Sunday, 19 July, 2015 06:37:39 PM
চাঁদপুর টাইমস ডেস্ক :
সিরাজগঞ্জে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিপাড়ে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৬ জন নিহত এবং কমপক্ষে ৬০ জন আহত হয়েছে। রোববার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড় সংযোগ মহাসড়কের মূলিবাড়ি রেলক্রসিং এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটে।
চট্টগ্রাম থেকে রংপুরগামী ‘সাবির হোসেন’ পরিবহন এবং গাইবান্ধা থেকে ঢাকাগামী ‘আজাদ’ পরিবহনের বাস দুটির মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে হতাহতের ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসন পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করেছে। আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, দুর্ঘটনার পর সকাল সোয়া ৮টার দিকে ১৪ জনের লাশ উদ্ধারের খবর পাওয়া যায়। পরে গুরুতর ১০ জনসহ ২৪ জনকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে নেওয়ার পথে আরও দু’জনের মৃত্যু হয়। এতে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৬।
নিহতদের মধ্যে ১২ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- আজাদ পরিবহনের চালক গাইবান্ধার পলাশবাড়ি উপজেলার পার্বতীপুর গ্রামের মেনহাজ প্রধান (২৮), একই উপজেলার মোহাদিপুর গ্রামের লিটন (৪০), দুবলাগাড়ি গ্রামের মিলন (২৩), গাইবান্ধা সদরের কলেজ পাড়া মহল্লার কলেজছাত্র সবুজ (১৯), বগুড়ার দুপচাচিয়া উপজেলার চামুর গ্রামের জিল্লুর রহমান (৪৬), দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার মন্মথপুর কৈবর্ত্যপাড়ার চান বাবু (২২), দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার পূর্নতী গ্রামের বিপ্লব (২৩), রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পোড়াচাকলা কাশিমপুরের মোয়াজ্জেম হোসেনের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মৌসুমী খাতুন (২০), বদরগঞ্জ উপজেলার নয়াপাড়ার আনোয়ারুল ইসলাম (১৯), রংপুরের পীরগাছা উপজেলার কিশমত কাউলা গ্রামের আব্দুল কারি (৪৫), একই উপজেলার সোনারায় গ্রামের মফিজুর রহমান (৫০) এবং তাম্বুল গ্রামের মাহাবুব (৪০)।
সিভিল সার্জন দেবব্রত রায় বলেন, দুর্ঘটনার পরপরই আহত ৩৬ জনকে সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং ২৪ জনকে বগুড়ায় পাঠানো হলে পথেই মৌসুমী ও অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি মারা যান। তাদের লাশ বগুড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাখা হয়েছে।
অপরদিকে, সিরাজগঞ্জ থেকে আহত অবস্থায় বগুড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো আহতদের মধ্যে কয়েকজন হলেন- রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার কেতাবগাঁও গ্রামের কাওসার (৪০), একই জেলার বদরগঞ্জ উপজেলার শাহপাড়ার নেপাল চন্দ্র (৩০), দিনাজপুরের ফুলবাড়ির বাড়ইপাড়ার আসলামুজ্জামান (৩৪), সদরের সামাদ, নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার গোপালপুর গ্রামের বেলাল (৪৫) ও রাজ্জাক (৫০), বগুড়ার ধুনটের ইব্রাহিম (১৪), একই এলাকার ইনসাফ আলী (৩৫), শিবগঞ্জ উপজেলার ভানুপুরের মন্টু সেখ (৪৩), ভাটরা গ্রামের আবদুস সালাম (৫৪), নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার পরাটারি গ্রামের কবির (২৪), সিরাজগঞ্জের বেলকুচির কৃষ্ণ (৩০), শহিদুল (৩৪), আমিনুল ইসলাম (৪৫) ও মেহেরাব (৩৪)।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেজারত ডেপুটি কালেক্টরেট (এনডিসি) সামিউল ফেরদৌস বলেন, দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত আটটি লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। জনপ্রতি ১০ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে। বাকি ছয়টি লাশ মর্গে রয়েছে।
ওই ঘটনায় জেলা প্রশাসন থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল হাসানের নেতৃত্বে প্রথমে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মোতাবেক সিরাজগঞ্জ বিআরটিএ সহকারী পরিচালক আশরাফুজ্জানকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন— জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দিন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ব্রেনজন চাম্বুগং ও জেলা ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) নিজাম উদ্দিন।
বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিনের বরাত দিয়ে থানার সেকেন্ড অফিসার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আজগর আলী জানান, চট্টগ্রাম থেকে রংপুরগামী ঢাকা (ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৪০৩৪) ‘সাব্বির হোসেন’ পরিবহনের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা গাইবান্ধা থেকে ঢাকাগামী ‘আজাদ’ পরিবহনের একটি বাসের (ঢাকা মেট্রো-জ-১৪-১০৮৬) মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় বাসের চালকসহ ঘটনাস্থলেই ১৪ জন নিহত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজন মারা যান। দুপুরে বগুড়ায় আরও একজন মারা যান। তবে হতাহতদের পরিচয় জানা যায়নি।
দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া রংপুর জেলার পীরগালা উপজেলার কিসামত ঝিনিয়ার ছেলে অনুপ (২০) জানান, সে চট্টগাম থেকে আসছিল। রাস্তার বেশকিছু স্থানে চালক উগ্রভাবে চালানোর চেষ্টা করে। যাত্রীরা প্রতিবাদ করলেও সে কথা শোনেনি। সেতু পার হওয়ার পর দুর্ঘটনা হয়। চালক রং সাইড দিয়ে চালানোর কারণেই এমনটি ঘটেছে।
দুর্ঘটনায় পড়া যাত্রীদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দলের আসতে দেরি হওয়া প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক নিজাম উদ্দিন জানান, ঘটনাস্থল থেকে তাদের পেট্রোল গ্রুপটি দূরে থাকায় আসতে দেরি হয়েছে। পরবর্তী সময়ে পাবনা ফায়ার সার্ভিসের এ্যাম্বুলেন্সে করে গুরুতদের বগুড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
চাঁদপুর টাইমস : ডেস্ক/এমএএ/২০১৫।
চাঁদপুর টাইমস’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনেপূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।