বিপরীত সেক্স-আকর্ষন থেকে সারাদেশে বেড়েই চলেছে সমকামীতা। এর সঙ্গে সবচেয়ে বেশী জড়িত হিজড়ারা। এরা রাজশাহীতে ছড়াচ্ছে পুরুষ সমকামিতা। এ কাজে হিজড়াদের পাশাপাশি জড়িয়ে পড়েছেন সমাজে প্রতিষ্ঠিত অনেক ব্যক্তিও।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত হরমোনজনিত কারণেই এ ধরনের ঘটনার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে তারা। এছাড়াও বিপরীত লিঙ্গের প্রতি বিতৃষ্ণা থেকেও সমকামিতার ঘটনা ঘটছে।
এদিকে হিজড়াদের মাঝে এইচআইভি-এইডস ছাড়ানো আশঙ্কা বেশি থাকায় তা প্রতিরোধে কাজ করছে বেসরকারি সংস্থা লাইট হাউসের মধুমিতা প্রকল্প।
রাজশাহীতে লাইট হাউস, মধুমিতা প্রকল্প, ফ্যামিলি হেলথ ইন্টারন্যাশনালের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ২০০৬ সাল হতে এইচআইভি-এইডস এন্ড এসটিআই প্রতিরোধ প্রকল্প (মধুমিতা) বাস্তবায়ন করে আসছে।
মধুমিতার উপকারভোগী হচ্ছেন পুরুষ যৌনকর্মী ও হিজড়া। লাইট হাউস মধুমিতা প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন সেবা প্রদান করছে। এরমধ্যে রয়েছে এইচআইভি/এইডস, যৌন রোগ, যক্ষ্মা ও পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কিত তথ্য প্রদান, এইচআইভি শনাক্তের জন্য (ভিসিটি) বিনামূল্যে রক্ত পরীক্ষা করা, বিনামূল্যে যৌনরোগের চিকিৎসা প্রদান ও ফ্রি ওষুধ খাওয়ানো, কাউন্সিলিং সেবা প্রদান, সাধারণ রোগ, যক্ষ্মা ও পরিবার পরিকল্পনার জন্য অন্যত্র রেফার্ড করা এবং ফ্রি কনডম ও লুব্রিকেন্ট বিতরণ প্রভৃতি।
রাজশাহী লাইট হাউস-এর মধুমিতা প্রকল্পের সেন্টার ম্যানেজার মোফাজ্জল হোসেন রাজু জানান, মেইল সেক্স ওয়ার্কার বা পুরুষ যৌনকর্মীদের (এমএসডব্লিউ) মাঝে এইচআইভি-এইডসের জীবাণু থাকতে পারে। হিজড়ারা যেহেতু সমকামিতার সঙ্গে জড়িত তাই এদের এইচআইভি/এইডস সম্পর্কে সচেতন করতে কাজ করে যাচ্ছে মধুমিতা। প্রতি রোববার এইচআইভি (ভিসিটি) টেস্ট ও প্রতি বুধবার যৌনরোগের চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
এছাড়াও উক্ত মধুমিতা সেন্টারে উপকারভোগীদের জন্য বিশ্রাম, বিনোদন, খেলাধুলার ও ব্যবস্থা রাখা রয়েছে। মোফাজ্জল হোসেন রাজু জানান, তাদের এখানে ৫৯৪ জন পুরুষ যৌনকর্মী ও ২৬০ জন হিজড়া নিয়মিত সেবা গ্রহণ করে থাকেন। গত ৯ মাসে মধুমিতা প্রকল্পের আওতায় ৩৫৮ জন পুরুষ যৌনকর্মী ও ১৫২ জন হিজড়াকে যৌন রোগের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
এদের মধ্যে যৌনরোগে আক্রান্ত ছিলেন ১২০ জন পুরুষ যৌনকর্মী ও হিজড়া ৭৮ জন। এইচআইভি শনাক্তের জন্য রক্ত পরীক্ষা বা ভিসিটি করা হয় পুরুষ যৌনকর্মী ১৬২ জন ও হিজড়া ১১১ জন। এদের মধ্যে কোন এইচআইভি পজেটিভ পাওয়া যায়নি। যক্ষ্মার জীবাণু পরীক্ষার জন্য রেফার করা হয় এমএসডব্লিউ ২২৫ জনকে, পরীক্ষা করেন ১৫০ জন। টিজি রেফার করা হয় ৯৭ জনকে, পরীক্ষা করেন ৫১ জন। এর মধ্যে ২ জনের এমএসডব্লিউর মধ্যে যক্ষ্মা জীবাণু পাওয়া যায়।
এছাড়া ১ লাখ ৭২ হাজার ৮৫৭ পিস কনডম ও ৯৫ হাজার ৭৪ পিস লুব্রিকেন্ট পুরুষ যৌনকর্মী, হিজড়া ও তাদের ক্লায়েন্টের মধ্যে ফ্রি বিতরণ করা হয়। লাইট হাউস-এর মধুমিতা প্রকল্পের আওতায় নিয়মিত চিকিৎসমাসেবাসহ নানা ধরনের সুবিধা গ্রহণ করেন জনি (ছদ্মনাম)। বয়স ২৫-২৬ বছর। হিজড়া তিনি। কথা হচ্ছিল লাইট হাউস সেন্টারেই। কথায় কথায় জানালেন তার জীবনের নানা ঘটনা। বললেন, হিজড়ারা ছাড়া বিবাহিত ও সংসারী পুরুষ মানুষও সমকামিতায় ব্যাপকভাবে জড়িয়ে পড়ছে।
