রহমত, বরকত ও নাজাতের মাস পবিত্র রমজানুল মোবারক । রমজান মাস বান্দার হৃদয়ে তাকওয়া অর্জনের জন্য বসন্তকাল। এ মাসে চারিদিকে যেন তাকওয়ার পুষ্প ফোটে, খোদাভীতির সৌরভে পৃথিবীর সবদিক মুখরিত হয়ে উঠে, মুমিনদের হৃদয়ে আনন্দের ঢেউ খেলে। রোজা ত্যাগ ও ধৈর্যের অপার দৃষ্টান্ত।
তবে এ তাকওয়া প্রশিক্ষণ শুধু রমজানেই যেন সীমাবদ্ধ না থাকে সে জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সারা বছর বিভিন্ন সময়ে নফল রোজা রেখেছেন এবং উম্মতকে রাখার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন।
নফল রোজাগুলোর মধ্যে অন্যতম ফজিলতপূর্ণ শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা। রমজান মাসের পরের মাস অর্থাৎ হিজরি সনের দশম মাস হলো শাওয়াল মাস। এ মাসের প্রথম দিনে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়।
শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা প্রভুর সন্তুষ্টির অনন্য মাধ্যম। প্রভুভক্তের নজরানা। নবী প্রেমের অনন্য চেতনা। তাকওয়া ও খোদা ভীরুতার সোনালি সিঁড়ি। সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব লাভের সুবর্ণ সুযোগ।
রমজান মাসের পর শাওয়াল মাসের ছয় রোজা সবচেয়ে বেশি বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ। শাওয়ালের ছয় রোজার ফযিলত-মর্যাদা অনেক বেশি। একাধিক হাদিসে এর ফজিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে।
হজরত আবু আইয়ুব আনসারী (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসের সব ফরজ রোজাগুলো রাখল অতঃপর শাওয়াল মাসে আরও ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন সারাবছর ধরেই রোজা রাখল। (সহিহ মুসলিম, হাদীস: ১১৬৪)
অন্য আরেকটি হাদিসে এসেছে, হজরত উবাইদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, একদিন রাসুলকে (সা.) জিজ্ঞেস করলাম, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.) আমি কি সারা বছর রোজা রাখতে পারব?’ তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘তোমার ওপর তোমার পরিবারের হক রয়েছে, কাজেই তুমি সারা বছর রোজা না রেখে রমজানের রোজা রাখো এবং রমজানের পরবর্তী মাস শাওয়ালের ছয় রোজা রাখো, তা হলেই তুমি সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাবে।’ (তিরমিজি-১৫৩৪)
হাদিসে শাওয়াল মাসের কোন সময় নির্দিষ্ট করা হয়নি সুতরাং শাওয়াল মাসের শুরু-শেষ বা মাঝে যে কোন সময় রাখা যাবে। এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করাও শর্ত না। তবে শাওয়াল মাসের ছয় রোজা যেহেতু নফল রাত থেকেই নিয়ত করা শর্ত ।
শাওয়ালের ছয়টি রোজা রমজানের রোজা কবুল হওয়ার পরিচায়ক। যখন কোনো বান্দার আমল আল্লাহতায়ালা কবুল করেন, তখন তাকে অন্য নেক আমলের তাওফিক দেন। সুতরাং এ রোজাগুলো রাখতে পারা রমজানের রোজা কবুল হওয়ারও লক্ষণ। কেননা মহান আল্লাহ যাদের প্রতি দয়া করেন, তারাই বেশি বেশি নেক-আমলে আত্মনিয়োগের সুযোগ পান।
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের কর্মপ্রচেষ্টা বিভিন্ন প্রকারের। সুতরাং যে দান করেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে, আর উত্তমকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছে, আমি তার জন্য সহজ পথে চলা সুগম করে দেব। আর যে কার্পণ্য করেছে এবং নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করেছে, আর উত্তমকে মিথ্যা বলে মনে করেছে, আমি তার জন্য কঠিন পথে চলা সুগম করে দেব।’ (সুরা লাইল, আয়াত : ৪-১০)
প্রত্যেক সুস্থ- সবল ব্যক্তির উচিত শাওয়াল মাসের ফজিলতপূর্ণ ছয়টি রোজা রেখে পূর্ণ এক বছর রোজা রাখার সমান সওয়াব হাসিল করা ।
উল্লেখ্য, কেউ নফল রোজা রেখে ভেঙে ফেললে তার কাজা আদায় করা ওয়াজিব। মহান আল্লাহ আমাদেরকে এই রোজা গুলো রাখার তাওফিক দান করুন, আমীন!
লেখক: ইসলামিক লেখক ও গবেষক