আন্তর্জাতিক

সুখ সইলো না,  হোয়াটস অ্যাপে তালাক : বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন

বিয়ে হয়েছে মাত্র ২৮ দিন আগে। এ সময়ে সুখের দাম্পত্য জীবন নিয়ে মশগুল থাকার কথা। কিন্তু না, ডিজিটাল প্রযুক্তির সুবিধায় অনলাইনেই স্ত্রীকে তালাক দিলেন বর।

তিনি তালাক দিতে ব্যবহার করেছেন হোয়াটস অ্যাপ। তা ব্যবহার করে স্ত্রীকে বললেন, তোমাকে তিন তালাক দিলাম। অমনি সব খতম। এ ঘটনা ঘটেছে ভারতের কেরালা রাজ্যের আলাপ্পুঝাতে।

২৮ দিন আগে কেরালার ২১ বছর বয়সী এক কলেজ ছাত্রীকে বিয়ে করে প্রবাসী এক বর। বিয়ের ১০ দিন পর স্ত্রীকে রেখে তিনি পাড়ি জমান দুবাইয়ে। তারপর কেটেছে আরও তিন সপ্তাহ। এরপরই হোয়াটস অ্যাপে তালাক।

রাজ্যের নারী কমিশন আদালতের সদস্য জে প্রমিলা দেবী বলেছেন, ওই বর তার স্ত্রীকে সব সময়ই আপেলের মতো ভালবাসতেন। যখনই তিনি তার স্বাদ নিয়েছেন তারপরই তাকে ছুড়ে ফেলেছেন। এখন ওই কলেজ ছাত্রীর জীবন তছনছ হয়ে গেছে।

বিয়েতে তার মা বরকে যৌতুক হিসেবে ১০ লাখ রুপি ও স্বর্ণ দিয়েছেন। মেয়ে তার একটি ডেন্টাল কলেজে পড়াশোনা করছিলেন। বিয়ে হওয়ার পর তার ও তার বোনের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে। বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর তিনি শ্বশুর বাড়ি থেকে ফিরেছেন পিতৃগৃহে।

গত সোমবার তিনি সাহস করে রাজ্যের মহিলা বিষয়ক আদালতে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে অভিযোগ দায়ের করেছেন। সেই আদালত এখন হোয়াটস অ্যাপ ব্যবহার করে তিন তালাকের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তারা কেরালার প্রবাসী বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে ২৭ বছর বয়সী ওই বরকে খুঁজে বের করতে। একই সঙ্গে ওই আদালত পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে আদালতের পরবর্তী শুনানির দিনে ওই বরের পিতামাতাকে আদালতে হাজির করতে। সম্প্রতি ভারতের ১০টি রাজ্যে একটি গবেষণা চালিয়েছে ভারতীয় মুসলিম মহিলা আন্দোলন নামের একটি এনজিও।

তাতে দেখা গেছে, মুসলিম নারীরা তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলকভাবে তিন তালাক নিষিদ্ধ করার পক্ষে। এর পক্ষে সায় দিয়েছেন শতকরা ৯২.১ ভাগ নারী। স্কাইপ, টেক্টট ম্যাসেজ, ইমেইল ও হোয়াটস অ্যাপ ব্যবহার করে তালাক দেয়ার ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সমাজকর্মী, কবি ও রাজ্যের নারী বিষয়ক কমিশনের সাবেক চেয়ারপারসন বি সুগাথাকুমারি বলেন, আমি মনে করিনা যে একজন স্বাভাবিক যুবক এভাবে তালাক দিতে পারে। এখন কমিশনের উচিত এরকম মেয়ে ও তার মাকে নিরাপত্তা দেয়া। এমন আচরণ করবে যে পুরুষ তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। ওদিকে হোয়াটস অ্যাপে তালাকের বিষয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন ইসলামিক বোদ্ধারা।

সমস্ত কেরালা জাম-ইয়াতুল উলামার এক সদস্য সৈয়দ আত্তাকোয়া থাঙ্গাল মনে করেন এ রকম তালাক বৈধ। মঙ্গলবার তিনি বলেন, যদি তালাকের পক্ষে কঠোর অবস্থানে থাকেন ওই নারীর স্বামী তাহলে ওই তালাক বৈধ হবে।

একই সংগঠনের আরেক সদস্য কোত্তুমালা টিএম বাপ্পু মুসালিয়ার হলেন রাজ্যের হজ কমিটির চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, হোয়াটস অ্যাপ ব্যবহার করে যে ম্যাসেজ দেয়া হয় তার বৈধতা নেই। এর কোন প্রামাণিক নমুনা নেই। তালাক দিতে হবে সামনা সামনি অবস্থানে থেকে। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে তালাক দিতে হবে প্রামাণ্য কাগজপত্রের মাধ্যমে, লোকজন সাক্ষী রেখে।

 

চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক ||   আপডেট: ০৮:১৩ পিএম, ০৭ অক্টোবর ২০১৫, বুধবার

 

চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/ এমআরআর/২০১৫

Share