মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও বাংলাদেশের রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিত সিরাজুল আলম খান শুক্রবার ৯ জুন দুপুর আড়াইটায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
সিরাজুল আলম খানের ব্যক্তিগত সহকারী মো.রুবেল হাওলাদার শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে ঢামেক হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় তিনি মারা যান বলে জানান। আজ বিকেলে তাঁর গ্রামের বাড়ি বেগম গঞ্জের পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়েছে (ইন্না…….. রাজেউন)। মৃতুকালে তাঁর বযস হয়েছিল ৮২ বছর
জানা গেছে – ৭ মে রাতে শ্বাসকষ্টসহ বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা নিয়ে ঢাকার পান্থপথে শমরিতা হাসপাতালে ভর্তি হন সিরাজুল আলম খান। চিকিৎসকদের পরামর্শে তাঁকে ২০ মে ঢামেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় । ১ জুন তাকে আইসিইউতে রাখা হয়। অবস্থার অবনতি হলে বৃহস্পতিবার ৮ জুন রাতে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়।
সংক্ষিপ্ত জীবন বৃন্তান্ত :
১৯৪১ সালে জন্ম নেয়া এ কিংবদন্তি রাজনীতিককে বিগত কয়েক বছর ধরে নিয়মিত হাসপাতালে যেতে হয়েছে। দেশে এবং বিদেশে দীর্ঘ সময় চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি। সিরাজুল আলম খান ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার আলীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন ছিলেন গৃহিণী। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।
জন্মের কয়েক বছর পর পিতার চাকরির সুবাদে তিনি খুলনায় চলে যান। ১৯৫৬ সালে খুলনা জিলা স্কুল থেকে এসএসসি ও ১৯৫৮ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। অনার্স ডিগ্রি অর্জনের পর কনভোকেশন মুভমেন্টে অংশ নেওয়ার কারণে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।
১৯৬৩ সালে সিরাজুল আলম খান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনায় তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে ষাটের দশকের প্রথমার্ধে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার ‘নিউক্লিয়াস’ গঠিত হয়। পরে ছাত্র-তরুণদের আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা। বঙ্গবন্ধুরও ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ছিলেন এই ছাত্রনেতারা। ছয় দফার সমর্থনে জনমত গঠনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন সিরাজুল আলম খান। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাতিল ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করতে প্রধান ভূমিকা পালন করেন তিনি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে বিরোধের জের ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। এরপর ১৯৭২ সালে সিরাজুল আলম খানের উদ্যোগে রাজনৈতিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ প্রতিষ্ঠা হয়। তিনি কখনও নেতৃত্বে না এলেও জাসদ নেতাদের পরামর্শক হিসেবে তাদের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে পরিচিত। তাকে সবাই ‘দাদা ভাই’ নামেই ডাকতেন।
সিরাজুল আলম খান কখনও জনসম্মুখে্্য আসতেন না এবং বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেন না;আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান।
চাঁদপুর জেলা জাসদের শোক প্রকাশ
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুতে চাঁদপুর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সভাপতি বিশিষ্ঠ কলামাস্টি ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রফেসর হাসান আলী সিকদার ও সাধারণ সম্পাদক মো. মনির হেসেন মজুমদার গভীর শোক প্রকাশ করেন ও মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবার পরিজনের প্রতি সমবেদনা জানান।
আবদুল গনি
১০ জুন ২০২৩
