দীর্ঘ এক বছরে সাড়ে ১৩ হাজার কিলোমিটার (আকাশ পথে ৯ হাজার কিলোমিটার) রাস্তা পায়ে হেঁটে মক্কায় পৌঁছে পবিত্র হজে অংশগ্রহন করেছেন ইন্দোনেশিয়ার এক যুবক ।
দেশটির পশ্চিম জাভা দ্বীপের পেকালঙ্গান শহর থেকে গেল বছরের ২৮ আগষ্ট রাত দশটায় পবিত্র মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন, ২৮ বছর বয়সী মোহাম্মদ খামিম সেতিয়াওয়ান ।
যাত্রার সময় তিনি বলেন, আমি মহান আল্লাহর উপর পুর্ন আস্তা ও বিশ্বাস রেখে পায়ে হেঁটে পবিত্র মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম ।
সময় সূচী অনুযায়ী এ বছরের আগষ্ট মাসের ২৭ তারিখ মক্কা পৌঁছার কথা থাকলেও ১৯ মে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই পৌঁছেন । অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, মায়ানমার, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান হয়ে দুবাইতে পৌঁছান তিনি। দুবাই থেকে আবুধাবি হয়ে সৌদি আরব প্রবেশ করেন ।
দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়ী, প্রবল সাহসী মানসিকতার যুবক মোহাম্মদের পিতা ৭৪ বছর বয়সী সাইয়ফানি সলিচিন জানান, “যখনই সে কিছু চেয়েছে, তখন সে নিজেই আন্তরিকভাবে চেষ্ঠা করে তা অর্জন করেছে। কোনও কিছুই তাকে থামাতে পারিনি, পারবেও না। সে দৃঢ় বিশ্বাসের একজন মানুষ”।
তার এই আধ্যাত্মিক দু:সাহসিক যাত্রায় তার সাথে ছিল একটি ব্যাকপ্যাক, পবিত্র কুরআনের একটি কপি, কয়েকটি শার্ট, দুই জোড়া প্যান্ট এবং জুতা, এক ডজন মোজা , একটি স্লিপিং ব্যাগ, তাঁবু, একটি পোর্টেবল মশাল, একটি স্মার্ট ফোন, একটি ইন্দোনেশিয়ান মিনি পতাকা, একটি জিপিএস এবং 3 মিলিয়ন ইন্দোনেশিয়ান রুপি (সৌদি রিয়ালে ৮৫০ রিয়াল) নগদ।
প্রথমে তার এই দুঃসাহসিক যাত্রার পরিকল্পনার কথা জেনে পরিবারের সদস্যরা তার সক্ষমতার ব্যাপারে সন্দিহান থাকা সত্ত্বেও তা বাস্তবায়নে তার দৃঢ় মনোবল দেখে, তারা আবেদনে সাড়া দিয়েছিলো ।
তাকে এই দুঃসাহসিক ভ্রমণে বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে গিয়ে রাত্রী যাপন করতে হয়েছে বিভিন্ন দেশের মসজিদ, সরকারি ভবন, স্হানীয় লোকজনের বাড়ী কিংবা গহীন বন জঙ্গলের মধ্যে ।
প্রতিদিন ৫০ কিলোমিটার হাঁটার ইচ্ছা থাকলেও হাঁটুতে ব্যাথা অনুভব করায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার হাঁটতে পেরেছেন । যাত্রা পথে তিনি মালয়েশিয়া এবং ভারতে অসুস্হ্য হয়ে পড়লে সুস্হ্যতা এবং শক্তি সঞ্চারের জন্য পানির সাথে মধু মিশিয়ে পান করতেন ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বৈরী আবহাওয়া এবং জাতিগত দাঙ্গা এবং যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশের মধ্য দিয়ে পাড়িয়ে দিয়ে কোন সমস্যায় না পড়লেও মালয়েশিয়ার জঙ্গলে তিনবার বিষাক্ত সাপের আক্রমণের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে । “কিন্তু অলৌকিকভাবে, এমনকি তারা আমাকে কামড়ানোর আগেই, পড়ে গিয়ে মারা যায়,” সেটিয়াওয়ান বলেন।
রাতে একা একা হাঁটতে গেলে তিনি কিছু অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হলেন, যেমন ভারতবর্ষে। তিনি সৌদি আরবের রুট সম্পর্কে কিছু স্থানীয়দের জিজ্ঞাসা করেন, কিন্তু তারা তাকে ভুল পথ দেখিয়েছেন যার কারনে তাকে আবার একটি দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রম করতে হয়।”
যাত্রা পথে প্রতিটি দেশে ইন্দোনেশিয়ান মিশনের সহযোগিতা নিয়ে ভিসা স্টাম্পিং করেছেন । খেয়েছেন হালাল খাবার । তিন বলেন, আমি হজ পালনে এতটাই দৃঢ় প্রত্যয়ী ছিলাম যে, কোন বাধা বিপত্তি আমাকে আটকাতে পারেনি । হজ শুধু একটি এবাদতই নয়, এটি একটি মুসলিম সংহতির নাম । যাত্রা পথে বিভিন্ন জাতি, ধর্ম, বর্ণ গোত্রের মানুষের সহযোগিতা, ভালোবাসা এবং ভ্রাতৃত্ব পেয়ে আমি ধন্য হয়ে তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পেরেছি ।
প্রতিবেদক- সাগর চৌধুরী, সৌদি আরব
: আপডেট, বাংলাদেশ ১১: ৪০ পিএম, ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ শনিবার
ডিএইচ