Friday, 17 April, 2015 06:30:51 PM
চাঁদপুর টাইমস ডট কম:
সুইপার, দারোয়ান, মালী, ঝাড়ুদার, আয়া, পিয়ন কিংবা নৈশপ্রহরী—পোলিং অফিসারের তালিকা থেকে বাদ যাননি কেউই। তাঁদের নিয়োগ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশন।
সাধারণত স্কুল-কলেজের শিক্ষক ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভোটকেন্দ্রে পোলিং অফিসারের দায়িত্ব পেলেও এবার সে তালিকায় এসেছেন ঢাকার একটি কলেজের ১১ জন অফিস সহায়ক (এমএলএসএস)।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন পোলিং অফিসারদের যে তালিকা করেছে তাতে মিরপুরের হযরত শাহ আলী মহিলা কলেজের ১১ জন এমএলএসএসকে রাখা হয়েছে বলে কলেজের অধ্যক্ষ জানিয়েছেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে তাদের কয়েকজনকে মিরপুরের পাইকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য বলা হয়েছে।
তবে নিজেদের শুধু ‘অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন’ বলে ওই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পেতে বৃহস্পতিবার ঢাকা উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনে দৌড়াদৌড়ি করেছেন ওই ১১ জন।
দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে নিজেদের দারোয়ান, নৈশপ্রহরী, মালী, সুইপার, আয়া, পিয়ন ও ঝাড়ুদার পরিচয় দিয়ে স্বাক্ষরসহ আবেদন করেন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে। এ আবেদনের অনুলিপি কমিশনে এসে জমা দেওয়ার চেষ্টা করলে তা নেয়নি কমিশনের সংশ্লিষ্ট শাখা।
আবেদন জমা দিতে আসা শাহজাহান বলেন, “রিটার্নিং অফিসারের কাছে মার্ক করা আবেদন কমিশন নিচ্ছে না। রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ও নেয়নি।”
তাদের আবেদন বিবেচনায় নিতে সুপারিশ করেছেন কলেজের অধ্যক্ষ ময়েজ উদ্দিন।
“আবেদনকারীদের অক্ষরজ্ঞান কম। দায়িত্ব পালনে শুধু কালির ব্যবহার ছাড়া অন্য কাজ করানো কষ্টকর হবে,” লিখেছেন তিনি।
আগামী ২৮ এপ্রিল সিটি করপোরেশনের ভোট সামনে রেখে এরইমধ্যে ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রামে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারদের প্যানেল চূড়ান্ত করা হয়েছে।
ভোটগ্রহণে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে একজন প্রিজাইডিং ও একজন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের সঙ্গে পোলিং অফিসাররা থাকেন। কেন্দ্রের সার্বিক কার্যক্রম তদারক করেন প্রিজাইডিং অফিসার, তাকে সহায়তা করেন সহকারী প্রিজাইডিং।
আর প্রতিটি বুথে থাকেন দুজন করে পোলিং অফিসার, যারা জাল ভোট ঠেকাতে ভোটারের ছবিসহ যাবতীয় তথ্য যাচাই, যথাযথভাবে ভোটগ্রহণ, ভোটের হিসাবসহ বুথের সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন।
পোলিং অফিসার হিসেবে মনোনীতদের এরইমধ্যে প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। ছবিসহ ভোটার তালিকা ব্যবহার, সঠিক ভোটার শনাক্ত, নির্বাচনী সামগ্রীর ব্যবহার, ব্যবহৃত ও অব্যবহৃত সামগ্রীর হিসাব তৈরি ও জমা, ব্যালট পেপার বাছাই, নির্বাচনী সামগ্রী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে জমা দেওয়ার বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
পোলিং অফিসারের প্যানেলে ওই ১১ জন অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয়ে শাহ আলী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ময়েজ উদ্দিন বলেন, “ওরা সবাই এমএলএসএস, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী।
“ইসির চাহিদা অনুযায়ী আমিসহ আমাদের প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে ৬৪ জনের তালিকা দিয়েছি। সে অনুযায়ী, তাদের নিয়োগ দিয়েছে। প্রভাষককেও পোলিং অফিসার, এমএলএসএসকেও পোলিং অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। এটা সমস্যা।”
তার দেওয়া তালিকার সবাই ভোটের দায়িত্ব পেলেও প্রতিষ্ঠানের ১১ জন শিক্ষক কীভাবে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পেলেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অধ্যক্ষ।
“এখানকার ১১ জন শিক্ষক কীভাবে অব্যাহতি পেল? ৫৩ জনকে উপযোগী মনে করল, আর ১১ জনকে কিভাবে বাদ দেওয়া হল?,”
তবে পোলিং অফিসার হিসেবে এমএলএসএস পদের কর্মচারীদের নিয়োগের কথা অস্বীকার করেছেন ঢাকা উত্তরের রিটার্নিং অফিসার মো. শাহ আলম।
তিনি বলেন, “এটা ভুয়া কথা। আমাদের কোনো লিস্টে এমএলএসএস থাকে না। আমরা চাইলে যে কোনো শ্রেণির কর্মচারীকে নিয়োগ দিতে পারি। দ্বিতীয় শ্রেণির নিচের কর্মচারীকেও দেওয়া যেত, তারপরও এ ধরনের কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
তার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ নিয়ে আসেননি জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি শুনেছি। এমএলএসএস কাউকে দেওয়া হয়নি। আমি যদি এমএলএসএসকে উপযুক্ত মনে করি পোলিং অফিসারের দায়িত্ব দেব, তাদের কী সমস্যা? কিন্তু এ ধরনের দেওয়া হয়নি।”
তিনি বলেন, “প্রাইভেট স্কুল-কলেজে অনেক গ্রুপিং থাকে। আমরা যেখানে টিচার নিয়োগ দেব, সেখানে এমএলএসএস কেন দেবে? থাকলেও আইনগত কোনো সমস্যা নেই। যখন লাগবে আমি অবশ্যই দিতে পারব। এখন এমএ পাস ছেলেও এমএলএসএস হয়, কম্পিউটার প্রশিক্ষিত হয়। তাদের পেলেও ভালো।”
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পোলিং প্যানেলে অতিরিক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী রাখা হয়। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংখ্যক লোকবল দিতে সাধারণত রিটার্নিং অফিসারকে কোনো অসুবিধায় পড়তে হয় না।
তালিকায় সবার নাম থাকলেও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে স্বাক্ষর সম্বলিত অঙ্গীকারনামা রিটার্নিং কর্মকর্তা না পাওয়া পর্যন্ত তা চূড়ান্ত নয় বলে জানান তারা।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এমএলএসএস বা যে কোনো কর্মচারীকে পোলিংয়ের দায়িত্ব দিতে পারেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এ নিয়ে আইনি কোনো বাধা নেই।”
নির্বাচনী আইনে বলা হয়েছে, রিটার্নিং অফিসার ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার দায়িত্ব দিতে প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারের প্যানেলের জন্য সিটি করপোরেশন এলাকার যে কোনো শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর তালিকা নেবেন। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় সংখ্যককে দায়িত্ব দেবেন।
তবে কোনো প্রার্থীর অধীন বা পক্ষে আছেন কিংবা ছিলেন তাদের এসব দায়িত্ব দেওয়া যাবে না।
ইচ্ছাকৃতভাবে বা যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া কোনো ব্যক্তি সরকারি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে সর্বনিম্ন ছয় মাস ও সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
চাঁদপুর টাইমস-ডিএইচ/২০১৫