মতলব দক্ষিণে সার সংকটে চাষাবাদ ব্যাহত

চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণে চলতি ইরি-বোরো মৌসুমের শুরুতেই বিভিন্ন সারের সংকট দেখা দিয়েছে। জমিতে সার দিতে না পারায় দিশেহারা কৃষক। এদিকে ডিলারদের বিরুদ্ধে অধিক মুনাফার আশায় বাজারে সারের কৃত্রিম সংকট তৈরির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সার সংকটের কারণে চাষাবাদ ব্যাহত হওয়ারও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, সরকারি মূল্য অনুযায়ী প্রতি কেজি টিএসপি সার ২২ টাকা, এমওপি বা পটাশ ১৫, ডিএপি ১৬ ও ইউরিয়া সার ১৬ টাকা বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু মতলব উত্তরসহ জেলার আটটি উপজেলার অধিকাংশ সারের ডিলার, সাব-ডিলাররা টিএসপি সার বিক্রি করছেন ২৫ থেকে ৩০ টাকা, এমওপি ২০ থেকে ২২ ও ডিএপি ১৮ থেকে ২০ টাকা। ইউরিয়া ১৮ থেকে ২১ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। অথচ দুই মাস আগেও এক বস্তা ইউরিয়া সার ৮০০ টাকায় পাওয়া যেত। এখন এর দাম সাড়ে ৯০০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা। অনেক জায়গাতেই দেখা মিলছে না পটাশ সারের। কয়েক জায়গায় এমওপি বা পটাশ সার পাওয়া গেলেও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। বহু জায়গায় টিএসপি সারের সংকটও তীব্র।

কৃষকেরা বলছেন, সার কিনতে গেলে ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা সংকটের কথা বলেন। তবে দাম বেশি দিলেই সার পাওয়া যাচ্ছে। কিছু কিছু ডিলার দোকানে মূল্যতালিকা টাঙিয়ে রাখলেও সেই অনুযায়ী বিক্রি করছেন না। এমনকি তালিকায় সারের মূল্যও লিখছেন না। বিক্রেতারা সরকারের নির্ধারিত মূল্যের রসিদ দিচ্ছেন, কিন্তু বাড়তি দাম রসিদে লিখছেন না। প্রতিবাদ করলে সার বিক্রি করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। এমনকি ক্রেতার কাছে বিক্রি করা সারও কেড়ে নেন।

সরকার বিভিন্ন সারের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও সেই দামে সার বিক্রি করছেন না অনুমোদিত বিএসইসি ডিলাররা—এমন অভিযোগ প্রান্তিক কৃষকদের। যার কারণে সার ডিলার সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন উপজেলার হাজারো প্রান্তিক কৃষক।

উপজেলার বিএসইসি অনুমোদিত সার ডিলারদের গুদামে পর্যাপ্ত পরিমাণ সার মজুত রয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য উপজেলায় অনুমোদিত বিএসআইসি ডিলাররা জানিয়েছেন, সারের কোনো সংকট নেই। পর্যাপ্ত পরিমাণ সার মজুত রয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি, এমওপি, জিপসাম, জিংক সালফেট ইত্যাদি সারের জেলাওয়ারি মাসভিত্তিক চাহিদা অনুযায়ী সংকট রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জেলায় সারের কোনো সংকট নেই। একই অর্থবছরে সারের মাসভিত্তিক চাহিদা অনুযায়ী চলতি জানুয়ারিতে মতলব দক্ষিণ উপজেলায় ২৬৫ মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের চাহিদা রয়েছে। উপজেলায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩২ মেট্রিক টন। চাহিদার চেয়ে ২৩৩ মেট্রিক টন সার কম বরাদ্দ রয়েছে। এমওপি সারের চাহিদা রয়েছে ১২ মেট্রিক টন। এদিকে মতলব দক্ষিণ উপজেলায় ২০২১-২২ অর্থবছরে ইরি-বোরো চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা আবাদ ৭ হাজার ৭০০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১৯ হাজার ২৯০ মেট্রিক টন।

এদিকে সংশ্লিষ্ট সার ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং অধিশাখা সূত্রে জানা গেছে, জেলায় সার সংকট রয়েছে। যার কারণে সারের সংকট দেখিয়ে কৃষকদের জিম্মি করে ফায়দা লুটছে সংঘবদ্ধ ডিলার সিন্ডিকেট চক্র।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কৃষিবিদ জানান, কৃষকের সারের চাহিদা পূরণ করতে একটি সুবিধাভোগী চক্র সংশ্লিষ্ট কতিপয় অসাধু কর্তাব্যক্তির যোগসাজশে বাজারে নকল সার সরবরাহ করে কৃষকের সর্বনাশ করতে পারে।

Share