তার দেয়া তথ্যমতে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। এ শিক্ষকও সমকামিতায় জড়িত। জনির দাবি, ওই শিক্ষকের স্ত্রী বাসায় না থাকার সুযোগে সুনির্দিষ্ট ২-১ জন হিজড়াকে মোবাইল ফোনে তার বাসায় ডেকে নেন। নিজ বাসাতেই সমকামিতা করেন। বিনিময়ে একজন হিজড়াকে দেয়া হয় ৫শ’ টাকা। জনি আরও জানায়, রাজশাহী নগরীর হেতেমখাঁ সবজিপাড়া এলাকার একজন স্থায়ী বাসিন্দা। তিনি বর্তমানে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনিও সমকামিতায় হিজড়াদের ব্যবহার করেন। নগরীর দরগাপাড়ার আরেক বাসিন্দা। বয়স এখন ৫৫ বছরের মতো। তার ছেলেমেয়ের বিয়ে হয়েছে অনেক আগেই। রয়েছে নাতি নাতনীও। তিনিও হিজড়াদের টাকার বিনিময়ে ব্যবহার করে থাকেন। নগরীর লক্ষ্মীপুরের আরেক বাসিন্দা। তার বড় মেয়ে ক্লাস ফোরে পড়ে। স্ত্রী আছেন। তারপরও তিনি নিয়মিত হিজড়াদের সঙ্গে সমকামিতা করেন।
জনির দাবি, রাজশাহী নগরীতে প্রায় ৬শ’ হিজড়া রয়েছে। এরা সমকামিতায় জড়িত। এরচেয়েও বেশিসংখ্যক সুস্থ এবং স্বাভাবিক পুরুষও এ কাজে জড়িত। তবে তাদের বিষয়গুলো খুবই গোপনীয়। তাদের স্ত্রীরাও জানে না। জনি জানান, নগরীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেলও সমকামিতার নিরাপদ স্পট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে নগরীর সাহেববাজার এলাকায় অবস্থিত একটি অভিজাত আবাসিক হোটেলে পুরুষ যৌনকর্মীদের ব্যবহার করা হয়।
জনি জানান, সমকামিতায় জড়িয়ে তিনি যৌনরোগেও আক্রান্ত হয়েছিলেন। মধুমিতা থেকে তিনি চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। এছাড়া এই কাজই তাদের আয়ের প্রধান উপায়। কোন কোন মাসে তিনি ৫০ হাজার টাকাও আয় করেছেন। ক্লায়েন্টের জন্য তারা রেলওয়ে স্টেশনে বসে থাকে। সেখানে যোগাযোগ হয়ে চলে যায় কোন হোটেলে বা বাসাবাড়িতে।
লাইট হাউস-এর মধুমিতা প্রকল্পের সেন্টার ম্যানেজার মোফাজ্জল হোসেন রাজু এ ধরনের ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, রাজশাহীতে হিজড়াদের পাশাপাশি একশ্রেণীর স্বাভাবিক পুরুষও সমকামিতায় আসক্ত। তারা লাইট হাউস-এর মধুমিতা সেন্টারে এসে লুব্রিকেন্টও নিয়ে যান। এই লুব্রিকেন্ট বাজারে সহজলভ্য না হওয়ায় মধুমিতা’র দ্বারস্থ হতে হয় তাদের।
রাজশাহীতে পুরুষ যৌনকর্মীদের সংখ্যা বাড়তেই আছে দাবি করে লাইট হাউস-এর এক কর্মকর্তা জানান, এক ধরনের বিশেষ কৌতূহল থেকেও স্বাভাবিক পুরুষও সমকামতায় জড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে এতে অভ্যস্ত হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ও বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী ড. এনামুল হক জানান, ‘হিজড়ারা ছাড়া একজন সংসারী পুরুষ মানুষও সমকামিতায় অভ্যস্ত হয়ে পড়তে পারেন। এর অন্যতম কারণ হলো হরমোনের প্রভাব। এক্স এবং ওয়াই ক্রোমোজমের স্বাভাবিক উপস্থিতি না থাকলে সেক্স অর্গানগুলো পুরোপুরি কাজ করে না। এক্ষেত্রে সমলিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে।’
: আপডেট বাংলাদেশ সময় ২:৫৮ পিএম, ১৩ মে ২০১৬, শুক্রবার
ডিএইচ