শনিবার (৩ মার্চ) বিকেলে জোড়পুকুর পাড়স্থ সাহিত্য একাডেমী মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুস সবুর মন্ডল।
সাহিত্য একাডেমীর মহাপরিচালক কাজী শাহাদাতের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মঈনুল হাসান ও জেলা প্রশাসকের সহধর্মিণী আকতারি জামান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুস সবুর মন্ডল বলেন, সাহিত্য একাডেমী চাঁদপুরের কার্যক্রম দিন দিন সমৃদ্ধ হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। সাহিত্যিকর্মীরা জেলা ব্র্যান্ডিংয়ে জেলা প্রশাসনকে ব্যাপকভাবে সহযোগিতা করেছেন। সেজন্যে তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। আজকে ৫০তম আসর অনুষ্ঠিত হলো। এ আসর শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনে আরো অর্থবহ অবদান রাখবে বলে আমার বিশ^াস।
তিনি বলেন, আমি জেলা প্রশাসক হিসেবে চাঁদপুর জেলা উন্নয়নের জন্যে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কতটুকু পেরেছি সেটা চাঁদপুরবাসী জানেন। আমি আমার কাজকে ভালোবেসেছি। ভালোবেসেই এ জেলাকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে নেয়ার জন্যে কাজ করেছি। তিনি চাঁদপুরের উন্নয়ন কার্যক্রম আগামীদিনেও অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ মঈনুল হাসান বলেন, চাঁদপুরে আসার আগেই আমি চাঁদপুরের শিল্প-সংস্কৃতির অগ্রযাত্রা সম্পর্কে অবহিত হয়েছি। চাঁদপুরের সাহিত্যকর্মীদের জাতীয় অঙ্গনে সরব পদচারণা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, মাসিক সাহিত্য আসরের ৫০তম সংখ্যা পূর্তি নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এই আসর সাহিত্যকর্মীদের নানাভাবে উৎসাহ জোগাচ্ছে। তিনি এ জেলার সাহিত্যকর্মীরা চাঁদপুরকে আলোকিত করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিদায়ী কালচারাল অফিসার কবি সৌম্য সালেক বলেন, চাঁদপুর আমার নিজের জেলা। এ জেলায় কাজ করতে পেরে এবং শিল্প ও সাহিত্য অঙ্গনে ভূমিকা রাখতে পেরে আমি আনন্দিত। নিরবচ্ছিন্নভাবে মাসিক সাহিত্য আসরের অর্ধশত সংখ্যা পূর্তি নিঃসন্দেহে এ জেলার জন্যে বিরল ঘটনা। এ সাহিত্য আসর নানাভাবে চাঁদপুরের সাহিত্যকে জাগিয়ে তুলেছে। এ আসর অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সভাপ্রধানে বক্তব্যে সাহিত্য একাডেমীর মহাপরিচালক কাজী শাহাদাত বলেন, আজ আমাদের জন্যে স্মরণীয় একটি দিন। আজ সাহিত্য আসরের ৫০তম সংখ্যা পূর্ণ হলো। আবার আজ বেদনারও একটি দিন। কারণ, আজকে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুস সবুর মন্ডল ও জেলা কালচারাল অফিসার আবু ছালেহ মোঃ আব্দুল্লাহকে বদলিজনিত কারণে বিদায় জানাতে হচ্ছে। তাঁরা দুজনই এ জেলা শিল্প-সাহিত্যের উন্নয়নে অর্থবহ ভূমিকা রেখেছেন। তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তিনি এ সময় পঞ্চাশতম আসরে অংশগ্রহণের জন্যে জেলার সাহিত্যকর্মীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে বদলিজনিত কারণে জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুস সবুর মন্ডল ও জেলা কালচারাল অফিসার আবু ছালেহ মোঃ আব্দুল্লাহকে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানান উপস্থিত অতিথি ও সাহিত্যকর্মীবৃন্দ।
গল্পকার মুহাম্মদ ফরিদ হাসানের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাহিত্য একাডেমীর সহ-সভাপতি জীবন কানাই চক্রবর্তী, বিশিষ্ট লোকগবেষক প্রকৌশলী মোঃ দেলোয়ার হোসেন, ছড়াকার ও প্রাবন্ধিক ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়–য়া, সাহিত্য একাডেমীর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য আব্দুল্লাহিল কাফি, এস এম জয়নাল আবেদীন, প্রবীণ লেখক তছলিম হোসেন হাওলাদার, কবি ইকবাল পারভেজ, সামীম আহমেদ খান, কাদের পলাশ মনিরুজ্জামান বাবলু প্রমুখ।
বিশেষ আয়োজন হিসেবে অনুষ্ঠানে এবারের গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত ৭টি গ্রন্থের আলোচনা করা হয়। মাইনুল ইসলাম মানিকের ‘দশ নোবেল বিজয়ীর সাক্ষাৎকার’ গ্রন্থ নিয়ে আলোচনা করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মঈনুল হাসান, জাহাঙ্গীর আলম হৃদয়ের ‘তোমার উত্তাপে হৃদয় কাঁপে’ ও ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়–য়ার ‘ঘুমের মধ্যে লীলা আসে’, ‘ব-দ্বীপ থেকে বাংলাদেশ’সহ ৪টি গ্রন্থের আলোচনা করেন সাহিত্য একাডেমীর মহাপরিচালক কাজী শাহাদাত। মঈনুল হাসানের গল্পগ্রন্থ ‘সন্ধ্যা নামার আগে’ নিয়ে আলোচনা করেন ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়–য়া। আব্দুল্লাহিল কাফির ‘দ্রোহে মরে সংলাপ’ গ্রন্থের আলোচনা করেন সামীম আহমেদ খান, সৌম্য সালেকের কাব্যগ্রন্থ ‘ঊষা ও গামিনি’ নিয়ে আলোচনা করেন মাইনুল ইসলাম মানিক।
কবিতা পাঠ করেন পীযূষ কান্তি রায় চৌধুরী, স্বপন ভঞ্জ, মোঃ সালাউদ্দীন, খান-ই-আজম, জাহাঙ্গীর আলম হৃদয়, আসাদুল্লাহ কাহাফ, জান্নাতুল মাওয়া, খান মুহাম্মদ মেহেদী হাসান, হোসাইন মিলন, মিরাজ ইসলাম, নিয়াজ আহমেদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সাহিত্য আসরে সর্বোচ্চ উপস্থিতির জন্যে ৫ আড্ডারুকে পুরস্কার প্রদান করা হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন কবি ও গীতিকার মোখলেসুর রহমান মুকুল, গ্রন্থাগারিক তৃপ্তি সাহা, সংগঠক ও শিক্ষক মাহমুদা খানম, ইনার হুইল ক্লাব অব সেন্ট্রাল চাঁদপুরের সভাপতি মুক্তা পীযূষ, কবি সৌম্য সালেকের সহধর্মিণী মোর্শেদা আক্তার প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সাহিত্যকর্মীদের বিপুল অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে রাত ৯টায় শেষ হয়।
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট