প্রশাসনে সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে ৩৫৮ জনকে পদোন্নতি দিয়েছে জনপ্রশানস মন্ত্রণালয়। পদোন্নতির ক্ষেত্রে মূল বিবেচ্য ছিল বিসিএসের ২৭তম ব্যাচ। এ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের ২৪০ জনকে (ইকোনমিক ক্যাডার বিলুপ্ত হওয়ায় প্রশাসন ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত হওয়া কর্মকর্তাসহ) পদোন্নতি দেওয়া হয়। কিন্তু তিন শতাধিক সফল অভিযানের ট্যাগ লাগানো র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারোয়ার আলমের পদোন্নতি মেলেনি।
৭ মার্চ রবিবার প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে পদোন্নতি পেয়ে উপ-সচিব হয়েছেন ৩৫৮ জন কর্মকর্তা। দুটি প্রজ্ঞাপনে ৩৩৭ জনকে পদোন্নতি পেয়েছেন। বাকি ২১ জন কর্মকর্তা শিক্ষা ছুটিতে থাকায় তাদের নামে প্রজ্ঞাপন জারি না হলেও নিয়মানুযায়ী প্রত্যেকে চিঠি দিয়ে জানানো হবে।
বিসিএস ২৭তম ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডার হিসেবে ২০০৮ সালের নভেম্বরে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন সারোয়ার আলম। ২০১৪ সালের ১ জুন সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে পদোন্নতি পান তিনি। সে অনুযায়ী এ পদে প্রায় সাত বছরসহ মোট ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রশাসন ক্যাডার হিসেবে কর্মরত আছেন তিনি, যা পদোন্নতির শর্ত পূরণ করে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে কোনো বিভাগীয় অভিযোগ নেই। বরং নানা সাহসী অভিযানের কারণে বিভিন্ন সময় প্রশংসা কুড়িয়েছেন এই কর্মকর্তা। তবুও তার পদোন্নতি না হওয়ায় হতাশ হয়েছেন অনেকে।
মেধা কোটায় চাকুরি পাওয়া ২৭তম ব্যাচের মেধা তালিকায় সামনের দিকে সারোয়ার আলমের অবস্থান। তবুও তাঁর পদোন্নতি হয়নি, অথচ তারপরের ১৫০ জনেরও বেশি কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। বিসিএস ২৭তম ব্যাচের সারোয়ার আলমসহ প্রায় ৩০ কর্মকর্তা পদোন্নতি পাননি।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি) অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আনিছুর রহমান মিঞা বলেন, ‘যারা যোগ্য সকলেই পদোন্নতি পেয়েছেন। বাকিদের বিষয়ে মন্তব্য করার অধিকার আমার নেই। কারণ পদোন্নতি আমরা দেই না। সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড সবকিছু বিশ্লেষণ করে যোগ্যদের পদোন্নতি দিয়েছে।’
অসাধারণভাবে কাজ করে চলা সারোয়ার আলমকে ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আলিয়া মেহের স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থেকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে বদলি করা হয়।
সারোয়ার আলম ২০১৫ সাল থেকে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তিনি খাদ্যপণ্যে ভেজাল বিরোধী আন্দোলন ও দুর্নীতি বিরোধী বিশেষ অভিযানের সময় ব্যাপক সাহসী ভূমিকা রেখে আলোচিত হয়েছেন। যুবলীগ নেতা ক্যাসিনো ইসমাঈল হোসেন সম্রাটসহ ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন বড় নেতাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে সারা দেশে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার এ কৃতি সন্তান। সর্বশেষ হাজী সেলিমপুত্র ইরফান সেলিমকে মদ্যপ অবস্থায় গ্রেপ্তার ছিল সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা।
পদোন্নতি না পাওয়ার বিষয়ে সারোয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারির পর অনেকেই আমাকে ফোন দিয়ে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। আমার পদোন্নতি হয়নি অনেকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না বলে আমাকে জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তারা অবাক হয়েছেন। তবে এটাই বাস্তবতা।’
ঢাকা ব্যুরো চীফ,১২ মার্চ ২০২১