জাতীয়

সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন যন্ত্র আবিষ্কার : মাত্র ২০ পয়সায় বিদ্যুৎ!

নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার তরুণ উদ্ভাবক জালাল উদ্দিন দীর্ঘ গবেষণায় সফল হয়েছেন বিদ্যুৎ উৎপাদনে। তিনি তৈরি করেছেন খরচ সাশ্রয়ী এক বিদ্যুৎ উৎপাদন যন্ত্র। অভিনব বিদ্যুৎ উৎপাদন যন্ত্রটিতে ১০ মিনিট জ্বালানি ব্যবহারের পর যন্ত্রটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে। উদ্ভাবকরা দাবি করেন, প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পেলে মাত্র ২০ পয়সা ইউনিট খরচে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ দেয়া সম্ভব।

সরজমিনে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার পাচবাড়ীয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায় ওই গ্রামে জালাল উদ্দিন একটি ভাড়া বাড়িতে বিদ্যুৎ উৎপাদন যন্ত্র স্থাপন করেছেন।

জালাল উদ্দিন জানান, তার এ যন্ত্রটি তৈরি করতে ৫৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। নিজের এত টাকা না থাকায় তিনি স্থানীয় দুই-একজন ব্যবসায়ীকে নিয়ে গঠন করেন জুনাইদ পাওয়ার লিমিটেড কোম্পানি। এরপর তারা প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপন করে বর্তমানে পরীক্ষামূলকভাবে ২৫০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছেন।

উদ্ভাবক জালাল উদ্দিন জানান, তিনি ১৯৭৪ সালে ১ আগস্ট সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর থানার প্রত্যন্ত একটি গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই ছিলেন ডানপিটে স্বভাবের এবং কোনো কিছু আবিষ্কারের নেশা তার মাথায় ঘুরপাক করতো। ১৯৯৫ সালে এমবিএ পাস করেন। এর আগে তিনি একটি ব্যাাটারি কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। তখন থেকেই কিভাবে কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় সে বিষয়ে চেষ্টা করতে থাকেন।

তিনি জানান, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদা সম্পূর্ণরূপে নিরসন করার লক্ষ্যে ফ্লাই হুইল এনার্জি, ইলেক্ট্রিক্যাল এনার্জি, রেটিও এনার্জি, অ্যাসেন্ট অ্যান্ড ডিসেন্ট এনার্জিৎ, লেভেল এনার্জি , গ্র্যাভিটেশন এনার্জি অ্যান্ড মেকানিক্যাল এনার্জিসহ নানা প্রকার বিদ্যুৎ শক্তি শক্তির সমন্বয় করে একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন যন্ত্র আবিষ্কার করেন যার নাম দিয়েছেন ফিরেল জেম মেশিন।

তিনি দাবি করেন, তার এই প্রযুক্তিতে উদ্ভাবিত মেশিন বিশ্বে এই প্রথম। আবিষ্কৃত যন্ত্রটিতে প্রথমে বাহিরের যেকোনো শক্তি জালানি হিসেবে ১০ মিনিট ব্যবহার করার পর পুনঃচক্রকারে (রিসাইক্লিন) পদ্ধতিতে ৪০ ভাগ বিদ্যুৎ উক্ত মেশিনের জালানি শক্তি হিসেবে ব্যবহার করে অবশিষ্ট ৬০ ভাগ বিদ্যুৎ বিক্রয় করা বা জাতীয় গ্রিডে সঞ্চালন করা যাবে।

আবিষ্কৃত মেশিনের বিদ্যুৎ উৎপাদনে আউটপুট ৩.২ ভাগ। এই প্রযুক্তির বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্পূর্ণ বায়ু ও শব্দ দূষণ মুক্ত। জালাল উদ্দিন জানান, প্রতি ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন মেশিন তৈরি করতে খরচ পড়বে দেড় মিলিয়ন মার্কিন ডলার। মেশিনের ওয়েস্টেজ এবং পরিচালনা খরচসহ ইউনিট প্রতি উৎপাদন খরচ পড়বে মাত্র ২০ পয়সা।

গ্যাস, ডিজেল, ফার্নেস ওয়েল, সোলার, জলবিদ্যুৎ বা পরামাণু বিদ্যুতের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চেয়ে তার উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ অনেক কম। তিনি দাবি করেন জুনায়েদ পাওয়ার লিমিটেড এই প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ তৈরি করে জাতীয় চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে।

জুনাইদ পাওয়ার লিমিটেডের ইঞ্জিনিয়ার হুসেন আলী জানান, একবার মেশিন স্টার্ট করলে মেইন সুইচ অফ না করা পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যাহত থাকে। তিনি এই মেশিনের মাধ্যমে জাতীয় বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানে আশাবাদী। এক্ষেত্রে প্রয়োজন সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতা।

জুনায়েদ পাওয়ার লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান মাজেদুল আলম বলেন, অর্থ সহায়তার জন্য ব্যাংক ঋণের চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন তারা বাণিজ্যিকভাবে কার্যক্রম শুরু না করলে আমরা অর্থায়ন করতে পারবো না। ফলে আমাদের স্বপ্ন পূরণ মুখ খুবরে পড়ার উপক্রম হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করেন।

জুনায়েদ পাওয়ার লিমিটেডের পরিচালক চিত্তরঞ্জন তালুকদার জানান, আমাদের কাজ থেমে আছে অর্থাভাবে। আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতা। প্রয়োজনীয় আর্থিক সহযোগিতা পেলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দেশের সমস্ত বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে।

পাঁচবাড়ীয়া গ্রামের অধিবাসী রব্বেল আলী বলেন, জুনায়েদ পাওয়ার লিমিটেডের বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়া দেখে তিনি আশাবাদী। সহযোগিতা পেলে এই কোম্পানি অবশ্যই দেশের চাহিদা পূরণ করতে পারবে।

চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০২:১১ পিএম,২৯ অক্টোবর ২০১৫, বৃহস্পতিবার

 এমআরআর

Share