চট্টগ্রাম করেসপন্ডেন্ট | আপডেট: ০৮:২১ অপরাহ্ণ, ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫, মঙ্গলবার
‘হইচই শুনে আমি দৌঁড়ে গিয়ে দেখলাম, একটা ছেলে সবার চোখের সামনে পানিতে ডুবে যাচ্ছে। কেউ তাকে টেনে তুলবার প্রয়োজন বোধ করছেনা। আমার বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠল। তার সমান বয়সী আমার একটা ছেলে আছে। নিজের ছেলেটার কথা মনে পড়ে গেল। আমি লাফ দিয়ে খালে নেমে গেলাম। তাকে তুলে আনলাম। ’
মঙ্গলবার (১ সেপ্টেম্বর) সিএমপি কমিশনার মোহা.আব্দুল জলিল মন্ডলের কাছে এভাবেই ডুবন্ত শিশু সাজ্জাদকে উদ্ধারের বর্ণনা দিয়েছেন পুলিশ কনস্টেবল মো.মনির আহম্মদ।
মনির আহম্মদ সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের বন্দর শাখায় কনস্টেবল পদে কর্মরত আছেন। গত রোববার (৩০ আগস্ট) বন্দর থানার নিমতলা এলাকায় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় স্থানীয় মহেশখালে সাজ্জাদ হোসেন (৮) নামে এক শিশুকে ডুবে যেতে দেখে তিনি খালে নেমে যান। সবার চোখের সামনে শিশুটিকে খালের ভেতরে ময়লা-আবর্জনা থেকে উদ্ধার করে কনস্টেবল মনির তাকে তীরে তুলে আনেন।
কনস্টেবল মনিরের এই সাহসী, মানবিক কাজের কথা শুনে তাকে নিজ কার্যালয়ে ডেকে নেন সিএমপি কমিশনার। তার হাতে তুলে দেন পুরস্কার হিসেবে নগদ ২০ হাজার টাকা।
পুরস্কার হাতে নিয়ে আবেগাপ্লুত মনির সিএমপি কমিশনারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, স্যার, পুরস্কার পাব, ডিপার্টমেন্ট আমাকে মূল্যায়ন করবে, এই চিন্তা থেকে আমি শিশুটিকে উদ্ধার করিনি। নিজের সন্তান ভেবে আমি খালে নেমেছিলাম। শিশুটিকে বাঁচানোর দায় থেকে খালে নেমেছিলাম।
‘সামনে থেকে দেখলে মনে হবে মহেশখালটা একটা নর্দমার মত। অথচ খালটা বেশ গভীর। ৩০ থেকে ৪০ ফুটেরও বেশি পানি হবে। আর যে আবর্জনা, কাউকে যদি এক কোটি টাকা দেবে বলা হয় সে-ও কোনদিন খালটাতে নামবেনা। আমি পুলিশের পোশাক নিয়েই নেমে গেছি। ’ বলেন কনস্টেবল মনির।
তিনি বলেন, আমি যখন ঘটনাস্থলে যাই, সেখানে অনেক মানুষ দাঁড়িয়েছিল। কয়েকজন শিক্ষিত লোকও ছিল। শিশুটি দুই হাত তুলে তাকে বাঁচানোর কথা বলছে। অথচ একজন লোকও তাকে বাঁচানোর কোন চেষ্টা করছেনা। সবাই তার দিকে তাকিয়ে ছিল। মানুষের মধ্যে বিবেকবোধ, দায়িত্ববোধ কেন চলে যাচ্ছে ? সবার তো সন্তান আছে। তাদের দায়িত্ববোধ জেগে উঠলনা কেন ?
এসময় সিএমপি কমিশনার মোহা.আব্দুল জলিল মন্ডল বলেন, গত এক বছরে সিএমপিতে অনেক ভাল ভাল কাজ হয়েছে। পুলিশ সদস্যদের ভাল কাজের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। প্রশংসা কিংবা পুরস্কার পাবার জন্যই নয়, পুলিশ এখন বিবেকের তাগিদে ভাল কাজ করছে। এর একটা উদাহরণ হচ্ছে কনস্টেবল মনিরের শিশুটিকে উদ্ধার করে আনা।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন, অর্থ ও ট্রাফিক) একেএম শহীদুর রহমান, অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য, উপ পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-উত্তর) মাসুদ উল হাসান, উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-বন্দর) সুজায়েত ইসলাম এবং নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার কুসুম দেওয়ান।
সাহসী পুলিশ কনস্টেবল মনিরের বাড়ি নোয়াখালীর সুধারাম উপজেলার লালপুর গ্রামে। ২০০০ সালের ২৮ মে পুলিশ বিভাগে যোগ দেয়া মনির আট বছর বয়সী এক ছেলের বাবা।
চাঁদপুর টাইমস : এমআরআর/২০১৫