আজ রোববার পবিত্র শবেবরাত। ফারসি ‘শব’ শব্দের অর্থ রাত ও ‘বরাত’ অর্থ সৌভাগ্য। এ দুটি শব্দ নিয়ে ‘শবেবরাত’ বা সৌভাগ্যের রাত। আরবিতে একে বলে ‘লাইলাতুল বরাত’। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ১৪ শাবান দিবাগত রাতটিই পবিত্র শবেবরাত হিসেবে উদযাপন করে থাকেন। এ রাতটি বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে অত্যন্ত পবিত্র ও মহিমান্বিত। এ রাতে আল্লাহতায়ালা বান্দাদের জন্য তার অশেষ রহমতের দরজা খুলে দেন। পবিত্র এ রাত উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিব আলাদা বাণী দিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম এ রাত সম্পর্কে বলেন, ইসলামে শাবান মাসের এই রাতকে ‘লাইলাতুল মিসফ মিন শাবান’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর পক্ষ থেকে এই রজনীতে ইবাদত করার ব্যাপারে উৎসাহ দেয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে এদিন বাড়াবাড়ি পর্যায়ের খাওয়া-দাওয়ার চেয়ে ইবাদত-বন্দেগির দিকে বেশি নজর দেয়া প্রয়োজন। এশা ও ফজরের নামাজ অবশ্যই জামাতে পড়ার চেষ্টা করা উচিত। এছাড়া নফল ইবাদত, কোরআন তেলাওয়াত ও তসবিহ পাঠ করা যেতে পারে। পটকাবাজি-আতশবাজি অবশ্যই করা যাবে না। এটি শবেবরাতের কোনো অংশ নয়।
ইসলাম বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সূর্যাস্তের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত আজকের রাত মহিমান্বিত ভাগ্য-রজনী; পাপ মোচনের পরম সৌভাগ্যের রাত। এ রাতেই পরবর্তী বছরের জন্য ভাগ্য নির্ধারিত হয়। নির্ধারিত হয় হায়াত-মউত, রিজিক-দৌলত ও আমল। বিশেষ পুণ্য লাভের উদ্দেশে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের মুসলমানরা তাৎপর্যপূর্ণ এ রাতে ইবাদত-বন্দেগি, জিকির-আজকার, মিলাদ-মাহফিল, নফল নামাজ আদায় ও কোরআন তেলাওয়াতে মশগুল থাকবেন। মহিমান্বিত এ রজনীতে মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশ্বের মুসলমান সম্প্রদায় বিশেষ মোনাজাত ও দোয়া করবেন। মুসলমানদের কাছে মাহে রমজানের বার্তাও বয়ে আনে শবেবরাত। এটি রমজানের প্রস্তুতিও বটে। শাবান মাসের পর আসে পবিত্র মাহে রমজান।
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে উদযাপিত হলেও শবেবরাত বাঙালি মুসলমানদের কাছে একই সঙ্গে ধর্মীয় উৎসবেরও রাত। এই দিনে প্রত্যেক মুসলমানের ঘরে সাধ্য ও সামর্থ্য অনুযায়ী ভালো খাবার, নানা রকম মুখরোচক হালুয়া, রুটি ও পায়েস তৈরি হয়। ঘরে তৈরি এসব খাবার
আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে পাঠানো হয়, বিতরণ করা হয় গরিব-দুঃখীর মাঝে। মহিমান্বিত এ রাতে অনেকেই দান-খয়রাত করে থাকেন। আজ রাতে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের উদ্যোগে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে ওয়াজ মাহফিল, কোরআন তেলাওয়াত, হামদ, না’ত, জিকির, মিলাদ, কিয়াম ও দোয়া, ওয়াজ মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাত।
আতশবাজি নিষিদ্ধ : এদিকে শবেবরাত উপলক্ষে আতশবাজিসহ সব ধরনের ক্ষতিকারক ও বিস্ফোরক দ্রব্য বহন এবং ফোটানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। শনিবার ডিএমপি কমিশনার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শবেবরাতের পবিত্রতা রক্ষার্থে এবং অনুষ্ঠানটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন নিশ্চিত করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ২১ এপ্রিল (আজ) সন্ধ্যা ৬টা থেকে ২২ এপ্রিল ভোর ৬টা পর্যন্ত ক্ষারজাতীয় বা বিস্ফোরক দ্রব্য, আতশবাজি, পটকাবাজি, অন্যান্য ক্ষতিকারক ও দূষণীয় দ্রব্য বহন ও ফোটানো নিষিদ্ধ।
বার্তা কক্ষ
২১ এপ্রিল,২০১৯