শিক্ষক নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে এ প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে এই স্কুলে রয়েছে ২৫ জন শিক্ষক এবং ৩১৭ জন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী। দেবীদ্বার উপজেলা ছাড়াও অন্যান্য জায়গা থেকে প্রতিবন্ধীরা নিয়মিত আসছে প্রতিষ্ঠানটিতে।

সকাল দশটায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন আর জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় পাঠদান কার্যক্রম, চলে আড়াইটা পর্যন্ত।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠার পর স্থানীয় উদ্যোগে পরিচালিত হয়। ২০১৬ সাল থেকে সমাজসেবা মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত ‘সুইড বাংলাদেশ’ এ স্কুলটির দায়িত্বভার গ্রহণ করে এবং কিছু শিক্ষার্থীকে শিক্ষা ভাতা দেওয়া চালু করে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটিতে আনুসঙ্গিক কোনো সুযোগ সুবিধা তৈরি হয়নি। শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তি কিংবা স্কুল ফিডিং প্রকল্পের আওতায় আসেনি এখনো।

অবিভাবক হামিদা বেগম ও শিল্পী বেগম জানান, প্রতিবন্ধী শিশুদের ধরে রাখার মতো স্কুলটিতে তেমন কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে গেলে তারা সেখানে থাকতে চায় না। তারা জানান, পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন ক্রীড়া ও বিনোদনের ব্যবস্থা থাকলে শিশুরা সেখানে পুরো সময় কাটাতে পারতো।

স্কুলে শিক্ষার্থীদের জন্য স্ট্যান্ড সাইকেল, প্যারালালবার, পিটি প্যারেডের জন্য ঢোল, হারমোনিয়ামসহ অন্যান্য সামগ্রী থাকলে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা আনন্দ নিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারত।

পর্যাপ্ত টেবিল চেয়ার না থাকায় গাদাগাদি করে বসে ক্লাস করতে হয় শিক্ষার্থীদের।

এখানকার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী তানজিনা জানায়, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তির সুবিধা পেলেও তারা পায় না। পাশের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দুপুরে নিয়মিত বিস্কুট পেলেও তারা পাচ্ছে না। তাদের স্যারেরা মাঝেমাঝে বিস্কুট দিয়ে থাকেন।

বর্তমানে প্রস্তুতিমূলক, প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, বৃত্তিমূলক ও গৃহভিত্তিক পর্যায়ে ২৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে বিশেষায়িত এই প্রতিষ্ঠানটিতে। তবে দূরের শিক্ষার্থীদের যাতায়তে পরিবহণ সংকটের কারণে অনেক শিক্ষার্থী নিয়মিত আসছে না।

এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি রাকিবা বানু বলেন, ‘যে উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি শুরু করেছিলাম সেটা এখোনো পুরোপুরি সফলতা পায়নি। নানা সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় শিক্ষা কার্যক্রম চালানো যাচ্ছে না। সরকার সুদৃষ্টি দিলে প্রতিষ্ঠানটির চেহারা বদলে যেতে পারে। তাতে এ এলাকার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা খুবই উপকৃত হবে।’

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক তামান্না আক্তার জানান, বর্তমানে ২৫ জন শিক্ষকদের দ্বারা বিদ্যালয়টি পরিচালিত হলেও তাদের বেতন ভাতা দিতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারি সাহযোগিতা না পেয়ে বিদ্যালটির কার্যক্রম পিছিয়ে পড়ছে। পর্যাপ্ত ও প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ না থাকায় লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটছে। এছাড়াও বর্তমানে স্কুলে বিদ্যুত, খেলার মাঠ ও খেলার সামগ্রী ও ভ্যান গাড়ী না থাকায় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে চায়না।

নিজেদের অপারগতার কথা স্বীকার করে দেবীদ্বার উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা আবু তাহের বলেন, সরকারি বরাদ্দ না থাকায় বিদ্যালয়টিকে আমরা ন্যূনতম সহযোগিতাও করতে পারিনি। তবে আমাদের পক্ষ থেকে যথাসম্ভ তাদেরকে উৎসাহিত করে যাচ্ছি।

স্কুলের জন্য সরকারি খাস জমির ব্যবস্থা করে এবং প্রতিবন্ধী কমপ্লেক্স তৈরীর দাবি এলাকাবাসীর।

প্রতিবেদক: জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল, ৭ এপ্রিল ২০২২

Share